চলমান সংবাদ

মিতু হত্যায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুলের করা মামলার নথি আদালতের হেফাজতে রাখার নির্দেশ

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার যাবতীয় আলামত ও নথিপত্র পুলিশের পরিবর্তে আদালতের হেফাজতে তালাবদ্ধ করে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাবুল আক্তারের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমান এ আদেশ দিয়েছেন। এদিকে মিতু হত্যায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার নথিপত্রের সার্টিফাইড কপিও আইনজীবীকে সরবরাহের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের আদালত এই আদেশ দেন। উল্লেখ্য বাবুল আক্তারের করা মামলাটি ইতোমধ্যে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে নিষ্পত্তি করেছে। একই ঘটনায় নিহত মিতুর বাবার করা আরেকটি মামলা দায়েরের পর নতুনভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, মিতু হত্যার পর তার স্বামী বাবুল আক্তারের দায়ের করা আগের মামলার তদন্তের গতিপথ ছিল এক ধরনের, এখন আবার আরেকভাবে তদন্ত হচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে, আগের নথিপত্র টেম্পারিং করে তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে আসামি বাবুল আক্তারকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হতে পারে। সেজন্য আমরা নথিপত্রগুলো পুলিশ বা জেনারেল রেকর্ড শাখার পরিবর্তে জুডিশিয়াল হেফাজতে রাখার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলাম। আদালত শুনানি শেষে পিবিআই’র দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের সাক্ষ্য, ১৬১ ও ১৬৪ ধারার আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ যাবতীয় ডক্যুমেন্ট এখন থেকে জুডিশিয়াল হেফাজতে রাখার আদেশ দিয়েছেন। বাদি-বিবাদি যাদের প্রয়োজন হবে, আদালতে আবেদন করে তার নকল নিতে পারবেন। আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল আরো বলেন, ‘বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় বেশ কয়েকজন আসামি ও সাক্ষী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ অনেকের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি নিয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনসহ এসব নথির সার্টিফাইয়েড কপির জন্য আমরা বারবার পুলিশের কাছে গিয়েছি। কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাতে আমাদের সেগুলো সরবরাহ করছে না। সেজন্য আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের আদালত যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সার্টিফাইয়েড কপি সরবরাহের আদেশ দিয়েছেন।’ প্রসঙ্গত ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও কুপিয়ে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশারফ হোসেন প্রথম দিকে জামাতার পক্ষে কথা বললেও পরে নিজেই সন্দেহের আঙুল তোলেন। মিতুর বাবা অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে হত্যার পেছনে তার জামাইয়ের ‘যোগসাজশ’ রয়েছে বলে তার ধারণা। মামলা তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে নগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি’র কাছে থাকলেও ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই’র ওপর। এরপর ধীরে ধীরে জট খুলতে থাকে এই মামলার। গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ১২ মে ওই মামলার তার বিরুদ্ধে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। একইদিন (১২ মে) দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম কালু, সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া। এই মামলায় ওইদিনই বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত তিনি তা দেননি। এরপর থেকে বাবুল আক্তার কারাগারে রযেছেন। গত ২৯ মে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
# ২৩.০৮.২০২১ চট্টগ্রাম #