চলমান সংবাদ

পিছিয়ে থাকা তিন পার্বত্য জেলার ভালো ফলাফলে চট্টগ্রামে রেকর্ড পাসের হার, জিপিএ-৫ ছাত্রদের তুলনায় এগিয়ে ছাত্রীরা

কোভিড সঙ্কটের মধ্যেও বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ দুটোই বেড়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে রেকর্ড ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। অন্যান্যবার তিন পার্বত্য অঞ্চলের কারণে গড়ে পাসের হারে পিছিয়ে যায় চট্টগ্রাম বোর্ড, তবে এবার তা হয়নি। তিন পার্বত্য জেলার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় এগিয়ে আসায় এবং ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীদের ভালো ফলের কারণে সার্বিকভাবে পাসের হারে এ রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের সার্বিক মূল্যায়ন হচ্ছে, মহামারিকালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তিনটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হওয়ায় এবং জেএসসির বিষয়ভিত্তিক ফলাফলের মাধ্যমে নম্বর ও পাস-ফেল নির্ধারণ করায় এ রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। তবে এবার দেশের অন্যান্য বোর্ডের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম বোর্ড। দেশের নয় সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। বরিশালে পাসের হার সবচেয়ে কম ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ। এই তালিকায় চট্টগ্রাম বোর্ডের অবস্থান ৮ নম্বরে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজার মিলিয়ে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এক লাখ ৫৮ হাজার ৬৩৬ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার ২০৪টি কেন্দ্রে এক হাজার ৭৬টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে পাশ করেছে এক লাখ ৪৪ হাজার ৫৫০ জন। পাসের হার ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। এদের মধ্যে ছাত্র ৭৪ হাজার ৫২১ জন এবং ছাত্রী ৮৪ হাজার ১১৫ জন। এর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৪টি। গতবারের চেয়ে বেড়েছে চারটি। পাসের হার শূন্য এমন কোনো বিদ্যালয় নেই। অকৃতকার্য হওয়া ১৪ হাজার ৮৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১২ হাজার ৯৫৬ জনই এক বিষয়ে ফেল করেছেন। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট ১২ হাজার ৭৯১ জন, যার মধ্যে ছাত্রীরাই আছেন এগিয়ে। ৭ হাজার ৪০৯ জন ছাত্রী এবং ৫ হাজার ৩৮২ জন ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছেন। পাসের দিক থেকে এবার বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীরা। মানবিকে পাসের হার ৯৭ দশমকি ৪৭ শতাংশ, বিজ্ঞানে ৯৬ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৯২ শতাংশ। বিজ্ঞানে ১১ হাজার ২৯১ জন, মানবিকে ১৫৬ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১ হাজার ৩৪৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি ২০১৬ সালের পর সবচেয়ে বেশি। ২০১৬ সালে পাসের হার ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮ হাজার ৫০২ জন, ২০১৭ সালে ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮ হাজার ৩৪৪ জন, ২০১৮ সালে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পায় ৮ হাজার ৯৪ জন, ২০১৯ সালে ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ জিপিএ-৫ পায় ৭ হাজার ৩৯৩ জন এবং ২০২০ সালে পাসের হার ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯ হাজার ৮ জন পরীক্ষার্থী। চট্টগ্রাম মহানগরে পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৭ শতাংশ, যা গতবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। মহানগর ব্যতীত চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৯১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ যা গতবছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৯২ দশমিক ১৯ শতাংশ যা গতবারের তুলনায় ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৯০ দশমিক ৯৪ শতাংশ যা গতবারের তুলনায় ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। রাঙামাটি জেলায় পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ যা গতবছরের তুলনায় ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি। খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৮৪ দশমিক ১৯ শতাংশ যা গতবারের তুলনায় ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি এবং বান্দরবান জেলায় পাসের হার ৯০ দশমিক ৮৫ শতাংশ যা গতবারের তুলনায় ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য অঞ্চলে এবারের ফলাফল সার্বিকভাবে ভালো হওয়ায় জিপিএ-৫ ও পাসের হার বেড়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘সকল সূচকে এই বছর পরীক্ষার্থীরা বিগত বছরের তুলনায় ফল ভালো করেছে। আমাদের দৃষ্টিতে ফলাফল ভালো হওয়ার পিছনে বিষয়টি ভালোভাবে কাজ করেছে তা হলো সরকারের গৃহীত শিক্ষামুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ। চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে যে তিনটি পিছিয়ে পড়া পার্বত্য এলাকা রয়েছে সেখানে এবার পাসের হার বিগত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রামের ফলাফল ভালো হয়েছে।’ চট্টগ্রামে সেরা দশ স্কুল : চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি পরীক্ষায় ১ হাজার ৭৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করে এবং জিপিএ-৫ এর প্রাপ্তিতে সেরার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। গতবার চতুর্থ অবস্থানে থাকা এই স্কুল এবার রয়েছে সেরার তালিকার প্রথমে। এই স্কুলের মোট ৪৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫৯ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ৪৬২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ পাস এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৪৬ জন। ৩য় অবস্থানে থাকা নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৯৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯১ জন পরীক্ষার্থী। ৪র্থ অবস্থানে সরকারি মুসলিম হাই স্কুল, পঞ্চম অবস্থানে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ৬ষ্ঠ নৌ বাহিনী হাই স্কুল এন্ড কলেজ, ৭ম অবস্থানে বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ৮ম চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ৯ম চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ১০ম অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
# ৩০.১২.২০২১ চট্টগ্রাম #