মতামত

ড. সাঈদ ইফতেখার আহমেদ  এর  “কিউবার কমিউনিস্ট শাসন কি অবসানের পথে ?” লেখাটির বিষয়ে খোরশেদুল ইসলামের প্রতিক্রিয়ায় লেখকের বক্তব্য

(‘প্রগতির যাত্রীতে’  বিগত  ১৬ জুলাই ড. সাঈদ ইফতেখার আহমেদ  এর “কিউবার কমিউনিস্ট শাসন কি অবসানের পথে ?” লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর গত ২৯ জুলাই জনাব খোরশেদুল ইসলাম এর একটি প্রতিক্রিয়া  ‘প্রগতির যাত্রীতে’ প্রকাশিত হয় । জনাব খোরশেদুল ইসলামের লেখার জবাবে ড. সাঈদ ইফতেখার আহমেদ তার ফেসবুক পেজে একটি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ড. সাঈদ ইফতেখার আহমেদ এর সম্মতিক্রমে  তার  বক্তব্যটি পাঠকদের জানার সুবিধার্থে আমাদের নিউজ পোর্টালের মতামত বিভাগে হুবহু প্রকাশ করা হলো)
‘প্রগতির যাত্রীতে’ ১৬ জুলাই “কিউবার কমিউনিস্ট শাসন কি অবসানের পথে?” শিরোনামে একটা লেখা লিখেছিলাম। এ লেখার প্রতিক্রিয়া হিসাবে বা সমালোচনা করে আরেকটি লেখা লিখেছেন জনাব খোরশেদুল ইসলাম। আমার লেখাতে আমি লিখেছিলামঃ “…সমাজতান্ত্রিক দাবীদার দেশগুলি বহু মত এবং পথকে ধারণ করবার মত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি।“এটি হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির সঙ্কটের মূল কারণ, যা তাদের পতন ডেকে এনেছে। জনাব ইসলাম এ বিষয়ট ধরে আমার লেখার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি তাঁর পুরো নিবন্ধে সমাজতান্ত্রিক দাবীদার রাষ্ট্রগুলির একনায়কতান্ত্রিক, একদলীয় শাসনকে সমর্থন করেছেন। আর এ সমর্থন করবার জন্য তিনি নির্ভর করেছেন অফিসিয়াল মার্কসবাদের উপর—যে মার্কসবাদের চর্চা করেছেন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও গণচীনে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির কর্তা ব্যক্তিরা। মার্কসবাদ, সমাজতন্ত্র, সর্বাহারার একনায়কতন্ত্র, শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি রেটোরিক ব্যবহার করে, এ দুটি রাষ্ট্রে কিছু ব্যক্তির হাতে রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয়েছে। বড় দাগে কিউবাও সেই একই পথে হেঁটেছে। আমি লিখেছিলামঃ “দেখা গেছে, যে সমস্ত রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে তার কোনটিতেই অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ, সামরিক অভ্যুত্থান বা বহিস্থ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটান যায়নি।“ একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে এবং বিরুদ্ধ মতকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা যদি accommodate করতে না পারে তাহলে কেন এবং কিভাবে তার পতন হতে পারে, এটি বোঝার জন্য David Easton এর “Political system theory” আজো প্রযোজ্য বলে আমার কাছে মনে হয়। আগ্রহীরা তাঁর তত্ত্ব পড়ে দেখতে পারেন। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন এবং পতন পরবর্তী সঙ্কট বোঝার জন্য বামপন্থীরা এখনো যদি অফিসিয়াল সোভিয়েত এবং চাইনিজ মার্কসবাদের উপর নির্ভর করে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে যে বিশ্বে বামপন্থী আন্দোলনের আর কোন ভবিষ্যত নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে, নোয়াম চমস্কি, তারেক আলীসহ অনেক বামপন্থীই সোভিয়েত, চীনের “Official box” থেকে বের হয়ে এসে নানা আঙ্গিক থেকে বাম আন্দোলনের সঙ্কটগুলো বোঝার চেষ্টা করছেন। পরিশেষে আমার লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করতে চাইঃ “রুশ বিপ্লব পরবর্তী সোভিয়েত রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে ১৯৪৫ সালে জর্জ ওরয়েল লিখেছিলেন রাজনৈতিক স্যাটায়ার ধর্মী উপন্যাস Animal Farm। তিনি সেখানে সোভিয়েত ব্যবস্থায় মানুষকে খোঁয়াড়ের পশুতে রূপান্তরের সাথে তুলনা করেছেন। বস্তুত পশুর সাথে মানুষের পার্থক্যের জায়গাটা এখানেই। তাঁকে যত উন্নত জীবনের নিশ্চয়তাই দেওয়া হোক না কেন, মানুষ কোন খামার বা বন্দিশালায় বাস করতে চায়না। আবার সব মানুষ একই ভাবে ভাবতে বা চিন্তা করতেও চায় না। মানুষের চিন্তাভাবনার মাঝে রয়েছে বৈচিত্র্যতা এবং ভিন্নতা। দেখা গেছে যে রাষ্ট্র যত বেশী চিন্তার বৈচিত্র্যতা এবং ভিন্নতাকে ধারণ করতে পারে, সে রাষ্ট্র তত বেশী শক্তিশালী।
এ সংক্রান্ত পূর্বের লেখা পড়তে নীচের লিঙ্ক গুলোতে ক্লিক করুনঃ