চলমান সংবাদ

ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি

চাঁদাবাজির অভিযোগে পাঁচ পরিবহন শ্রমিককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীতে হঠাৎ করে ঘোষণা ছাড়াই গণপরিবহন চালানো বন্ধ করে দেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন কর্মজীবী ও সাধারণ যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন রুটে বাস, টেম্পু ও হিউম্যান হলার চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। এতে গণপরিবহন সংকটে চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কথায় কথায় ধর্মঘট ডেকে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন সেক্টরে বিদ্যমান নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে কোন ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেয়ার পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা নিজেদের অসীম ক্ষমতাধর ভাবতে শুরু করেছেন। নিজেদের শক্তি জানান দিতে, আধিপত্য বিস্তার করে নানামুখি চাঁদাবাজির পথ সুগম করতেই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ধর্মঘটের নামে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ অনেকের। এর আগে, বুধবার রাতে নগরীর অলঙ্কার মোড়ে পরিবহনের লাইনম্যান অফিসে অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজির টাকাসহ পাঁচ পরিবহন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরা হলেন- মো. আজাদ (৩৪), মো. অহিদ (৩৮), আরিফ হোসেন (৩০), নারায়ণ দে (৫১) এবং সিদ্দিক হোসেন (৪৫)। তাদের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। র‌্যাব চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল এস এম ইউসুফ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা অবৈধভাবে কাভার্ডভ্যান, মালবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহনের ড্রাইভারদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছে। প্রকাশ্যে অফিস খুলে বাস, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন গণপরিবহন থামিয়ে চাঁদাবাজি করছিলেন তারা। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি লাইনম্যান অফিস থেকে চাঁদার টাকাও উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। পাঁচ চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তারের জেরে যারা সড়ক থেকে পরিবহন কমিয়ে দিয়েছে তাদের বিষয়েও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এঘটনার পরপরই রাতে চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের দুই অংশ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের বিভক্ত দুই অংশ এবং সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন যৌথভাবে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরে সকল প্রকার বাস-মিনিবাস, হিউম্যান হলার এবং অটোটেম্পু ধর্মঘট/কর্মবিরতি পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাড়ি চালানো বন্ধ রাখেন। ঘোষণা ছাড়া আকস্মিক ধর্মঘটের কারণে গণপরিবহন না পেয়ে বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। গণপরিবহন না থাকার সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে রিকশাচালকেরা। এ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় রিকশাচালকদের সঙ্গে যাত্রীরা বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। অনেকে আবার পায়ে হেঁটেও যেতে দেখা গেছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরীর স্টেশন রোডের মোটেল সৈকতে সকল মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ পরবর্তী করনীয় ঠিক করতে যৌথসভায় বসেন। চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মনজুরুল আলম মঞ্জু বলেন, প্রতিনিয়তই আমরা প্রশাসনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। কোনও কারণ ছাড়াই মামলা দেওয়া হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশসহ প্রশাসনের লোকজন বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে। পুলিশের জ্ঞাতসারে সুনির্দিষ্ট কিছু খরচের জন্য মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো কিছু চাঁদা তোলে। এটি চাঁদাবাজি নয়, আমরা চাঁদাবাজির পক্ষে নই। বুধবার কয়েকজন শ্রমিককে গ্রেপ্তারের পর অন্যান্য শ্রমিকরা আজ বাস, টেম্পু এবং হিউম্যান হলার বের করেনি। বাধ্য হয়ে গাড়ি বন্ধ রেখেছি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অলি আহম্মদ বলেন, লাইনম্যান অফিসে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। আমরা চাঁদাবাজির পক্ষে নই। কিন্তু বিভিন্নস্থানে লাইনম্যানের মাধ্যমে কিছু খরচ তোলা হয়। যাচাইবাছাই ছাড়া এভাবে পরিবহন শ্রমিকদের গ্রেপ্তার করা কাম্য নয়। পরিবহন মালিকরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। তবে পিকেটিং বা অন্য কোনও কর্মকান্ড হচ্ছে না। বিকেলে একটি মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে।
# ০৭.১০.২০২১ চট্টগ্রাম #