চলমান সংবাদ

নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলন সিআরবি’র প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে যারা হাসপাতাল করতে চায় তারা দেশের শত্রু

– ড. অনুপম সেন

নাগরিক সমাজের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ড. অনুপম সেন

কালাচার অ্যান্ড হেরিটেজ ঘোষিত চট্টগ্রামের সিআরবি’র প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষ নেবেন, তারা চট্টগ্রামের তথা দেশের শক্র বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজ বিজ্ঞানী একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. অনুপম সেন। সিআরবি রক্ষায় আন্দোলনকারী সংগঠন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান ড. সেন বলেন, সিআরবি রক্ষায় চট্টগ্রামের মানুষ, তথা সারাদেশের মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবি রক্ষায় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাই। হাসপাতাল হোক সেটা আমরা চাই। তবে সেটা কোনভাবেই সিআরবিতে নয়। যারা সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করতে সেখানে হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষ নেবেন, তারা চট্টগ্রামের তথা দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবেন। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন প্রফেসর ড. অনুপম সেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে’ নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সিআরবি থেকে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্প অন্য কোনো স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানান চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ। সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, প্রফেসর হোসাইন কবির, ড. ইদ্রিস আলী, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবু, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, শরীফ চৌহান, চবি শিক্ষক ওমর ফারুক রাসেল, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুন চৌধুরী, যুগ্ম সদস্য সচিব আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান, স্বপন মজুমদার প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চলনা করেন কবি ও সাংবাদিক শুকলাল দাশ। ড. সেন বলেন, যথাযথ উদ্যোগের অভাবে নান্দনিক শহর চট্টগ্রামের সবুজ প্রকৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শহরের অনেক উন্মুক্ত পরিসর একে একে হারিয়ে গেছে। এখন একমাত্র অবশিষ্ট রয়েছে সিআরবি। এটাও যদি রক্ষা করা না যায় তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য ঐতিহ্যবাহী আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তাই যেকোনো মূল্যে সিআরবিকে রক্ষা করতে হবে। চট্টগ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধ করবো। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের স্থান হিসেবে সিআরবি এলাকাকে বাছাইয়ের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি। অনেক কিছু গোপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক জানানো হলে তিনি নিশ্চয় হাসপাতাল প্রকল্প রেলওয়ের অন্য কোনো জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেবেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত দেশের সংবিধান ও পরিবেশ আইন বিরোধী আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সিআরবি হচ্ছে চট্টগ্রামের ফুসফুস। এখানে গিয়ে নগরবাসী বুকভরে শ্বাস নিতে পারে। এখানে আয়োজন করা হয় পহেলা বৈশাখের সার্বজনীন অনুষ্ঠান, বসন্ত উৎসব, আয়োজন করা হয় বলী খেলা, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরসহ বিভিন্ন দিবসে মানুষ এখানে জড়ো হন। সব মিলিয়ে সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে সিআরবি এলাকা। তিনি আরও বলেন, একটি গবেষণা দেখা গেছে, সিআরবিতে ১৯৭টি প্রজাতির উদ্ভিদ আছে। দুর্লভ ওষুধি গাছ রয়েছে, রয়েছে শতবর্ষী অনেক গাছ। রয়েছে হরেক রকমের পাখির আবাস ও নানা প্রজাতির প্রাণীর আবাসও। তাই এখানে হাসপাতাল নির্মাণ করা হলে এসব জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এটা হবে দেশের সংবিধান ও পরিবেশ আইন বিরোধী আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থানটিতে রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুর রব, শহীদ শেখ নজির আহাম্মদ, শহীদ এমএ মনোয়ারহোসেন, বিমল সিং, ফখরুল আলম, মো. সিরাজউদ্দিন, আলী নূর চৌধুরী, মহিউদ্দিন, নুরন্নবী চৌধুরী ও গঙ্গারামের স্মৃতিস্তম্ভ। শহীদ আবদুর রবের পৈত্রিক বাসস্থান এখানে, সেই বাসা থেকেই তিনি যুদ্ধে যান। যুদ্ধের ইতিহাস মুছে দিতে এখানে বাণিজ্যিক হাসপাতাল হতে পারে না। এছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে সিআরবিকে কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ জোন ঘোষণা করা হয় এবং এটাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থাকার বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, সিআরবিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হবে সংবিধানের পরিপন্থী। কিন্তু ইতোমধ্যে এই কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ জোনে খননকাজ শুরু করা হয়েছে, যেটি প্রচলিত আইনেরও পরিপন্থী। সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, রেলওয়ের পক্ষে ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে একটি হাসপাতাল ও কলেজ নির্মাণের জন্য নোটিশ দিয়ে ইনভাইটেশন চাওয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, হাসপাতালটি চট্টগ্রাম রেলওয়ের যে কোনো জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গার উল্লেখ নাই। পরবর্তীতে তথ্য-উপাত্ত গোপন করে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে রেলওয়ে চুক্তিবদ্ধ হলে হাসপাতালের স্থান হিসেবে সিআরবি এলাকাকে নির্ধারিত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যা বেইনী। এ কারণে চট্টগ্রামবাসী আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে।

# ১০ আগস্ট ২০২১, প্রেস বিজ্ঞপ্তি #