চলমান সংবাদ

ইলিশ: বেশি রপ্তানি কি অতিরিক্ত ইলিশ ধরার ঝুঁকি তৈরি করবে?

ইলিশ মাছ

বাংলাদেশ থেকে দুর্গাপূজার মৌসুমে আরও আড়াই হাজার টন ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

আজ বৃহস্পতিবার আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরকে এক চিঠি দিয়ে এই অনুমতির কথা জানানো হয়েছে।

তিন দিন আগেই ২০৮০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ।

কিন্তু হিমায়িত খাদ্যদ্রব্য রপ্তানিকারকদের সমিতি’র সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন তারা আরও বেশি ইলিশ রপ্তানির সুযোগ চান।

অন্যদিকে ইলিশ গবেষকরা বলছেন, এতে অতিরিক্ত মাছ ধরার ঝুঁকি তৈরি হবে।

যা বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ বিবিসিকে জানিয়েছেন, “দুর্গা পূজার সময় প্রতি বছরই ভারতে ইলিশ যায়। এটি তারই অংশ। এবার গতবারের তুলনায় ইলিশ বেশি ধরা পড়েছে, সেজন্য রপ্তানি বাড়ানো হচ্ছে। তবে এটি সেরকম উন্মুক্ত রপ্তানি নয়। শুধু দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সারা বছর ধরে চলবে না।”

তিনি জানান, আজ আরও ৬৩ টি হিমায়িত মাছ রপ্তানিকারক কোম্পানিকে এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

মাত্র তিন দিন আগেই ৫২ টি প্রতিষ্ঠানকে ২০৮০ মেট্রিকটন বা ২০ লাখ কেজির বেশি ইলিশ রপ্তানি করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ।

এ নিয়ে দুই দফায় ভারতে মোট সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী তেসরা অক্টোবর পর্যন্ত এই রপ্তানি করা যাবে।

ইলিশ মাছ
ব্যবসায়ীরা আরও বেশি ইলিশ রপ্তানির সুযোগ চান।

ব্যবসায়ীরা আরও বেশি রপ্তানির সুযোগ চান

বাংলাদেশ থেকে ২০১২ সালে ইলিশ মাছ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া হয়। গত কয়েক বছর ধরেই ব্যবসায়ীরা ইলিশ রপ্তানির সুযোগ চেয়ে আসছিলেন।

হিমায়িত খাদ্যদ্রব্য রপ্তানিকারকদের সমিতির পরিচালক কাজি বেলায়েত হোসেন বলছেন তারা আরও বেশি রপ্তানির সুযোগ চান।

তিনি বলছেন, “শুধু ভারত না, যেসব দেশে অনেক বেশি বাঙালি বসবাস করেন, যেমন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এসব দেশেও অনেক চাহিদা আছে।”

“আমাদের পাশের দেশ ভারত ও মিয়ানমার ছাড়া আরও বেশ কিছু দেশে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু সবাই জানে বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ সেগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ভাল। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা যাচ্ছে না বলে যেসব দেশে ইলিশের চাহিদা আছে সেখানকার বাজার দখল করে নিয়েছে মিয়ানমার।”

“গত বছর পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছিল। সেই তুলনায় রপ্তানির সুযোগ দেয়া হচ্ছে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন। সরকার চাইলে এর পরিমাণ আরও অনেক বাড়াতে পারে,” বলছেন কাজি বেলায়েত হোসেন।

ভবিষ্যতে আরও বেশি ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয়া হবে কিনা তা জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব বলেন, গত কয়েক বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপের কারণে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।

সেটি যদি আরও বাড়ে তাহলে অন্য দেশে রপ্তানির কথা ভাবা হবে। তবে দেশের চাহিদা পূরণ না করে সেটা করা হবে না।

বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশ মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ফলে উৎপাদন বেড়েছে বলে মনে করা হয়।

বাংলাদেশে ২০০৩ সালে প্রথম জাটকা রক্ষার কর্মসূচি শুরু করা হয়। জাটকা না ধরার ব্যাপারে তখন থেকে প্রচারণা চলছে।

প্রথম ২০০৮ সালে ইলিশ ধরায় ১১ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। গত দশ বছরে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের দেয়া হিসেব মতে ২০০৭ সালে প্রায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছিলো। ২০১৯ সালে তা ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টনের মতো।

নৌকা
বেশি রপ্তানির সুযোগ অতিরিক্ত মাছ ধরার ঝুঁকি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা।

অতিরিক্ত মাছ ধরার আশঙ্কা

প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় শুভেচ্ছা হিসেবে কিছুটা রপ্তানির সুযোগ দেয়া হয়। তবে এবছর এর পরিমাণ অনেক গুণ বেশি।

২০১৯ সালে ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এবছর তার নয়গুণ বেশি রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

ইলিশ গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক মোঃ নিয়ামুল নাসের বলছেন, “এমনিতেই এবছর খুব বেশি ইলিশ সমুদ্র থেকে ভেতরে আসছে না। যেসব বড় ইলিশ আপনারা দেখছেন তা সমুদ্রের ইলিশ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

”সমুদ্রে এখন ইলিশ মাছ ধরা হচ্ছে তিন চারটা ‘সোনার’ ব্যাবহার করে এমন ট্রলার দিয়ে। যাদের সংখ্যাও এখন অনেক। সমুদ্রেই ধরে ফেলা হচ্ছে বলে যেসব নদীতে মূলত ইলিশ আসতো, সেখানে তারা আসতে পারছে না।”

তিনি বলছেন, রপ্তানির সুযোগ বাড়ানো হলে মাছ ধরাও বাড়তে পারে। এতে অতিরিক্ত মাছ ধরার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

তিনি আরও বলছেন, সমুদ্রে ইলিশ মাছ ধরার কারণে নদীতে যে জেলেরা ইলিশ মাছ ধরেন তাদের পেশাও ঝুঁকিতে পড়বে।

কারণ তারা ট্রলারে যেভাবে ইলিশ ধরছে সেই তুলনায় পরিমাণে তেমন যোগান দিতে পারবে না।

তবে তিনি বলছেন, সামনে প্রজননের মৌসুমে ইলিশ ধরার উপর যে নিষেধাজ্ঞার সময় আসছে তাতে হয়ত দেশের নদীতে বেশি প্রবেশ করতে পারবে ইলিশ মাছ।

এ বছর এই নিষেধাজ্ঞার সময় গত বছরের চেয়ে ১০ দিনে এগিয়ে আনা হয়েছ।

আগামী চৌঠা অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা যাবে না।

# সূত্রঃ বিবিসি বাংলা #