চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে বিস্ফোরণে দেয়াল ধসে একজনের মৃত্যু, দগ্ধ ২

নগরীর একটি বাসায় বিস্ফোরণে দেওয়াল ধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণে দু’জন দগ্ধসহ মোট তিনজন আহত হয়েছেন। কী কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটা খতিয়ে দেখেছে পুলিশের বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই ও গ্যাস কর্তৃপক্ষ। রোববার (১৭ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার বালুচড়া বাজার এলাকায় কাশেম কলোনিতে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মোহাম্মদ ফারুক (৪২) কাশেম কলোনির ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ বদিউল আলমের ছেলে। তাদের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার কার্বারি পাড়া এলাকায়। দগ্ধ দু’জন হলেন- মো. ফোরকান (৫৫) ও আবুল কালাম (৩০)। তারা দু’জনই পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। এছাড়া দেলোয়ার হোসেন (২১) নামে ওই কলোনির এক ভাড়াটিয়া দেওয়াল ধসে আহত হয়েছেন। বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিস্ফোরণের পর পুলিশের বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই ও গ্যাস কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে গিয়ে সবকিছু খতিয়ে দেখেছে। তারা জানিয়েছে, গ্যাসের চুলার নব কোন কারণে খোলা ছিল। গ্যাস বের হয়ে পুরো ঘরটি গ্যাস চেম্বারে পরিনত হয়। এখানে কোনো ভেন্টিলেশন নেই। কোন কারণে স্পার্ক হওয়ায় গ্যাস চেম্বার বিস্ফোরিত হয়। কাশেম কলোনির নিচতলায় এক কক্ষবিশিষ্ট একটি বাসায় ফোরকান ও কালাম ব্যাচেলর হিসেবে ভাড়ায় থাকেন। সেই কক্ষে বিস্ফোরণ হয়েছে। দু’জন দগ্ধ হয়েছেন। ঘটনার সময় ওই কক্ষের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন ফারুক। দেওয়াল ধসে পড়ে তিনি মারা গেছেন। আরও একজন সামান্য আহত হয়েছেন।’ প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচতলা ভবনটি অনেক পুরানো। দোতলায় একটি মসজিদ, তৃতীয় তলায় মাদ্রাসা এবং নিচতলায় ১৪টি এক কক্ষবিশিষ্ট বাসা। নিচতলার বাসাগুলো ব্যাচেলরদের ভাড়া দেয়া হয়। খুবই ঘিঞ্জি। এক কক্ষের একটি বাসার মধ্যেই টয়লেট, রান্নাঘর,বেডরুম সবকিছু। যে কক্ষে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটিতে এবং পাশের সব কক্ষেই একটি করে গ্যাসের চুলা আছে, যেটি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে যুক্ত। প্রবল গতিতে বিস্ফোরণে দেয়াল ধসে পড়ে। এসময় করিডর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ফারুক নামে একজন গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বিস্ফোরণের তাৎক্ষনিকতায় আগুনের দগ্ধ হন দুইজন। বিস্ফোরণে পাশাপাশি দু’টি কক্ষ প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। জানালা-দরজা ভেঙে পড়ে গেছে। দু’টি দেওয়ালের মধ্যে একটি প্রায় পুর অংশ এবং আরেকটির মাঝামাঝি প্রায় অর্ধেক অংশ বিধ্বস্ত হয়। কক্ষের ভেতরে আসবাবপত্র তছনছ হয়ে যায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসেস) রওনক উল ইসলাম বলেন, ‘ভবনে আমাদের সরবরাহ লাইন আছে দেখেছি। যে কক্ষে বিস্ফোরণ হয়েছে সেখানে গ্যাসের চুলা আছে, পাইপ লাইনও আছে। মালিক জানিয়েছেন, এই ভবনে ৩৩টি চুলা আছে। গ্যাস লাইনে কোনো ত্রুটি আছে কি না আমরা দেখছি। কিন্তু গ্যাস নিঃসরণের একটা গন্ধ থাকে। সেটা আমরা পাচ্ছি না। ভবনে কক্ষগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, এখানে কোনো ভেন্টিলেশন নেই। গ্যাসের চুলা চালু থাকলে এমনিতেই গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে।’ ঘটনাস্থলে যাওয়া নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে গিয়েছিল। কি কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটা আমাদের বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট, ফায়ার সার্ভিস খতিয়ে দেখছে। তবে আমরা খালি চোখে এখানে কোনো দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরক দেখিনি। আমাদের মনে হচ্ছে, রুমের ভেতরে গ্যাস জমে গিয়ে প্রেশারে বিস্ফোরণ হয়েছে।’ নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার কবির হোসেন জানান, বিস্ফোরণের পর কাশেম কলোনির কক্ষটিতে আগুন লেগে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছার আগেই স্থানীয়রা তিনজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পাইপলাইনের গ্যাস থেকে এ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নুরুল আলম আশেক জানান, আহত ফারুককে হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ফোরকান ও কালামকে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আলী জামান বলেন, হাসপাতালে ভর্তি ২ জনের মধ্যে একজনের ৬০ শতাংশ ও অন্যজনের ৪৫ শতাংশ বার্ন রয়েছে। দুইজনেরই শ্বাসনালি পোড়া। এদের অবস্থা আশংকাজনক।

# ১৭.১০.২০২১ চট্টগ্রাম #