মতামত

আইন মেনেই বলছি – উত্তর পুরুষ

 

মানুষের মন বড়ই বিচিত্র। মানুষের কি দোষ? বৈচিত্র্য সর্বত্র বিরাজমান। প্রকৃতির মধ্যেই না কত বৈচিত্র্য রয়েছে। বৈচিত্র্য নিয়েই সবাই চলতে চায়। আবার সবাই চায় কিনা তা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলবেন । বৈচিত্র্যই যদি সবাই চায় তাহলে পাহাড়- বন কেটে সবাই সমান করে ফেলছে কেন? পাহাড় যেখানে ছিল সেখানে বাড়ি উঠছে, চাষ করছে; বন কেটে গাছ উধাও করছে । দুর্মুখরা বলবেন আপনি বেশি কথা বলেন। আমাদের দেশের এত লোক যাবে কোথায়, খাবে কি? গরীব মানুষ করবে কি? আমি বলি, এগুলোর পেছনে কি গরীব মানুষ আছে না অন্য কেউ আছে? রবি ঠাকুরের একটা কবিতা পড়েছিলাম ছোটবেলায়- এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি / রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি। প্রসংগটা এখানেই থাক। চলেন অন্য কথা বলি।

এটা ডিসেম্বর মাস। বিজয়ের মাস। আমাদের  বিজয়ের পঞ্চাশ বছর। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে একাত্তর এর ষোলই ডিসেম্বর। অনেকেই ইতিমধ্যে হিসাব করতে বসে গেছেন এই পঞ্চাশ বছরে আমরা কি পেলাম আর কি পেলাম না। করেন হিসাব, খাতা কলম নিয়ে। হিসাব বিজ্ঞানের লোকজন তো হিসাব করবেনই। তবে হিসাব না করেই বলা যায় লোক ছিলাম সাত কোটি এখন ষোল কোটি। ভাই এটাতে আবার কৃতিত্ব কি? সবই তো তাঁর ইচ্ছা। হুম তবে আমাদের ইচ্ছায় অনেক কিছুই হয়েছে । রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়েছে। রাজাকার মন্ত্রী হয়েছে। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্ব বেহায়া দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছে। কত কিছুই না ঘটেছে। ভাই আমি শুধু নেগেটিভ কথা বলি। না বলাই ভাল। যা পজিটিভ হয়েছে তা বলি সবাই খুশি হবেন। উড়াল সেতু হয়েছে, উড়াল রেল হচ্ছে, পদ্মা সেতু হয়েছে । প্রাইভেট বিদ্যুৎ হয়েছে। সুন্দরবনের পাশে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হচ্ছে ।পানির নিচে টানেল, গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভাসছে। আরে না, আমি বর্ষায় চট্টগ্রাম শহর ভাসার কথা বলি নাই। আপনারা আবার প্যাঁচ ধরবেন না। সত্যিকার অর্থেই অনেক বড় বড় কাজ হয়েছে, হচ্ছে। বড় কাজ মানে বড় দুর্নীতি আর টাকা পাচার । বড়র পিরিতি বড়র সাথে। আমার কি? আমি উড়াল ট্রেনে চড়ে হাওয়া খাব আর গান শুনব -হাওয়ামে উরতা যায়ে, ও মেরে লাল দোপাট্টা। আহ, কি আনন্দ।

মানুষের বিচিত্র  মনের কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম । কোথা থেকে কোথায় চলে গেলাম । ধান ভানতে শিবের গীত। এই দেখেন পাকিস্তান বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচে কিছু তরুণ পাকিস্তান পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে হাজির। মিডিয়ার লোক জন জানতে চাইলে বলল তারা পাকি দলকে সাপোর্ট করে। তা বাবারা নিজের দলকে না করে পাকিদের  সাপোর্ট করিস ভাল কথা। করতেই পারিস । গণতান্ত্রিক অধিকার । অবশ্য যারা গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে গলা ফাটায় তাদের দেশে কতটুকু এই বস্তু আছে তা নিয়ে সেই সব দেশের লোকজন ও এখন সন্দিহান । এটা আমার কথা না। সেই সব দেশের টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকায় চোখ রাখলেই আপনি ও বুঝতে পারবেন। তো কথাটা আসলো বাংলাদেশি পাকি সমর্থকদের নিয়ে। নিজের দেশের সাথে খেলা। তুই কোন বুদ্ধিতে তাদের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে এলি। দেশের কথা একবারও ভাবলি না? যাকগে কিছু লোক থাকে এইরকম বিচিত্র। একাত্তর সালেও ছিল। তাদেরকে রাজাকার বলে সবাই। তোদের কি নামে ডাকবে বাংলাদেশের মানুষই ঠিক করবে। থাক, কথায় কথা বাড়ে, বুদ্ধিমান গোঁফ নাড়ে। ডিসেম্বর মাস বলেই বললাম। অন্য মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সবকিছুই ভুলে যাই। আর সন্দেশ, না না দেশ খাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ি। 

এরপরও বলি, চলেন, ডিসেম্বর মাসে একসাথে সবাই মিলে শপথ গ্রহণ করি- নিজে দুর্নীতি করব না, অন্যকেও করতে দেব না। সবাই মিলে মিশে থাকব। কারো ক্ষতি করব না। নিজে সহনশীল থাকব-অন্যকে ও সহনশীল থাকতে উদ্বুদ্ধ করব। এই দেশ আমাদের সকলের। দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যাব।