চলমান সংবাদ

নালায় তলিয়ে যাওয়া সালেহ আহমেদ পাওয়া যায়নি এখনো

নগরীর মুরাদপুরে জলাবদ্ধতার মধ্যে পথ চলতে গিয়ে পা পিছলে নালায় পড়ে তলিয়ে যান সালেহ আহমদ। নিখোঁজ হওয়ার ১৩ দিনেও তার কোন সন্ধান মেলেনি। নালায় জলাবদ্ধতার পানির স্রোত থাকায় ধারণা করা হচ্ছে সালেহ আহমদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের ১৩ দিনের অভিযানেও মরদেহের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদিকে বৃষ্টির পানি জমে সড়ক আর খাল-নালার পানি একাকার হয়ে যাওয়ার ফলে একজন পথচারীর এমন পরিণতির পর এতগুলো দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দায়িত্বশীল কোনো প্রতিষ্ঠানই। ব্যস্ততম সড়কের পাশে ওই খালটি চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতাধীন। খালের মধ্যে আবর্জনা, প্রকল্পের কাজের বিভিন্ন উপকরণে সালেহ আহমেদের মরদেহ আটকে আছে ধারণা করা হলেও কূল-কিনারা পাচ্ছে না ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা। গত ২৫ আগস্ট সকালে জলাবদ্ধতার মধ্যে রাস্তা পার হচ্ছিলেন সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমদ। মুরাদপুর এলাকায় লুঙ্গি পরিহিত সালেহ আহমদ পা পিছলে পড়ে যান নালায়। ওই সময় সাথে সাথে পাশের লোকজন তাকে তোলার চেষ্টা করলেও স্রোতের মধ্যে মুহুর্তেই হারিয়ে যান সালেহ আহমেদ। ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেও কোন সন্ধান দিতে পারেনি তার। উদ্ধারকারী দল অভিযান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে আছে। সালেহ আহমদের পরিবারের সদস্যরাও ঘুরছেন নালা-খালে। নিখোঁজ সালেহ আহমদের বয়স ৫৫। নগরীর চকবাজার এলাকায় তিনি সবজি বিক্রি করতেন। তিনি পটিয়া উপজেলার মনসার টেক এলাকার আব্দুল হাকিমের ছেলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সালেহ আহমদ নিখোঁজের ঘটনায় সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএকে দায়ী করে তুমুল সমালোচনা চলছে। উন্নয়ন সংস্থার গাফেলতির কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে দাবি করছেন সাধারণ জনগণ। এদিকে খালের মুখে কোনরকম সতর্কতা নির্দেশনা বা খালের পাশে কোন নিরাপত্তা বেস্টনি না থাকায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে আসছেন চট্টগ্রামের নাগরিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয়দের দাবি, মোড়ের পাশের এই খালগুলোর ওপরে আগে স্ল্যাব ছিল। পরে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবে সেসব অপসারণ করে খালের মুখ উন্মুক্ত করে দিলেও সেখানে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেনি প্রকল্পের দায়িত্বশীলরা। নিখোঁজ সালেহ আহমদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিও উঠেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ বা জেলা প্রশাসন কোন সংস্থার পক্ষ থেকে কোন সহায়তা পায়নি সালেহ আহমেদের পরিবার। এদিকে এই ঘটনার দায় সিটি কর্পোরেশন এড়াতে পারে না- এমন মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, যার দোষেই ঘটনা ঘটুক না কেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এলাকায় ঘটা এমন ঘটনার দায় দায়িত্ব চসিককেই নিতে হবে। রাস্তার পাশেই মুখ খোলা খাল অথচ কোন নিরাপত্তা বেস্টনী নাই, কোনো সতর্কতা বার্তা নাই। বৃষ্টি হলে সেখানে রাস্তা আর খাল একাকার হয়ে যায়। রাস্তায় একটা গর্ত হলেও তো মানুষ একটা লাঠি দিয়ে দেয়। যাতে কেউ সেই গর্তে না পড়ে। আর এখানে মূল সড়কের পাশে এত বড় খাল, অথচ কিছুই নেই। মানুষ বুঝবে কী করে, সে রাস্তায় পা দিচ্ছে না খালে? এর দায়িত্ব তো সিটি কর্পোরেশনকে নিতেই হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন। কে দায়ী সেটা খুঁজে বের করে তাকে শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি এই পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক শামীম আহসান চৌধুরী বলেন, নিয়মিত আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে। নালা-খালের ময়লাগুলোর মধ্যে খুঁজে দেখা হচ্ছে। আমরা আরো কয়েকটা দিন দেখবো। লাশ কোথাও আটকে থাকতে পারে, আবার নদীতেও চলে যেতে পারে। অভিযান চালাতে গিয়ে অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, খালগুলোতে ময়লা-আবর্জনা জমাট বেঁধে আছে। এসব আবর্জনার মধ্যে ভালো করে খোঁজা হচ্ছে। কোথাও দুগন্ধ আসছে কিনা, মাছি উড়ছে কিনা বা পাখি উড়ছে কিনা, সেটাও দেখা হচ্ছে। আমাদের অভিযান চলবে, কয়েকদিন পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নিখোঁজ সালেহ আহমদেও ছেলে সাদেক উল্লাহ মাহিন বলেন, একটা মানুষ নাই হয়ে গেলেন। প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন-সিডিএ কেউ কোন খোঁজ-খবর রাখছে না। মেয়র এসেছিলেন আমাদের বাসায়। বলেছিলেন উনি আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। পরে তিনিও আর কিছু বলেননি, আমরাও আর যাইনি। # ০৬.০৯.২০২১ চট্টগ্রাম #