চলমান সংবাদ

পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ, ২ লাখ টাকা জরিমানা

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঘটলেও পাহাড় কাটা বন্ধ হয়না। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পাহাড় কেটে বসতি গড়ে উঠেছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধ হয় না। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করলেও প্রশাসনের এ বিষয়ে তেমন নজর নেই। পাহাড় কাটা বন্ধে মাঝে মধ্যে অভিযান চালায় প্রশাসন। অনেকদিন পর হলেও পাহাড় কেটে পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগে ৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। রোববার (২২ আগস্ট) পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী শুনানি শেষে এ জরিমানা করেন। বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো পরিবেশ অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রামের মতিঝর্ণা লালখান বাজার এলাকায় পাহাড় কাটার দায়ে রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের মালিক মো. আব্দুর রহিমকে ৪০ হাজার টাকা, রঘু দাশগুপ্তকে ২০ হাজার, সর্বসাং দাশগুপ্তকে ২০ হাজার টাকা, বায়েজিদে রিদোয়ান হোসেনকে ৪৫ হাজার টাকা এবং পাঁচলাইশ থানার মো. সামশুল হুদাকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আগামী সাতদিনের মধ্যে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন পাহাড় কেটে প্রতিদিনই গড়ে উঠছে ঝুঁপড়ি থেকে শুরু করে চার-পাঁচ তলার দালান। পাহাড়ে বসবাস করা বেশিরভাগ মানুষই নিম্ন আয়ের। সেখানে বসবাসের জন্য নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের মাটি ধসে দুর্ঘটনা ঘটছে। এরপর কিছু সময়ের জন্য প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়ে। সময় যত গড়ায় ততই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরানোর উদ্যোগে স্থবিরতা চলে আসে। চট্টগ্রামের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৫৩১টি। রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, গণপূর্ত বিভাগ, বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ মালিকানাধীন সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন সাতটি পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩০৪টি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পাহাড়ের গা ঘেঁষে কিংবা পাহাড় কেটে বসতি গড়ে উঠেছে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস। সবমিলিয়ে নগরের ২৫টি পাহাড়ে এক হাজারের বেশি পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। ২০০৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গত ১৩ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে আড়াই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে পাহাড়ধসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ২০০৭ সালে। ওই বছরের ১১ জুন টানা বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালে মারা যান ৩০ জন। ২০০৭ সালে পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির পর পাহাড় ব্যবস্থাপনায় একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ৩৭ দফা সুপারিশ করে কিন্তু এখনো সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
# ২২.০৮.২০২১ চট্টগ্রাম #