চলমান সংবাদ

ওমিক্রন: করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে স্বাস্থ্য বিভাগের ১৫ দফা নির্দেশনা

ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রীদের করেনাভাইরাস পরীক্ষা
ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রীদের করেনাভাইরাস পরীক্ষা

ওমিক্রন নামে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনিবার যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ হচ্ছে, তবে সবশেষ নির্দেশনায় কোন দেশের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করার মত কিছু বলা হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র- সিডিসির পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর মো. নাজমুল ইসলামের রবিবার স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে এসব নির্দেশনার উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে নতুন ধরণের করোনাভাইরাস সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন (বি.১.১৫২৯) এর সংক্রমণ দেখা দেয়ায় ‘অধিকতর সতর্কতা’ অবলম্বন করতে হবে। চিঠিতে নির্দেশনাগুলোকে “কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ” করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে সব দেশকে সতর্ক করেছে। যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ এরিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি এবং লেসোথো এর সাথে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করেছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চাইতেও অধিক সংক্রামক অর্থাৎ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় রবিবার, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে ভ্রমণ সতর্কতা জারির পাশাপাশি সব ধরনের সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করার সুপারিশ করে। পাশাপাশি মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করা এবং আবারও বিনামূল্যে কোভিড পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার কথাও কমিটির সুপারিশে বলা হয়।

রেস্তোরাঁ
রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার ক্ষেত্রে ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম আসনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

১৫ দফা নির্দেশনা:

১. দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথোসহ যেসব দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে।

২. সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।

৩. প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে গেলে প্রত্যেককে বাড়ির বাইরে সব সময় সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার ক্ষেত্রে ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম আসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. সকল প্রকার জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে।

৬. মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।

৮. যেসব দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

৯. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ মাদ্রাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।

১০. সকল স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

১১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

১২. কোভিড উপসর্গ/লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও কোভিড পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

১৩. কোভিড-১৯ এর লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা করা যেতে পারে।

১৪. অফিসে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সময়ে বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

১৫. কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাস করতে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা তৈরির জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে মাইকিং ও প্রচার চালানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ/মন্দির/গির্জা/প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর/ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা