চলমান সংবাদ

মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন আর নেই

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ড. গাজী সালেহ উদ্দিন আর নেই। শুক্রবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশানের শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন চট্টগ্রামের প্রগতিশীল বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে তার লেখা বইয়ের তথ্যকে দালিলিক সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। এছাড়াও ১/১১ এর সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর এর প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আবু ইউসুফের সাথে তাকেও পতেঙ্গা র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে অপদস্ত করা হয়েছিল। অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিনের ছেলে তানভীর সালেহীন গাজী এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার উনাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। আইসিইউতে থাকা অবস্থায় তিনি শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। তঁঅকে চট্টগ্রামে নেয়া হবে। তবে জানাযা ও দাফনের বিষয়ের এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এর আগে গত ২১ জুলাই থেকে করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন ড. গাজী সালেহ উদ্দিন। পরে করোনার নমুনা পরীক্ষায় তিনি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। এরপর গত ৩০ জুলাই তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার গুলশানের শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ৩ আগস্ট তাকে আইসিইউ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের সিআরবিতে হাসাপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ড. গাজী সালেহ উদ্দিনের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নের বদরপুর গ্রাম। শহীদ পরিবারের সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বড় হয়েছেন চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলীর পাঞ্জাবী লেন-এ (বর্তমানে শহীদ লেন)। তিনি মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদ আলী করিম এবং মাতা হুরমোজা বেগমের দ্বিতীয় পুত্র। পিতা রেলওয়ের কর্মকতা হওয়ার সুবাদে তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন পাহাড়তলী রেলওয়ে স্কুলে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর উপমহাদেশের প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন’র গবেষণা নির্দেশনায় ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি আমৃত্যু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় ‘নৈতিক স্কুল’ গড়ে তুলেছেন অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন। সেখানে পড়াশোনা করে আসছে সুবিধাবঞ্চিত বস্তির শিশুরা।
# ০৬.০৮.২০২১ চট্টগ্রাম #