চলমান সংবাদ

ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী হারুনর রশীদ স্মারক বক্তৃতায় “করোনা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, বাড়িয়েছে দারিদ্রতা”

 ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক চৌধুরী হারুনর রশীদ স্মারক বক্তৃতা শনিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য চৌধুরী হারুনর রশীদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। ‘করোনাকালে শ্রম, অর্থনীতি ও পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক এই স্মারক বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। বক্তৃতায় তিনি বলেন, বৈশ্বিক অতিমারি করোনা আন্তর্জাতিক ও দেশিয় অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, বাড়িয়েছে দারিদ্রতা। মানুষের আয় কমেছে, খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রপ্তানি আয় হ্রাস পেয়েছে। বিভিন্ন বহুজাতিক বিনিয়োগ ও প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। প্রবাসী আয় হ্রাস পেয়েছে। বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কর্ম হারিয়েছে অসংখ্য মানুষ। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিখাত। করোনা মহামারীর মারাত্মক প্রভাবের কারণে মানুষের জীবন ও জীবিকাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বেড়েছে নারীর প্রতিসহিংসতাও। ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি তপন দত্তের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন প্রবীন শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ চৌধুরী, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড চট্টগ্রাম জেলার সহকারী কামান্ডার একেএম আলাউদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রনজিৎ দে, নারী নেত্রী নূর জাহান খান, জেষ্ঠ্য সাংবাদিক জসীম চৌধুরী সবুজ, টিইউসি নেতা মীর মোহাম্মদ ইলিয়াস। এতে সঞ্চালনা করেন ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান। দেশের স্বাধীকার আন্দোলনসহ সকল গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল-অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনে চৌধুরী হারুনর রশীদের ভূমিকা ও অবদানের কথা স্মরণ করে বক্তারা বলেন, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে চৌধুরী হারুনর রশীদ চট্টগ্রামে সর্বাধিক সময় কারাবন্দী ছিলেন। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম ভাষা সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। স্বাধীনতা যুদ্ধের আন্দেলনের তিনি ছিলেন অকুতোভয় প্রথম কাতারের সৈনিক। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী চৌধুরী হারুনর রশীদ শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন। প্রকাশ্য বাম রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ’রও নেতা ছিলেন। ৬৯’র গণ অভ্যুত্থানে চৌধুরী হারুন আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ, ছাত্র ইউনিয়ন, শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক চৌধুরী হারুন ত্রিপুরার আগরতলায় ন্যাপ-সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেবিলা যোদ্ধাদের যুগ্ম কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি ‘বাংলাদেশ রেল শ্রমিক ইউনিয়নের’ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। দেশের প্রগতিশীল শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি চৌধুরী হারুনর রশীদ। দেশের মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় চৌধুরী হারুনের আদর্শ পাথেয় করে।

# ১৩.১১.২০২১, চট্টগ্রাম #