চলমান সংবাদ

বাড়ছে ডেঙ্গু প্রকোপ মশা নিধনে এখনো ওষুধ নির্ধারণ করতে পারেনি চসিক

চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের হার কমতে থাকলেও বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চলতি বছরে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৮৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট ওষুধ নির্ধারণ করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। মশক নিধনে দীর্ঘদিন ধরে চসিক অকার্যকর ওষুধ ছিটিয়ে আসছিল বলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে আসে। পরীক্ষায় কার্যকারিতা কম বলে প্রমাণ মিললেও পুরনো কীটনাশকেই গত ৪ আগস্ট মশা নিধনে ৩০ দিনের জন্য বিশেষ ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করে চসিক। ঢাকঢোল পিটিয়ে মশার ওষুধ ছিটানোর কথা বলা হলেও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ক্রাশ প্রোগ্রাম দৃশমান হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকটি জায়গায় ওষুধ ছিটালেও তা ছিল লোক দেখানো। নির্ধারিত সময় শেষে নগরীর সচেতন নাগরিকদের অভিমত, মশক নিধনের ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ ক্র্যাশ করেছে। চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরীর মশক নিধনে চসিকের সরবরাহ করা পাঁচ ধরনের রাসায়নিক পরীক্ষা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এর মধ্যে চার ধরনের ওষুধে মশার শতভাগ মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি ফগার মেশিনের মাধ্যমে এসব ওষুধ প্রয়োগে মশার মৃত্যুহার পাওয়া যায় ২৫ শতাংশেরও নিচে। তবে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে হারবাল জাতীয় লার্ভিসাইড ও হারবাল জাতীয় এডাল্টিসাইড কেরোসিনের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রতি লিটারে ১৬ দশমিক ৯ মিলিলিটার) ছিটানোর পর শতভাগ মশার মৃত্যুর প্রমাণ পায় গবেষক দল। গত ৩ আগস্ট মশার ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষাসংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করেন চবি উপাচার্য ড. শিরিন আক্তার। চবির প্রক্টর প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক রাসেলের নেতৃত্বে একটি টিম এই গবেষণা সম্পন্ন করে। পুরানো ওষুধ হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের গবেষণালব্ধ পদ্ধতিতে গত ৪ আগস্ট নগরীর বিপ্লব উদ্যান এলাকায় মশক নিধনে ত্রিশ দিনের বিশেষ ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করে চসিক। কর্মসূচির আওতায় প্রতিদিন চারটি ওয়ার্ডে ১৬৬ জন শ্রমিক ১০ দিন মশার লার্ভা ধ্বংসকারী কীটনাশক ‘লার্ভিসাইড’ ও অ্যাডাল্টিসাইড ছিটানোর কথা ছিল। ১০দিন পর ওই এলাকায় পুনঃকার্যক্রম পরিচালিত হবে। অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে এক মাসে তিনবার ওষুধ ছিটানো হবে। প্রতি ওয়ার্ডে ২৫ জন স্প্রেম্যান ওষুধ ছিটানো কথা। এভাবে চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম হওয়া কথা ছিল। কিন্তু নগরীর অনেক এলাকায় মশক নিধন কর্মীদের ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশন ঢাক-ঢোল পিটালেও কোন সুখবর দিতে পারেনি সংস্থাটি। মশা নিয়ন্ত্রণে খুব একটা অগ্রগতি নেই। গবেষক দলের আহ্বায়ক চবি’র সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান বলেন, পরীক্ষা করে দেখা গেছে, চসিকের সরবরাহ করা হারবাল জাতীয় লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ব্যবহার করে শতভাগ কার্যকার। এই ওষুধটিতে ভালো কার্যকর হয়েছে। বাকি চারটির তেমন কোনো কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয়নি। তিনি আরও বলেন, এই পাঁচটি ওষুধের কোনোটিই ফগার মেশিনে কার্যকর না। আমরা শুধু স্প্রের মাধ্যমেই শতভাগ কার্যকারিতা পেয়েছি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় যেসব ওষুধ অকার্যকর বলা হয়েছে আমরা সেগুলো বাদ দিয়েছি। এরপর ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে মশা নিধনে কী ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করছে, সেগুলো পরিদর্শন করেছি। এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে ১০০ লিটার ভেষজ ওষুধ মসকুবার কেনা হয়েছিল। সেটি প্রয়োগও করা হয়েছে। তবে এটি অনেক ব্যয়বহুল। আমরা কম খরচে কার্যকর ওষুধ নির্ধারণের কাজ করছি।’ তিনি বরেন, নতুন কীটনাশক কেনার চেষ্টা চলছে, এইজন্য কমিটি গঠন হয়েছে। যেসব এলাকায় এডিসের লার্ভার অস্তিত্ব মিলছে, সেখানে প্রথমদিনই কীটনাশক ছিটানো হয়েছে। অনেক এলাকায় ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে না, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মশক নিধনে নিয়োজিত কর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, প্রতিটি এলাকায় ওষুধ ছিটাতে। কোথাও ছিটানো না হলে, আমাকে জানালে সেখানে লোক পাঠানো হবে। নির্মাণাধীন ভবনের মালিকরা জমাট পানি না সরালে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এজন্য নগরীতে সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও চলছে। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে নতুনভাবে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক কর্নার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সচেতন না হলে ডেঙ্গু চট্টগ্রামেও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে চলতি বছরের জুলাইয়ে ৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়। আগস্টে শনাক্ত হয় ৩৮ জন। চলতি মাসে ৪ জন। এ নিয়ে ৪৯ জন রোগী শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে। এসব রোগী নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শনাক্ত হয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং বিআইটিআইডি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. নুরুল হায়দার বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এখন পর্যন্ত ৪৯ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হওয়া রোগীদের সবাই নগরীর বাসিন্দা। # ০৫.০৯.২০২১ চট্টগ্রাম #