চলমান সংবাদ

সাম্প্রদায়িক হামলা-সহিংসতা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে ‘ধিক্কার মিছিল’, পদত্যাগ দাবি

দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক হামলা-সহিংসতা, হত্যা, মন্দিরে ভাঙচুর-লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগের ঘটনা সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার ও ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করে অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ। সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব-কান্ডজ্ঞানহীন বক্তব্যের প্রতিবাদে ১২ নভেম্বর বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত ‘ধিক্কার মিছিল’ পূর্ব সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়। কুমিল্লায় পূজামন্ডপে কোরআন রাখা যুবককে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘মাদকাসক্ত’ উল্লেখ করে কার্যত সামগ্রিক ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার নির্লজ্জ অপপ্রয়াস বলে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিথ্যাচার ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করেছে। সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলাকালে প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সামগ্রিক ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে যেভাবে বক্তব্য রেখেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তার সম্পূর্ণ বিপরীত। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের উৎসাহিত করেবে। উনার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) কল্পনাপ্রসূত ও বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা বক্তব্য পৃথিবী জুড়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী সরকারে থাকার যোগ্যতা তিনি নির্লজ্জভাবে হারিয়েছেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ-চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এড. নিতাই প্রসাদ ঘোষের সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন- শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুকুমার চৌধুরী, ইসকনের মুকুন্দ ভক্তি দাশ, ঐক্য পরিষদ নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত, দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়, সুমন কান্তি দে, সাগর মিত্র, ডাঃ তপন দাশ, সাংবাদিক প্রীতম দাশ, সিঞ্চন ভৌমিক, চন্দন দত্ত, রাণা মহাজন, বাবলু কুমার দেব, যীশু নাথ, প্রণব রাজ বড়–য়া, ডাঃ দেবাশীষ মজুমদার, মিনু রানী দেবী, রিপন সিং প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে “ধিক্কার মিছিল” নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে সমাপ্ত হয়। সমাবেশ থেকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স ঘোষণার বাস্তবায়ন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত সুষ্ঠু বিচার এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রনয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রনয়ণ, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্যে পৃথক ভূমি কমিশন গঠন ছাড়াও জাতীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রনালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ ও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহের জাতীয় ঐক্যমোর্চার উদ্যোগে এই ‘ধিক্কার মিছিল’ আয়োজন করা হয়। এড. রাণা দাশগুপ্ত বলেন- গত ১৩ অক্টোবর, ২০২১ শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর দিন থেকে গত ১ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৭টি জেলায় সংঘঠিত সাম্প্রদায়িক হামলায় ১১৭টি মন্দির ও পূজোমন্ডপ, ৩০১টি বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পুলিশের গুলিতে মোট ৪জন ছাড়া আরও ৫ জন হিন্দু হত্যার শিকার হয়েছে। নিহত ৫ জনের মধ্যে ১৩ অক্টোবর সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণের মুখে কুমিল্লার রাজ রাজেশ^রী মন্দিরের গেট বন্ধ করতে যেয়ে সন্ত্রাসীর আঘাতে গুরুতর জখম দিলীপ দাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২১ অক্টোবর, ২০২১ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ১৫ অক্টোবর চৌমুহনীতে ইসকন মন্দিরের ভক্ত যতন সাহা (৩৫) মন্দির রক্ষা করতে যেয়ে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। একই দিনে ইসকন মন্দিরের সন্ন্যাসী প্রান্ত দাশ (৩০)-কে কুপিয়ে পুকুরে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। পরের দিন সকালে প্রান্ত দাসের মৃতদেহ ভেসে উঠলে তার মাতা মৃতদেহ সনাক্ত করেন। উপস্থিত জনগণ ও প্রান্ত দাসের মাতার বক্তব্য অনুযায়ী, মৃতদেহের মাথায় ও শরীরে ধারালো অস্ত্রের কোপের দাগ ছিল। বক্তারা বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন মন্ডপে হামলা-ভাঙচুর, কোথাও কোথাও বাড়ি-ঘরে হামলা করে এমন এক ভীতিকর ন্যাক্কারজনক পরিবেশ তৈরি করা হয়। দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীন দুর্গাপূজা নির্বিঘেœ সম্পন্ন করতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে এটা কখনোই কাম্য ছিল না। যেখানে বিশ্বের সমস্ত অসাম্প্রদায়িক ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জাতি-গোষ্ঠীর লোক এই ঘটনার নিন্দা করেছে, সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা স্বীকারই করলেন না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি সহিংসতা সৃষ্টিকারী ও অপরাধীদের উৎসাহিত করবে। সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে এরকম বক্তব্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ও এর পেছনের হোতাদের চিহ্নিত, গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

# ১২/১১/২০২১, চট্টগ্রাম #