মতামত

রম্য রচনা:

আইন মেনেই বলছি

উত্তর পুরুষ

ইংরেজীতে হট কথাটা বহুল প্রচলিত। হট বলতে বুঝি গরম। গরম শব্দটি ও বিশেষন আকারে প্রচুর ব্যবহৃত হয়। আর মজাদার  রান্নার জন্য গরম মশলা তো অপরিহার্য। আর গরম মশলা ছাড়া কি কোন মাংস রান্নার  কথা ভাবতে পারি- বলেন ? তবে হট বলি আর গরম বলি কখনো কখনো বিশেষণ আকারে ব্যবহার করলে ভদ্র সমাজ  একটু বাঁকা চোখে তাকাবেই। শব্দেগুলা কি তা বোধহয় এখানে না বলাই ভাল। এতক্ষনে অনেকের কান লাল হয়ে গেছে, আর আমাকে গালাগাল দেয়া শুরু করেছে। তবে গরম ভাতের সাথে গরমা-গরম মসুর ডাল ও আলু ভর্তার কথা বললেই বাঙ্গালীর জিভে জল আসবে না তা হরফ করে বলা যায় না। 

আবার দু’জনের মধ্যে হট টক হয়েছে বললে যারা ভেতরের ব্যাপার জানেন না তারা একটু অবাক হন। জানতে চেষ্টা করেন কি ব্যপার ? কেন হট টক হল ? কিউরিসিটি বা জানার আগ্রহ আমদের অনেক বেশি। কথায় বলে লোকটা পাড়ার  হাড়ির খবর জানে। একসময় বিষয় টা শুধুমাত্র বাড়ির মহিলাদের (মহিলারা দয়া করে খেপে যাবেন না ) এক্তিয়ারে ছিল। তারাই সবার হাড়ির খবর বের করত । তবে কালে কালে পুরুষরা ও বুদ্ধিমান হয়েছে এবং হাড়ির খবর বের করে ফেলার কৌশল শিখে ফেলেছে। এটা আমরা টেলিভিশন চ্যানেল হাত দিলেই বেশ ভাল বুঝতে পারি। আর সোশ্যাল মিডিয়া তো পুরাই চ্যাম্পিয়ন। আজকাল কেউ আর ছাপানো খবরের কাগজে হাত দেন না । দরকার কি ? চ্যানেল আর ফেসবুক তো আছেই। একসময় সিনেমা পত্রিকাগুলোতে “ গসিপ” বা “গুজব” নামে একটা কলাম থাকতো, এখন আছে কিনা তা আমি নিজেই জানি না। 

আচ্ছা বাদ দিন হাড়ির খবর নেয়ার। এতো সময় কি আর আছে নাকি আমাদের। আমরা সবাই ব্যস্ত। কেউ ব্যস্ত অর্থ উপার্জনের জন্য সকাল থেকে রাত অবধি কাজ নিয়ে, কেউ কেউ আবার সহজে কিভাবে সম্পদের মালিক হওয়া যায়, তার গবেষনা নিয়ে। গবেষনা খুব ভাল জিনিষ, তবে সেটা যদি ভাল কাজের জন্য হয়। কিন্তু সেটা যদি শর্ট -কাট পথে টাকা কামানোর জন্যে হয়, তাহলে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। তবে ডাল কালা বা সাদা যাই হোক না কেন কিছু কিছু লোক যে এই গবেষনায় সফল হয়েছেন তা ঢাকার বনানী-গুলশান-বসুন্ধরা কিংবা কানাডার বেগম পাড়ার দিকে একটু দেখলেই সহজে বুঝে ফেলতে পারবেন। আমি মনে হয় বেশি দূরে নিয়ে যাচ্ছি আপনাদের। আপনার এলাকার দিকে একটু চোখ খুলে দেখলেই বুঝতে পারবেন কারা এই শর্ট – কাট পথ আবিষ্কার করেছেন আর কারা করতে পারেন নাই। এই আবিস্কারের জন্য যদি নোবেল পুরস্কার দেয়া হত তা হলে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই যে  পুরস্কৃত হত সে বিষয়ে কি কোন সন্দেহ আছে ? । আহারে !  দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া। সবাই একটু দেখেন দুই পা ফেলিয়া । এই বিষয়ে মনে হয় বেশি না বলা ভাল । যদি না আবার কেউ মনে করেন আমি আইনের বাইরে কথা বলছি। আর এটা মনে করলেই আমার কি অবস্থা হবে বুঝতেই পারছেন। থাক, না বুঝাই ভাল। 

