চলমান সংবাদ

রাহ্মণবাড়িয়ায় আহমদীয়া সম্প্রদায়ের দুজনকে মুসলিম কবরস্থানে দাফনে বাধা

কবরস্থান
মুসলিম গোরস্থানে আহমদীয়াদের কবর দেয়ায় বাধা দেয়া হচ্ছে (প্রতীকী ছবি)

বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি গ্রামে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের দু’জনের মৃতদেহ দাফনে বাধার কারণে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা যায়নি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রামটির একদল মানুষ কবর দিতে বাধা দেয়ায় সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সমঝোতার মাধ্যমে অন্য জায়গায় দু’জনের মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে। গ্রামটির আহমদীয়া সম্প্রদায়ের একজন নেতা অভিযোগ করেছেন, দুই বছর ধরে সেখানে তাদের লোকজনের মৃতদেহ দাফনে বাধা দেয়া হচ্ছে। এখন স্থানীয় প্রশাসন সেখানে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করে সমাধানের কথা বলছে। কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন কট্টরপন্থী সংগঠন আহমদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি করে আসছে। ‌এখন মুসলমানদের কবরস্থানে জায়গা না দিয়ে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেয়া যে উদ্যোগের কথা প্রশাসন বলছে, তাতে অমুসলিম ঘোষণার দাবির পক্ষেই প্রশাসন বা সরকার অবস্থান নিচ্ছে কীনা-এই প্রশ্ন অনেকে তুলেছেন। মৃতদেহ দাফনে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটুরা গ্রামে। সেই গ্রামে বসবাসকারী আহমদীয়া সম্প্রদায়ের সাতচল্লিশ বছর বয়সী একজন নারী এবং ৭০ বছরের একজন বৃদ্ধের মৃত্যু হয় গতরাতে। এই সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের দু’জনের মৃতদেহ দাফনের জন্য তারা আজ যখন গ্রামের কবরস্থানে কবর খুঁড়ছিলেন, তখন একদল লোক আহমদীয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে সেখানে বাধা দিলে হাতাহাতি এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশে আহমদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করছে কট্টরপন্থী কিছু ইসলামী গোষ্ঠী
বাংলাদেশে আহমদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করছে কট্টরপন্থী কিছু ইসলামী গোষ্ঠী

ঘাটুরা গ্রামের আহমদীয়া সম্প্রদায়ের একজন নেতা এস এম সেলিম বলেছেন, বাধার মুখে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শেষপর্যন্ত তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের একটি কবরস্থানে দাফন করেছেন। “স্থানীয় মসজিদের মাইকেও ঘোষণা দেয়া হয় যে, কাদিয়ানিরা মুসলমানদের কবরস্থানে কবর দিতেছে, আপনারা আসেন বাধা দেন। তখন লোকজন এসে আমাদের বাধা দিলে বিশৃঙ্খলা হয়” অভিযোগ করেন এস এম সেলিম।

তিনি বলেন, “প্রশাসন এসে হস্তক্ষেপ করে আমাদের জন্য আলাদা কবরস্থান করার আশ্বাস দিয়েছে। তখন আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের একটি কবরস্থানে দু’জনের মৃতদেহ দাফন করেছি।” ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘাটুরা গ্রামে একটিই কবরস্থান এবং সেটি শত বছরের পুরোনো। সেখানকার আহমদীয়া সম্প্রদায়ের এস এম সেলিম অভিযোগ করেছেন, গত বছরের জুলাই মাসে তারা তিনদিনের এক শিশুর মৃতদেহ দাফন করার পর তখন তাদের বিরোধীরা সেই শিশুর মৃতদেহ কবর থেকে তুলে ফেলেছিল। তখন শিশুটির মৃতদেহ তারা অন্য জায়গায় দাফন করেছিলেন। সেটাই ছিল প্রথম বাধা। এরপর মাস তিনেক আগে বাধার কারণে তারা ঐ কবরস্থানে তাদের একজন নারীর মৃতদেহ দাফন করতে পারেননি। এখন সর্বশেষ সেখানে তারা দু’জনের মুতদেহ দাফন করতে পারেননি। অন্য জায়গায় তাদের দাফন করতে হয়েছে। আহমদীয়া সম্প্রদায়ের এস এম সেলিম বলেছেন, তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেখানে বসবাস করছেন এবং ঐ কবরস্থানেই তাদের পূর্বসূরীদের দাফন হয়েছে। কিন্তু গত বছর থেকে তারা বাধার মুখে পড়ছেন।

ঢাকায় আহমদীয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদ
ঢাকায় আহমদীয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনও মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন বলেছেন, গ্রামটিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা কবরস্থান করার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। “সেখানে একটাই কবরস্থান। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ তা ব্যবহার করে” বলছিলেন ইউএনও। তিনি আরও বলেন, “কবরস্থান দাফন নিয়ে এখন সমস্যা হয়েছে। আমরা এর একটা স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছি। দুই সম্প্রদায়ের আলাদা দু’টি কবরস্থান করা যায় কীনা- সেই ব্যবস্থা আমরা করছি।” কিন্তু মুসলমানদের কবরস্থানে জায়গা না দিয়ে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেয়া যে উদ্যোগের কথা প্রশাসন বলছে, তাতে প্রশাসন আহমদীয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবির পক্ষেই এক ধরনের অবস্থান নিচ্ছেন কীনা- এই প্রশ্ন অনেকে তুলেছেন। তবে এমন প্রশ্নে ব্রাহ্মণাবাড়িয়ার প্রশাসন থেকে কোন বক্তব্য পাাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে সতর্ক বক্তব্য দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি ওবায়দুল কাদের মুক্তাদির চৌধুরী। তিনি বলেছেন, “এখন মুসলিমদের মধ্যেতো বিভিন্ন বিভক্তি আছে। মুসলিমদের মধ্যে এই বিভক্তির কারণে এখন আহমদীয়া মুসলিমরা যদি আলাদাভাবে তাদের দাফন করতে বলে, সেটা পুরোপুরি ধর্মীয় ব্যাপার।” “তবে রাজনৈতিকভাবে আমার কাছে সব মানুষ সমান। আমি মনে করি এক জায়গায় কবরে দিলেও কোন অসুবিধা নাই এবং অন্য জায়গায় কবর দিলেও সমস্যা নাই। এটা আমার ব্যক্তিগত মত” বলেন এমপি মি: চৌধুরী। স্থানীয় সুহিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আঙুর হাজারী বলেছেন, গত বছরের মার্চ এপ্রিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি থেকে যে সহিংসতা হয়, সেই থেকে তাদের এলাকায় আহমদীয়া সম্প্রদায়ের বিরোধিতা বেড়েছে। “প্রথমে উস্কানি দেয়া হয়। এরপর গ্রামের সাধারণ মানুষ অংশ নেয়” বলেন মি: হাজারী। গ্রামটিতে এখন মৃতদেহ দাফনে বাধা দেয়ার ক্ষেত্রেও হেফাজতের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ করেছেন সেখানকার আহমদীয়া সম্প্রদায়ের নেতারা। তবে সেখানকার হেফাজতের নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা।