চলমান সংবাদ

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব বাজারে

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারে। সাপ্তাহিক বাজার করতে এসে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পণ্যবাহী পরিবহনে ভাড়াও বেড়েছে। ক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খেসারত দিতে দিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। দৈনন্দিন বাজার খরচের সাথে, আয়ের সামঞ্জস্য পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা চাল-ডাল, পেঁয়াজ-রসুনসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাব যেমন পড়ছে খুচরা বাজারে, তেমনি ডিজেল চালিত ট্রাক-মিনিট্রাকে করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে সবজিসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আনতে গিয়ে বেড়ে যাচ্ছে দাম। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, অসাধু ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এক এক সময় এক এক পণ্যের দাম বাড়ায়। কিন্তু এখন তেলের দাম বাড়ানোর অযুহাতে পরিবহন ভাড়াও বেড়েছে এর প্রভাব পড়েছে ভোগ্যপণ্যের দামেও। তিনি বলেন, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তবু যাত্রীদেরকে জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ভোগ্যপণ্যের বাজার সহনশীল পর্যায়ে আনতে সরকার ও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। খাতুনগঞ্জে খবর নিয়ে জানা যায়, কদিন আগেও পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। এখন পরিবহন ব্যয় বাড়ার অজুহাতে পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় আর খুচরা বাজারে ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চীন থেকে আমদানিকৃত রসুন প্রতি কেজিতে কয়েক দিন ছিলো ৯৫ টাকা, এখন প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে আর খুচরায় রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। অপরদিকে, দেশি মিনিকেট প্রতি বস্তা আগে ২ হাজার ৩৫০ টাকা থাকলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০ টাকায়। সিদ্ধ মিনিকেট প্রতি বস্তা আগে ছিলো ২ হাজার ২৫০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ টাকায়। নাজিরশাইল প্রতি বস্তা ২ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০ টাকায়। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতা মো. ইদ্রিস বলেন, ভারত থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বেনাপোল বন্দর থেকে আনতে প্রতি ট্রাক ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিলেও এখন তা চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে বেশি নিচ্ছে। তাই পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির সাথে সাথে ভোগ্যপণ্যের দামও বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। তেমনি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্য আনতে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এতে পণ্যের দামেও প্রভাব পড়ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১২ নভেম্বর) নগরের রিয়াজউদ্দীন বাজার ও কর্ণফুলী কাঁচাবাজারে প্রায় সকল সবজিতে কেজি প্রতি ১০ টাকা পর্যৗল্প বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া ঢেঁড়শ, বেগুন, করলা ও লাউ আজকের বাজারে ৭০ টাকা, ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া পটল ৬০ টাকা, ১শ টাকায় বিক্রি হওয়া শিম ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া বরবটি ৮০, ফুলকলি কেজি প্রতি ৮০, বাঁধাকপি ৭০, চাল কুমড়া ও মিষ্টি কুমড়া ৪০, চিচিঙ্গা ৬০, কাকরোল ৭০, মুলা ৫০ ও পেঁপে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া লালশাক, পালংশাক, মুলাশাক, সরিষা শাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং পুইশাক ২০ ও লাউশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে আঁটি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে শুকনা মরিচ ১৬০, দেশি আদা ৮০, চায়না আদা ১৬০, হলুদ ১৬০, মসুর ডাল ১১০ ও প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিকেজি চিনি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা, সোনালী ৩শ’ টাকা আর লেয়ার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা মমিনুল ইসলাম বলেন, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। এমনিতেই বাজারে নতুন শীতকালীন সবজির দাম বেশি। তার উপর তেলের দাম বাড়ায় তারা সবজির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। গণপরিবহনে ভাড়া বেড়ে গেছে। পণ্যের দামও বেড়ে গেছে। সবজি বিক্রেতা সুজা মিয়া বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সবজি আনতে গিয়ে বাড়তি গাড়ি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সবজির দামও বেড়ে গেছে। পাশাপাশি বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ এখনো কম। সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম আরো কমবে।
# ১২.১১.২০২১ চট্টগ্রাম #