দেশের এখন হট টক কি সেটা মনে হয় সবাই জানেন। অন্য খবর না জানলেও এই খবর সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। কেন জানেন তো ? এর কারণ হচ্ছে রাজনীতিতে আমাদের  সাঙ্ঘাতিক আগ্রহ। রাজনীতি বিষয়ে যদি একটা গণ পরীক্ষা নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রী দেয়া হত, তাহলে অসংখ্য লোক ডক্টরেট ডিগ্রী পেতেন। আমার সাথে আপনারা একমত না হলে ছোট একটা জরিপ করে দেখেন। দেখবেন রেজাল্ট আমার পক্ষে ।আরে বাবা এতো কথা বলতে গিয়ে হট বা গরম খবরের কথাটাই বলা হয় নি। আমাদের দেশের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস রোগ ধরা পড়েছে এবং উনার চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা তাকে বিদেশ পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তার দলের পক্ষ থেকে এই দাবীতে রাজপথ গরম করে মিছিল- সমাবেশ হচ্ছে। বিএনপি নেতারা বলছেন যদি সরকার তাকে দেশের বাইরে না পাঠান তা হলে কঠিন গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। পক্ষান্তরে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিএনপি  খালেদা  জিয়ার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করছে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যদি দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরী হয় তাহলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

কথা হচ্ছে একটা মানুষের দ্রুত চিকিৎসা করা জরুরী নাকি চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে হট টক করে রাজনীতির মাঠকে হট করা জরুরী। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল হকিকত বুঝতে পারলেন তো? নেতা নেত্রীরা কেউ দেশে  চিকিৎসা করাতে চান না। বিদেশে যেতে চান। তা যান যেখানে খুশি। উনাদের ব্যপার-স্যাপার আলাদা। ফেল কড়ি মাখ তেল। কিন্তু যাদের কড়ি নাই তাদের কি হবে? একবারেই উপরে যাওয়ার ব্যবস্থা? 

যাকগে, এই বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কি? 

একটু দাঁড়ান ভাই । শেষ হইয়াও হইল না শেষ । আর একটি গরম খবর বা হট খবর না দিয়ে শেষ করা যাচ্ছে না। এক প্রতি-মন্ত্রীর মাথা হঠাৎ করে হট হয়ে গেছে। মহিলাদের সম্পর্কে অশ্লীল কথা বলা শুরু করেছেন। কি আজব ।

শীত আসলে কি এমন হয় ? তবে কথা হচ্ছে দেশের মানুষ তার কথা পছন্দ করে নাই। নেতা  মন্ত্রীত্ব  হারাইছে। দলের প্রথমিক সদস্য পদও হারাবেন । পদ হারাইছেন তাতে কি ? শাস্তি তো নাই। এই রকম লোক খুঁজলে অনেকগুলা পাওয়া যাবে বলেই মনে হয়। ঐ যে শর্ট-কাট পথে টাকার মালিক হয়ে গেছেন। এর গরম আছে না। থাকতেই হবে। মানুষকে মানুষ মনে করে না। আর নারীদের তো গুনেই না। না গুনতে পারেন। মাঝে মাঝে তো ধরা খেতেই হয়। রাখে আল্লাহ মারে কে আর মারে আল্লাহ রাখে কে। তবে কথাটা হচ্ছে এই ফাঁকে খালেদা জিয়ার খবর আর হট নাই। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা পানসে হয়ে গেছে। মানে শীতের রাতে বিরিয়ানী বাইরে রেখে দিলে যা হয় আর কি? আবার হট করতে সময় লাগবে। আপাতত তো আর হট নাই। চলছে বেশ।

থাক বাদ দেন, এত কথা বলা ঠিক হচ্ছে না-  যা দিনকাল। শীতের দিন । আয়েশ করে একটু গুড় মুড়ি খেয়ে লেপের নিচে একটু হট পাওয়া যায় কিনা দেখি।