চলমান সংবাদ

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের জন্য হেলে পড়া ভবনগুলো অনুেমাদনহীন- দাবি সিডিএ’র

চট্টগ্রাম নগরীর মাঝিরঘাটের স্ট্যান্ড রোডের পার্বতী ফকিরপাড়া এলাকার গোলজার খালের পাড়ে হেলে পড়া দুটি ভবনের গায়ে সতর্ক বার্তা সম্বলিত একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে। ব্যাণারে লেখা আছে- ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বসবাসের অনুপযোগী, বিপদমুক্ত দূরত্ব বজায় রাখুন’। হেলে পড়া ভবনের একটি তিনতলা অন্যটি দোতলা। তিনতলা ভবনটি অন্তত এক ফুট খালের দিকে হেলে পড়েছে। দোতলা ভবনটিও আংশিক হেলে পড়েছে তিনতলা ভবনের গায়ে। ভবন দু’টিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। তার বাঁ পাশেই শ্রী শ্রী বিষ্ণু ও জগন্নাথ মন্দির। মন্দিরটিরও সামনের নিচের অংশে ফাটল ধরেছে। এরপাশে থাকা একটা কাঁচাঘরের মাটিতেও ধরেছে ফাটল। মূলত জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় থাকা ‘সিল্ট ট্র্যাপ’ (বালুর ফাঁদ) এর কারণেই নগরের মাঝিরঘাট এলাকায় ভবন দু’টি হেলে পড়ে। হেলে পড়া ভবনটি খালের নিরাপত্তা দেয়ালের উপর নির্মাণ করায় এবং ভবনের ফাউন্ডেশন (ভিত) মজবুত না থাকায় ‘সিল্ট ট্র্যাপে’ কাজ করার সময় হালকা কম্পনেই ভবন দু’টি হেলে পড়ে। ইতোমধ্যেই ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ অপসারণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএ’র দাবি- নিয়ম অনুযায়ী, খাল থেকে ১৫ ফুট দূরে ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও ভবন মালিকরা তা মানেননি। তাই ভবন দু’টি নির্মাণের অনুমতি ছিল কিনা তা যাচাই-বাছাই করে পুরো ভবন অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ। ভবন নির্মাণের বিধিভঙ্গের অভিযোগে ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে মামলাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তবে হেলে পড়া ভবনের মালিকরা বলছেন, সিডিএর অনুমতি নিয়েই তারা নিজস্ব জায়গায় ভবন তৈরি করেছে। তাদের অভিযোগ, সকল কাগজপত্র থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নিয়ে মনগড়াভাবে ভবন অবৈধ বলে গণমাধ্যমে প্রচার করছেন। এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খাল খননের কাজে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় ভবন দু’টি হেলে পড়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। হেলে পড়া তিনতলা ভবনের মালিক স্বপন দাশ বলেন, ‘যদি আমাদের ভবনের অনুমোদন না থাকতো তাহলে আমরা এই জায়গায় বাড়ি করলাম কিভাবে? আমাদের কাছে যাবতীয় কাজগপত্র আছে কিন্তু উনারা (সিডিএ) কাগজপত্র না দেখেই মনগড়াভাবে বলছে ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তাহলে এটা কতটা যৌক্তিক হলো? ১ বছর আগেও খালের পাইলিং করার জন্য তারা দেয়ালের পাশে ৫০ ফিট গভীর করেছিল। যার কারণে এবারের খাল খননের সময় আমাদের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।’ ‘আমরা এখন যাবো কোথায়? আমাদের ভবন ভেঙে ফেলবে বলছে তারা। ঝুঁকিপূর্ণ তাই অবশ্যই ভাঙবে কিন্তু আমাদের থাকার জায়গাটা কোথায়? ক্ষতিপূরণ না দিলে এমন আরেকটা বিল্ডিং চাইলেই কি বানাতে পারবো?’। শান্তুনু দাশ বলেন, ‘এখনও তারা খাল খনন চলমান রেখেছে। তাদেরকে বারবার বলার পরেও তারা আমাদের কোনো কথা শুনছে না। আমরা কাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। যদি বিল্ডিংগুলো ভেঙে ফেলতে চায় তাহলে আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘আমরা হেলে পড়া ভবন মালিকদের আগেই সতর্ক করেছিলাম। মূলত তারা চসিকের নিরাপত্তা দেয়ালের উপর ভবন নির্মাণ করেন। আবার কোনো ধরনের ফাউন্ডেশন ছাড়াই তারা এটা নির্মাণ করেন। আমরা যখন সিল্ট ট্র্যাপের কাজ করছি তখন ভবনগুলো হেলে পড়ে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের প্রকল্পের কাজ করছি। এখন ভবন অপসারণ করার দায়িত্ব সিডিএ বা চসিকের। আবার ভবন দুটি সিডিএর অনুমোদিত নয়। এমনকি ভবনটি পুরোপুরি ডিজাইন মেনেও করা হয়নি। যার কারণে খালের কাজ করার সময় সামান্য কম্পনেই ভবনটি হেলে পড়েছে।’ সিডিএ’র নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল খান বলেন, ‘ভবন মালিকরা অনুমোদনের কোনো কাগজপত্র আমাদের দেখাতে পারেনি। যদি তারা কাগজপত্র দেখাতে পারে তাহলে নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ যা দেয়া যায় তাই দেয়া হবে। অতীতেও আমরা অনুমোদিত কোনো ভবন অপসারণের প্রয়োজন হলে ক্ষতিপূরণ দিয়েছি। তাছাড়া ভবন মালিকরা নিয়ম অনুযায়ী কিন্তু ভবন দু’টি নির্মাণ করেননি।’ সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, ‘এই ভবন দু’টি নিয়ে তিনটি প্রশ্নের উত্তর লাগবে। এক. তারা সিডিএ থেকে অনুমোদন নিয়েছে কিনা? আমার জানা মতে তারা কোন অনুমতি নেয়নি। দুই. অনুমতি নিলেও তারা তা মানেনি। খাল থেকে ১৫ ফুট দূরে ভবনের নিয়ম থাকলেও সেটা একেবারেই মানা হয়নি। তিন. ভবনের কোন ফাউন্ডেশনও ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের টিম এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে। সবকিছু দেখার পর ভবন মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। আর যদি অনুমোদনের কোন কাগজ পাওয়া না যায় তাহলে ভবন দু’টি পুরোপুরি অপসারণে চসিককে চিঠি দিব।’ উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে দশটার পর নগরের সদরঘাট থানার স্ট্যান্ড রোডের আনুমাঝির ঘাট এলাকায় তিনতলা ভবনটি হেলে পড়লে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়। এখন ভবনটি সিলগালা করে দিয়েছে সিডিএ।
# ২২.১২.২০২১ চট্টগ্রাম #