চলমান সংবাদ

দুদকের মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ, সাবেক ওসি প্রদীপ-চুমকির বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু

 অবসর নেয়া সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় দুদকের দাখিল করা অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। এছাড়া পলাতক থাকা প্রদীপের স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ-১ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দিয়েছেন। প্রদীপের পক্ষে করা জামিন আবেদনও নামঞ্জুর করেন আদালত। গত ২৬ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২’র সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুদকের দাখিল করা ১৩ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে শুধু দুজন আসামি হিসেবে আছেন। এরা হলেন- প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি। সাক্ষী করা হয় ২৯ জনকে। অভিযোগপত্র দাখিলের শুনানির জন্য বুধবার দুপুর ১টার দিকে প্রদীপকে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম আদালতে আনা হয়। শুনানি শেষে তাকে আবার কক্সবাজার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। শুনানির সময় প্রদীপ কুমার দাশকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। আদালতে বোনসহ কয়েকজন স্বজন তার সঙ্গে দেখা করতে যান। দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, সাবেক ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন ও অন্যকে হস্তান্তর ও ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকা অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ দাখিল করা হয় আদালতে। পরে শুনানি শেষে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেন। পলাতক আসামি চুমকি কারণের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি ও ক্রোক পরোয়ানা জারি করেছেন। মামলার আগামী ধার্য তারিখে এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছেন আদালত। প্রদীপের পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত নামঞ্জুর করেছেন। প্রসঙ্গত গত বছরের ২৩ অগাস্ট দুদক’র সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২’র সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে ওসি প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ওসি প্রদীপের সঙ্গে তার স্ত্রী চুমকি কারণকেও আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর ৪(২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়। মামলার এজাহারে, নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ি প্রদীপ কুমার দাশ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য শ্বশুরের নামে নির্মাণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে ওই বাড়িটি প্রদীপ দাশের শ্বশুর তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে দান করেন। দানপত্র দলিল হলেও বাড়িটি প্রদীপ দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণ কর্তৃক অর্জিত বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এই মামলার আরেক আসামি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারণ পলাতক আছেন। ২০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার করা আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মামলার এজাহারে উল্লিখিত সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন। গত ২৯ জুন চট্টগ্রমের সিনিয়র স্পেশাল জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত প্রদীপ কুমার দাশের অবৈধ সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দেন। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন বাহারছড়া চেকপোস্টে গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনার পর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের হাকিম আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে এক নম্বর এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দুই নম্বর আসামি করা হয়। ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর প্রদীপকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সিনহা হত্যা মামলাটি তদন্ত করে প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে গত ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় র‌্যাব। চট্টগ্রামে দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকে ওসি প্রদীপ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। ৭ মাস পর গত ১০ জুন চট্টগ্রাম কারাগার থেকে কক্সবাজার কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। গত ২৭ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
# ০১.০৯.২০২১ চট্টগ্রাম #