চলমান সংবাদ

পুনর্বাসন ছাড়া ষোলশহর রেলস্টেশন সংলগ্ন বস্তি উচ্ছেদ না করতে গৃহকর্মী অধিকার রক্ষা কমিটির সমাবেশ

ষোলশহর রেল স্টেশন সংলগ্ন সাধারণ শ্রমজীবি মানুষের বস্তি পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ না করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডাঃ মাহফুজুর রহমান।গৃহকর্মী অধিকার রক্ষা কমিটি আয়োজিত সমাবেশে তিনি আরো বলেন,‘’ গরীব শ্রমজীবি মানুদের এ করোনাকালীন সময়ে বস্তি থেকে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত অমানবিক।এ শ্রমজীবি মানুষেরা ট্যাক্স দেয়,এরাই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে।নিতান্তই উচ্ছেদ করার প্রয়োজন হলে, আগে এদের  রেলের পরিত্যক্ত জমিতে বা সরকারী খাস জমিতে পুনর্বাসন করুন।সরকার গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসন করার জন্য ২০২০ সালে একটি নীতিমালা প্রনয়ণ এবং সে অনুযায়ী গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছে।রেল কর্তৃপক্ষ সে নীতিমালা অনুসরণ করে এ অসহায় গৃহহীন মানুষদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিক।রাষ্ট্রীয় নীতি অনুসারে পুনর্বাসনের দাবিতে আপনাদের জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে” ।

আজ ৫ সেপ্টেম্বর,বিকাল ৪ টায় ষোলশহর দুই নম্বর গেইটে গৃহকর্মী অধিকার রক্ষা কমিটির সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। গৃহকর্মী অধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি আসমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনু্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনজুম আরা বেগম,সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজা বেগম,সদস্য কুলসুম বেগম,সদস্য সাথী আক্তার প্রমুখ।

বক্তারা বলেন,‘‘ষোলশহর স্টেশনের রেল লাইন থেকে  তালতলা পর্যন্ত এলাকায় প্রায় ১২/১৫ হাজার মানুষ বসবাস করে,যার মধ্যে সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভোটার আছে ৫ হাজার।এ এলাকায় গৃহকর্মী,রিক্সা ও ট্যাক্সি চালক,গার্মেন্টস শ্রমিক,দোকান কর্মচারী,দিনমজুরসহ শ্রমজীবি মানুষের বসবাস।এর মধ্যে বড় অংশই দীর্ঘদিন এ এলাকায় বসবাস করছে।উচ্ছেদের খবর পাওয়ার পর আমরা আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।কারণ এ এলাকায় বসবাসরত নারীদের বেশিরভাগই আমরা গৃহকর্মী এবং এ এলাকাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি,বাজার,দোকানে আমরা  কাজ করি।এ অবস্থায় এখান থেকে চলে গিয়ে অন্য কোন নতুন স্থানে যেতে হলে,আমরা কাজ হারাবো এবং করোনাকালীন সময়ে অন্যত্র নতুন করে কাজ পাওয়া কঠিন।করোনাকালীন এ অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে কাজের অনিশ্চয়তা আমাদের চরম বিপদগ্রস্ত করবে।করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে কাজ হারিয়ে দীর্ঘদিন আমরা চরম আর্থিক সংকটে দিন অতিবাহিত করেছি।কাজ না থাকায় ধারদেনা করে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের সামান্য সঞ্চয়  হারিয়েছি এবং বড় পরিমাণে ঋণগ্রস্ত হয়েছি।এখন এখান থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হলে,অন্য এলাকায় ঘর ভাড়া করার জন্য অগ্রিম এবং আনুষঙ্গিক খরচ বহন করার সামর্থ্য আমাদের কারও নেই।যার ফলে আমাদের সন্তান-সন্ততিসহ পথে বসা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় থাকবেনা।এছাড়া এখানে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত স্কুলে সহশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আমাদের সন্তানরা বিনামূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ পায়।এ এলাকা থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হলে,আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে,এবং তারা আবার বখে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।যার ফলে পারবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। এ এলাকা থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হলে,আমরা চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বো।“

নেতৃবৃন্দ করোনাকালীন মহামারীতে এ এলাকায় বসবাসরত শ্রমজীবি মানুষকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ না করা এবং সরকারের পুনর্বাসন নীতিমালা-২০২০ অনুযায়ী   রেলের পরিত্যক্ত ভূমি বা সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসনের দাবি জানান।

এর পূর্বে উক্ত দাবিতে আজ সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক,বিভাগীয় রেল পরিচালক,বিভাগীয় ও কআঞ্চলিক ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার নিকট আসমা আক্তারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল স্মারকলিপি প্রদান করেন।

# ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, প্রেস বিজ্ঞপ্তি #