চলমান সংবাদ

ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের শরীরে এন্টিবডি পাঁচগুণ বেশি-সিভাসুর গবেষণা

যারা করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি তাদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি এন্টিবডি তৈরি হয়েছে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের। আর যারা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন, তাদের প্রায় পাঁচগুণ এন্টিবডি টাইটার পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দলের গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, রোগীর এটেন্ড্যান্ট, আউটডোর ও ইনডোর রোগী (কোভিড-১৯ আক্রান্ত নয় এমন), পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের সার্স-কোভ-২’র উপসর্গযুক্ত, উপসর্গহীন, প্রথম ডোজ টিকা প্রাপ্ত ও দুই ডোজ টিকা নেওয়া মোট ৭৪৬ জনের উপরে এ গবেষণা চালানো হয়। সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে গবেষক দলটি কোভিড-১৯’র এন্টিবডির ব্যাপকতা ও পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করেন। এছাড়া গবেষণার একটি উল্লেযোগ্য লক্ষ্য ছিলো, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কত শতাংশ এন্টিবডি তৈরি হয়েছে তা তুলে ধরা। স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণকারী মোট ৭৪৬ জনের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠী (২২৩ জন) কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনের শুধুমাত্র প্রথম ডোজ নিয়েছেন। উভয় ডোজ নিয়েছেন প্রায় ৩১ শতাংশ (২৩১ জন) এবং ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি জনগোষ্ঠীর ৩৯.১৪ শতাংশ (২৯২জন)। গবেষণায় দেখা যায়, প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৬২.৩৩ শতাংশের দেহে এন্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। অপরদিকে, উভয় ডোজ টিকা গ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর ৯৯.১৩ শতাংশের মধ্যে এন্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। অথচ যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি তাদের মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশের দেহে প্রাকৃতিকভাবে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি (ওমএ) পাওয়া গিয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি, তাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ এন্টিবডি (ওমএ) তৈরি হয়েছে (গড়ে ৫৩.৭১ ডিইউ/ মিলি), এর চেয়ে গড়ে প্রায় তিনগুণ বেশি এন্টিবডি (১৫৯.০৮ ডিইউ/ মিলি) তৈরি হয়েছে যারা ভ্যাকসিনের ১ম ডোজ নিয়েছেন এবং প্রায় পাঁচগুণ এন্টিবডি টাইটার (২৫৫.৪৬ ডিইউ/ মিলি) পাওয়া গেছে যারা ২য় ডোজ গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন। গবেষক দলে রয়েছেন প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী (প্রধান গবেষক ও পরিচালক, ওয়ান হেলথ ইন্সটিটিউট), প্রফেসর ডা. এমএ হাসান চৌধুরী (সহ-প্রধান গবেষক ও বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ), ডা. জাহান আরা (সহকারী গবেষক), ডা. সিরাজুল ইসলাম (সহকারী গবেষক), ডা. তারেক উল কাদের (সহকারী গবেষক), ডা. আনান দাশ (সহকারী গবেষক), ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (সহকারী গবেষক), ডা. ইয়াসির হাসিব (সহকারী গবেষক), ডা. তাজরিনা রহমান (সহকারী গবেষক), ইন্টার্ন ডা. সীমান্ত দাশ (সহকারী গবেষক)। জরিপে আরোও দেখা গেছে, প্রথম ডোজ গ্রহণের পর প্রথম মাসে গড়ে যে পরিমাণ এন্টিবডি (ওমএ) টাইটার দেহে বিদ্যমান থাকে (১৭৫.১ ডিইউ/ মিলি) তার প্রায় ২৫ শতাংশ হ্রাস পায় দ্বিতীয় মাসে এসে। কিন্তু ২য় ডোজ টিকা নেওয়ার পর এন্টিবডির পরিমাণ (গড়) সময়ের সাথে হ্রাস পাওয়ার প্রবণতায় ভিন্নতা দেখা যায়। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করার দুই মাসের মধ্যে গড়ে যে পরিমাণ এন্টিবডি টাইটার থাকে (৩২৪.৪২ ডিইউ/ মিলি) চতুর্থ মাসে এসে তার প্রায় ২১ শতাংশ টাইটার হ্রাস পায়, কিন্তু ৬ষ্ঠ মাসে এসে তা ৪র্থ মাসের মাত্র ৩.৪ শতাংশ হ্রাস পায়। অর্থাৎ গবেষণায় দেখা যায় যে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পরেও কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ এন্টিবডি শরীরে উপস্থিত থাকে। কোভিড-১৯ টিকা নেয়ার মাধ্যমে শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয় বলে জানান গবেষক দল।
# ২১.০৯.২০২১, চট্টগ্রাম #