কবি শাহিদ আনোয়ার স্মরণে শিল্প সাহিত্য

কবিরা যা করে ঘুমিয়ে পড়ার আগে

– ( স্মরণ : অনুজেষু কবি শাহিদ আনোয়ার ) 

– স্বপন দত্ত  –

সময় হেঁটে যায় ধীরে ধীরে, যাচ্ছে রাত, কেটে
যাচ্ছে দিন।
সবার ভেতরে ওৎ পেতে ধূমায়িত আশা-নিরাশা,
অনুচ্চারিত প্রতীক্ষা ও ভয়।
হঠাৎ ক্ষতবিক্ষত কোনো ভোরে, শোকার্ত রোদ
এসে বলবে, “চলো চলো, পাল্কী ওঠাও এবার।”

অনুজ কবিদের শেষ বিদায়ে স্নেহের স্পর্শটুকু
দিয়ে ভালোবাসার শোকমাল্য পরাতে প্রায়শই
আসেন রণক্লান্ত বিদ্রোহী কবি।
জাতীয় কবির এমনই দায়িত্বপরায়ণতার কথা
অনেকেই আমরা জানি না।

আজও তাঁকে দেখতে পেলাম দাঁড়িয়ে আছেন,
বেদনাবিধুর হয়ে বিধ্বস্ত শয্যাপাশে যেনো এক
দেবদূত।
মেঘমলিন মৃদুস্বরে আপনার মনে মনে বলছেন,
“কবি মারা গেছেন অনেকদিন আগে,”- যেমন
গিয়েছিলাম, এই আমি।
অতঃপর অগ্নিবীণায় ঝংকার তুললেন আনমনে
নির্বিকার।
পরিস্থিতি বুঝে বিষের বাঁশীকে সংযত করলেন।

বললেন, জানো তো,হাংরি জেনারেশন শ্লোগানে
বলেছিলো -” উই ক্যারি ডিনামাইট ইন আওয়ার
ব্লাড।”

রক্তে ডিনামাইট, মানে বিস্ফোরক বহন করতো
শব্দক্ষেপণে পারঙ্গম একদা সবাক কবি, এমনই
কিছু শুদ্ধবার্তা দিতে চাইলেন কি জাতীয় কবি ?

বললেন দেখো, চেতনার অভিসার মনোভূমির
দেয়ালচিত্রে,
দেখো, হাতুড়ি ও ছেনির ঠোকাঠুকির আদিফুল
স্ফুলিঙ্গ-জোনাকিদের,
দেখো, রাত-নিশিথের হাওদায় সওয়ার হওয়ার
কী চমৎকার কায়দা !

দেখো দেখো, উৎকীর্ণ শব্দচিত্রের ব্যঞ্জনাধর্মিতা
আর অনাবিল ডানা ঝাপটানো,
অনুভূতিমাখা আবেগের প্রাণময়তায় পাতায়
পাতায়, শব্দচাতুরীর ঘূর্ণিঝড়।

চূণ-সুড়কির ক্ষুধিত মহলে রহস্যের কিংবদন্তী,
নিক্বনের ধ্বনি,গলাসাধা কিন্নরী ফ্রকের ঝালর,
অন্ধকারে সরু সিঁড়ি উপন্যাস, গর্ভগৃহে সর্বনাশ
দোলাচলে ইচ্ছে-অনিচ্ছের, ঘুম-পাড়ানীয়া গান
দোল দোল অথই দোলনায়,
অতৃপ্তির রাজনীতি, ক্ষুদ্রকিছু নিষিদ্ধ গল্পের ওম্।

খোদাইকরা শিলালিপির বুকে মেটামরফসিসের
বন্যা, আনন্দ ও বেদনায় বদলাচ্ছে কেবল।
লক্ষ্য করো, বদলে যাচ্ছে আদিমতা সভ্য শুভ্রতায়,
তারপর ক্রমশ রূপান্তর, ফের সভ্যতার রূপান্তর।

চিরকাল গুহার নিরবতার মাঝে কবির বসবাস,
অন্ধকার চাতালে বসে নক্ষত্র আলোয় জপতপ,
সবই তার ধ্যানে জ্ঞানে চর্চা মহত্তম।
সর্বদা আলোর পথে তার যাত্রা অন্ধকার কেটে।

চলো চলো, পাল্কীটা ওঠাও এবার, তমসো মা
জ্যোতির্গময়ঃ।
পা বাড়াও, তমসা থেকে জ্যোতির্ময় পথে।

উষ্ণ প্রস্রবনের জলধারা বুদবুদ নিয়ে বহমান।

★৩০শে সেপ্টেম্বর ২০২১★