চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে

চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত-মৃত্যুর রেকর্ডের তান্ডবে বিপর্যস্ত ছিল চট্টগ্রাম। তবে গত কয়েকদিন ধরে সংক্রমণ হার নিম্নমুখীতে স্বস্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ স্বস্তির মধ্যেই নতুন করে আপদ দেখা যাচ্ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ে। করোনার মধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যেই মারাত্মক রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু। তাই সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। গত দেড় মাসে চট্টগ্রামে ৬৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৫ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যে দেখা যায় গত ৯ আগস্ট পর্যন্ত সর্বমোট ৩০ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। যারা উপজেলা ও নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ডেঙ্গু শনাক্ত হন। এর আগে জুলাইয়ে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। এদের মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নতুন কেনা মশা নিধনের ওষুধ ‘মসকুবা’ ছিটানোর মধ্যে দিয়ে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চসিক’র অনুরোধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ও কীটতত্ত্ববিদ গবেষণা চালিয়ে মশা নিধনে ব্যবহৃত চসিক’র ওষুধ অকার্যকর বলে প্রতিবেদন জমা দেয়। গবেষণা দলের সুপারিশ করা নতুন এই মশার ওষুধ কেনা হয়। গত সোমবার (১৬ আগস্ট) থেকে এই কার্যক্রম শুরু করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে চসিক’র ১৫’শ আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ারগণ ডেঙ্গু মোকাবেলায় ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইনে নগরবাসীকে সচেতন করতে কার্যক্রম চালাবে। এ কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবে চসিকের পরিচ্ছন্ন সেবক ও কর্মীরা। সার্বিক কার্যক্রম তদারকির জন্য চসিক’র পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এডিস মশা নিধনে এই নতুন ওষুধ কতটুকু কার্যকর কিছু সময় অতিবাহিত হলে বুঝা যাবে। তবে সিটি মেয়র ডেঙ্গু প্রতিরোধে চসিক’র এই কার্যক্রমের পাশপাশি নগরবাসীর সচেতনতার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ফুলের টব, প্লাষ্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাষ্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, ডাবের খোসা, ব্যাটারি সেল, নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানি তিনদিন পর পর ফেলে দিতে হবে। ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি পরিস্কার করতে হবে। অব্যবহৃত পাত্র উল্টে রাখতে হবে যাতে পানি না জমে। এ নির্দেশনা পালনে কোন অবহেলা করা হলে চসিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বাড়ি বা আবাসিক গৃহের মালিককে জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে। এদিকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য পৃথক কর্নার স্থাপন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ১৩ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে পৃথক বিশেষ কর্নারটি গত সপ্তাহে স্থাপন করা হয়। যেখানে ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য আলাদা চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে চমেক হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে দশজন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিরা ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, চলতি মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এসব রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে চিকিৎসকরাও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের ডেঙ্গু পরীক্ষার পাশাপাশি কোভিড পরীক্ষাও করাচ্ছেন। হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কারও যদি জ¦র বা উপসর্গ থাকে, তাহলে কম মূল্যেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পারবে। ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে যেহেতু করোনার বিষয়টি সামনে আছে, তাই অনেকেই সেদিকে নজর দিচ্ছে না। এটিও নীরব ঘাতক হতে পারে। এ বিষয়ে তাই এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। কোন উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড এবং ডেঙ্গু দুটোর জন্যই আলাদা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন তিনি। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘চিকিৎসকদের পাশাপাশি সকল চিকিৎসা কেন্দ্রে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সন্দেহ হলে যেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে বাসা বাড়িতে জমে থাকা পানি অন্তত তিনদিন পরপর পরিষ্কার করতে হবে। কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে খেয়াল করতে হবে।
# ১৮.০৮.২০২১ চট্টগ্রাম #