চলমান সংবাদ

পূজামন্ডপে হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে হরতাল পালন, মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ৮৪

চট্টগ্রামে পূজামন্ডপে হামলার প্রতিবাদে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ডাকা নগরীতে আধাবেলা হরতাল পালন করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। হামলার প্রতিবাদে শনিবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে পূজামন্ডপে হামলার ঘটনায় অন্তত ৬শ’ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৮৪ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে কোতোয়ালী থানার এসআই আকাশ মাহমুদ ফরিদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এতে এজহার নামীয় ৮৪ জনের পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও ৫শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। মন্ডপের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এখন পর্যন্ত ৮৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৫শ জনকে আসামি করা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলছে। ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই হামলার নেপথ্যে কারা তা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বের করা হবে। আমরা দশজন করে আদালতের কাছে রিমান্ডে চাইবো। তখন তাদের আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করার মাধ্যমে ঘটনার নির্দেশদাতা ও উদ্দেশ্য জানা যাবে।’ নগরীর জেএমসেন হল, আন্দরকিল্লা, লালদীঘির পাড়, কেসিদে রোড, চেরাগী পাহাড় মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সকাল থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল অনেকটা বন্ধ ছিল। হরতালের সমর্থনে সনাতন ধর্মাবলম্বী তরুণ-যুবক ও পেশাজীবীরা সড়কে অবস্থান নেন। এসব সড়কে যানবাহন চলাচল না করলেও সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন সড়কে স্বাভাবিকভাবেই চলছে গণপরিবহন। পুলিশকে সড়কে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। হরতালের সমর্থনে সকাল থেকে আন্দরকিল্লা মোড়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, জাতীয় হিন্দু মহাজোট নেতৃবৃন্দসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জড়ো হন। তারা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নেতারা বলেন, হিন্দুরা শান্তিপ্রিয়। তারা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু গুজব রটিয়ে হিন্দুদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে, প্রতিমা ভাঙা হচ্ছে। এতে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। পূজামন্ডপে হামলার প্রতিবাদে বিকেলে জাতীয় হিন্দু মহাজোট, চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর পূজা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘শুরুতে প্রতিমা নিরঞ্জন না করা ও আধাবেলা হরতালের সিদ্ধান্ত হলেও সন্ধ্যায় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাসে আমরা প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নিই। তবে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার আধাবেলা হরতাল পালিত হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও সাধারণ সচেতন মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে হহরতাল সমর্থন করেছেন। প্রসঙ্গত শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জেএমসেন হলে পূজামন্ডপে হামলা ঘটনা ঘটে। জুমার নামায শেষে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে একদল মুসল্লী কুমিল্লার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে জেএমসেন হলে হামলা চালায়। তারা সড়কে থাকা মন্ডপের গেইট ভেঙে ফেলে এবং আশেপাশের দেয়ালে টাঙ্গানো বিভিন্ন ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এসময় হামলাকারীরা বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় পূজা কমিটির লোকজন জেএমসেন হলের ভেতর থেকে এগিয়ে এলে পুলিশ তখন টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে হামলাকারী ছত্রভঙ্গ দেয়। হামলার পর পূজা কমিটির নেতা-কর্মীরা সড়কে এসে অবস্থান নিয়ে ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত’ প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। বেলা ৩টার দিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত জেএমসেন হলে মোড়ে এসে শনিবার চট্টগ্রামে আধাবেলা হরতালের ডাক দেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ রাখার পর প্রশাসনের আশ্বাসে সন্ধ্যার পর থেকে বির্সজন দেওয়া শুরু হয়।
# ১৬/১০/২০২১ চট্টগ্রাম #