চলমান সংবাদ

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে

-সাম্প্রদায়িকতা রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান

সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, পূজামন্ডপ ও প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন। সমাবেশে সমস্বরে উচ্চারিত হয়েছে- সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ, সাম্প্রদায়িকতাকে রুখিয়া দাঁড়াও। সোমবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর চেরাগী পাহাড় চত্বওে আয়োজিত সমাবেশে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু বাঙালির প্রথম সংবিধান দিয়েছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এই সংবিধান হিন্দুর বা মুসলমানের নয়। দেশে প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ ধর্মকে ব্যবহার করতে পারবে না। তিনি দাবি তুলে বলেন, ১৯৮৮ সালে স্বৈরাচার এরশাদ যে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিল, তা বাদ দিতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানকে একটি সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক সংবিধান হতে হবে। যদি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকে তবে অন্যরা দ্বিতীয় শ্রেণির। যদি বলেন সবাই নাগরিক তবে তো রাষ্ট্রধর্ম থাকতে পারে না। কোনো উন্নত রাষ্ট্রে তা নেই। রাষ্ট্রধর্ম প্রত্যাহার করুন। একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ বলেন, আওয়ামী লীগ এত বড় সংগঠন। কতগুলো অঙ্গ সংগঠন। তারা কেন রাস্তায় নেই। প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, প্রতিদিন হামলা হচ্ছে। কালও রংপুরে হামলা চালানো হয়েছে। প্রশাসন কী করছে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন তদন্ত চলছে। এতদিন কেন তদন্ত চলবে। অবিলম্বে তদন্তের খবর দিন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেখান কাদের ধরা হয়েছে। আইনের আওতায় আনুন। শাস্তির ব্যবস্থা নিন। তিনি বলেন, অনেক উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু মনোজগতের পরিবর্তন ঘটেনি। রাষ্ট্রের সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়নি। ধর্মের নামে উপমহাদেশের সমাজের মনে অন্ধকার বিরাজ করছে। সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে মনোজগতের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সবাই বলুন- সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ, সাম্প্রদায়িকতাকে রুখিয়া দাঁড়াও। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আজকের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে দল সরকার গঠন করে আজকে সেই আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা দলটি বঙ্গবন্ধুর দল নয়। আজকের সংবিধানে বাংলাদেশ আছে, পাকিস্তানও আছে। মুজিব কোট গায়ে দিয়ে পাকিস্তানি প্রেতাত্মার সাথে মেলবন্ধন করে এ হামলাগুলো করা হয়েছে। গোটা বাংলাদেশের বিভীষিকা নতুন করে বলার নেই। গোটা সমাজে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ-বিজিবি’র উপর নির্ভর করে হামলা থেকে রক্ষা মিলবে না। সকল রাজনৈতিক দল, দেশপ্রেমিক জনগণ, ধর্মপ্রাণ আলেম-ওলামা, পুরোহিত, যাজক সংঘবদ্ধভাবে যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে দাঁড়াতে হবে। শুধু কথায় কথা হলে ভবিষ্যতের বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। ৭৫’র পর বাংলাদেশকে পাকিস্তান হতে দেখেছি। বাংলাদেশ যেন আবার আফগানিস্তান না হয়। সব ধর্মের মানুষের সহঅবস্থান যদি দেশে নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে উপমহাদেশে বিপর্যয় অনিবার্য। কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, সমাজে যে দূষণ তা দূর করা একদিনে হবে না। মাদ্রাসার সিলেবাস বদলাতর হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা উদার মানবিক বহুত্ববাদি করতে হবে। সমাজের পচন ঠেকাতে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে শেষবারের মত বড় রকমের ধাক্কা দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার লক্ষ্য। এত বছর পরেও সাম্প্রদায়িক নির্যাতন হচ্ছে। সরকারের উপর আশা করে বসে থেকে লাভ নেই। তিনি এলাকায় এলাকায় সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার আহবান জানান। অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে পুরনো শকুন জাতীয় পতাকা খামছে ধরেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রচিত সংবিধানের ৪ মূলনীতি নেই। শহীদের রক্ত আমাদের ধিক্কার দিচ্ছে। কারণ তাদের রক্তের সম্মান রক্ষা করতে পারিনি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যাদের সংসদে পাঠিয়েছি তারা কী করেছেন? রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কী করে অবহেলা করে? কেন একের পর এক হামলা হচ্ছে। প্রশাসনে কোনো দুর্বলতা থাকলে অবশ্যই বিচার হতে হবে। তিনি কারো জন্য বসে না থেকে মাঠে নেমে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান। ‘সাম্প্রদায়িকতা নিপাত যাক- মানবতা মুক্তি পাক’ এই স্লোগানে অনুষ্ঠিত সমাবেশের আয়োজিন করে সর্বস্তরের সাংস্কৃতিক কর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্র’র সভাপতি শৈবাল চৌধুরী, সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, নারী নেত্রী নূরজাহান খান, জেসমিন সুলতানা পারু, নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, সঙ্গীত শিল্পী কল্পনা লালা প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিকার রাশেদ হাসান।
# ১৮.১০.২০২১ চট্টগ্রাম #