চলমান সংবাদ

পরিবহণ মালিক-শ্রমিকের ডাকা কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে অচলাবস্থা

ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের অগ্রিম আয়কর নেওয়া বন্ধ, পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য বন্ধসহ ১৫ দফা দাবিতে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতির কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। কনটেইনার পরিবহনের প্রাইম মুভার (ট্রেইলার), ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকসহ পণ্যবাহী গাড়ি বন্ধ থাকায় এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া এ চালক-শ্রমিকদের কর্মবিরতির প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থমকে গেছে। এতে আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এদিন সকাল থেকেই বন্দরে পণ্য ও কনটেইনার বহনকারী যানবাহনের চালক ও শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে মিছিল ও সমাবেশ করে। আমদানি করা পণ্য ডেলিভারি নিতে পণ্য পরিবহনে ট্রাক-কার্ভাডভ্যান এবং লরিসহ কোনো যানবাহন বন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার থেকে পণ্য খালাস এবং কনটেইনার পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। তেমনি বন্দরে ঢোকা গাড়িগুলোও সকালে বন্দর থেকে বের হতে পারেনি। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। আন্দোলনকারীরা জানান, তারা দাবি আদায়ে বিভিন্ন মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজনের সাথে যোগোযোগ করেছিলেন। এছাড়া লাইসেন্সের ব্যাপরে ১৯ সেপ্টেম্বের বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সাথেও দেখা করেছেন। তবে কোথাও দাবি আদায়ের আশ্বাস না পেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে কর্মবিরতিতে নামেন। চট্টগ্রামের ১৮টি ডিপো থেকে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার আনা-নেয়া হয়। কর্মবিরতির কারণে ডিপো থেকে কনটেইনার আনা-নেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এতে তৈরি পোশাক রপ্তানির লিড টাইম, বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান ইত্যাদিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরে জাহাজে কইনটেইনার ওঠা-নামা সচল রয়েছে। তবে লুজ কার্গো বা খোলা পন্য পরিবহন, কইটেইনারস থেকে ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানে এবং বন্দরের কনটেইনার অফ ডকে যাওয়া বন্ধ আছে।’ চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মাইনুদ্দিন জানান, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ১৫ দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা পরিবহন বন্ধ রেখেছি। ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক ওবাইদুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের দাবি আদায়ে মন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিআরটিএ’র চেয়াম্যানের সাথে দেখা করেও কোন সমাধান পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কর্ম বিরতিতে নেমেছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক রয়েছে। তার আগ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। বৈঠকের পর নতুন করে সিদ্ধান্ত হবে কর্মবিরতি চলবে কি না।’ ১৫ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের অগ্রিম আয়কর নেওয়া বন্ধ ও এ পর্যন্ত নেওয়া অগ্রিম আয়কর ফেরত দেওয়া, ১০ বছর ধরে বন্ধ থাকা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালকদের লাইসেন্স দেওয়া অবিলম্বে চালু করা, পুনরায় লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে ফিল্ড টেস্টে পদ্ধতি বাতিল করা, পণ্য পরিবহণ খাতে সরকার নিবন্ধিত শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ‘কল্যাণ তহবিল’ ও চাঁদা আদায়ে বিধিনিষেধ আরোপ বন্ধ করা, সড়ক পরিবহণ শ্রমিকদের জন্য রেশনিং সুবিধা চালু করা, চট্টগ্রামের ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মনোনিত সকল প্রতিনিধি, চালক ও সহকারীকে বন্দরে প্রবেশে হয়রানি বন্ধে বাৎসরিক নবায়নযোগ্য বায়োমেট্রিক কার্ড চালু করা, যত্রতত্র নয় নির্দিষ্টস্থানে গাড়ির কাগজপত্র চেক করা, পুশিশের ঘুষ বাণিজ্যসহ সকল প্রকার শ্রমিক হয়রানি বন্ধ করা। এই ১৫ দফা দাবিতে সারাদেশেই পণ্যবাহী গাড়ির (ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান) মালিক-চালক-শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেন।

# ২১.০৯.২০২১ চট্টগ্রাম #