মতামত

“কিউবার কমিউনিস্ট শাসন কি অবসানের পথে ?”  লেখাটি সম্পর্কে কিছু কথা

-খোরশেদুল ইসলাম

Progotirjatree,com  এ  “কিউবার কমিউনিস্ট শাসন কি অবসানের পথে? -সাঈদ ইফতেখার আহমেদ  জুলাই ১৬, ২০২১ এক  নিবন্ধ লিখেছেন।লেখাটি পড়া শুরু করে ভাবছিলাম,লেখক হয়তো কিউবার প্রগতিশীল জনগনের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইর পক্ষে। তিনি লিখেছেন “সোভিয়েত ইউনিয়ন আর পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি থেকে “সমাজতন্ত্র” যখন বিদায় নিল, তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিল, আমেরিকার ঘরের পাশে থাকা কিউবার পক্ষে তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফিদেল কাস্ত্রো এবং তাঁর সরকারকে ও হয়ত অচিরেই বিদায় নিতে হবে।

 নানাবিধ মার্কিন এবং পশ্চিমা চাপের মাঝে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোটামুটি জনসমর্থন নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় টিকে আছে, সে দেশটিতে হঠাৎ এমন কী ঘটল যে, রাজধানী হাভানাসহ ১৪টি শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসল?

সোভিয়েত আমলে কিউবার অর্থনীতি নির্ভরশীল ছিল সোভিয়েত সাবসিডি এবং সাহায্যের উপর। ফলে, সোভিয়েত পতনের পর দেশটি নিমজ্জিত হয় কঠিন অর্থনৈতিক সঙ্কটে।

এ সঙ্কটে নতুন মাত্রা যোগ করে গেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি কিউবার উপর বহু ধরণের নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন। এর একটি হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কিউবানদের দেশে রেমিট্যান্স পাঠাবার পথ বন্ধ করা। বর্তমান বাইডেন প্রশাসন কিউবার উপর ট্রাম্পের সমস্ত নিষেধাজ্ঞাই বহাল রেখেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিউবানরা বছরে গড়ে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। কিউবার ৬০ শতাংশ পরিবার এ রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীল। নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এ বছর যুক্তরাষ্ট থেকে রেমিট্যান্স কিউবাতে যেতে পারেনি।সাথে যোগ হয়েছে কোভিড মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ।

কোভিড সঙ্কট সমস্যা তৈরি করেছে পর্যটন শিল্পে। বিদেশী পর্যটক না আসবার ফলে দেশের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে ১১ শতাংশ।  উল্লেখ্য, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কিউবা পর্যটন খাত সহ আরো কিছু খাত উন্মুক্ত করে ফরেন কারেন্সি সংগ্রহ করবার জন্য। কেননা, ফরেন কারেন্সি না থাকলে তার পক্ষে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানী করা সম্ভব নয়।

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার ফলে একদিকে রেমিট্যান্স বন্ধ হয়ে যাওয়া; অপরদিকে, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশী পর্যটক না আসবার ফলে কিউবা চরম কারেন্সি সঙ্কটে পড়েছে। এ সঙ্কটের ফলে তার পক্ষে খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানী করা সম্ভব হয়নি, যেটি আজকের  সঙ্কটের মূল কারণ।

খাদ্য সমস্যার পাশাপাশি ওষুধ, জ্বালানী তেল এবং বিদ্যুতের ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এর সবকিছই জনমানসে পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে বিক্ষোভে পরিণত করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবা বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বছরে ২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। আমেরিকা প্রবাসী কিউবানরা যাদের বেশির ভাগ মায়ামি থাকেন, তাঁরা মার্কিন সরকারের সহায়তায় নানাভাবে কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয়। পাশাপাশি কাস্ত্রোকে বহুবার হত্যা প্রচেষ্টাসহ মার্কিন

যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে চেষ্টা করে এসেছে ঘরের পাশ থেকে কমিউনিস্ট সরকারকে উৎখাত করবার।

এই পর্যন্ত লেখক বস্তনিষ্ঠভাবে তথ্য প্রমান দিয়ে আমেরিকার ধারাবাহিক অগণতান্ত্রিক- একতরফা চাপিয়ে দেয়া অবরোধের কথা খুব সুন্দরভাবে বলেছেন।কিন্তু এর পরই লেখকের সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী কথা বের হয়ে আসতে শুরু করলো পরের অধ্যায় গুলোতে। তিনি লিখেছেনঃ-

“ভারত আমেরিকাসহ (পুঁজিবাদী  ও সাম্রাজ্যবাদি) দেশ গুলোতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হলেও তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ধবসের আশঙ্কা কেউ করেনা কিন্তু কিউবা গণচীনসহ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে বিক্ষোভ দেখা দিলে,তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ধবসে পড়বার আশঙ্কা তৈরি হয় কেন? এর মূল কারণ হলো,সমাজতান্ত্রিক দাবিদার দেশগুলি বহু মত এবং পথকে ধারণ করার মতো ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। পরিশেষে তিনি মন্তব্য করেছেন,” কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থা যদি ভিন্ন মতকে প্রকাশ করতে না দেয়, মানুষ সেখানে বিদ্রোহ করবেই।“ কিন্তু লেখক “সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির দাবিদার দেশগুলি বহুমত এবং পথকে ধারণ করার মতো ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি” বলে  যে কথাটি বলেছেন, কিন্তু কেন পারেনি ,সেই সব দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক,ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করলেই বেরিয়ে আসবে কেন ভিন্নমত ও বহুমতকে সমাজতন্ত্র অভিমুখী দেশগুলো আজো ধারণ করতে পারেনি।  ভিন্ন মত প্রকাশ কি বিশ্বের কোন সামন্ততান্ত্রিক দেশে অতীতে প্রচলিত ছিল ? ছিলনা।আর মার্ক্স এর চিন্তা অনুযায়ী উন্নত পুঁজিবাদী দেশেই প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হওয়ার কথা । কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন শিল্প উন্নত দেশেই সমাজতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়নি।রাশিয়া,চীন,ভিভেতনাম,কোরিয়া,কিউবা সবই প্রাক পুঁজিবাদী স্তরে বা পুঁজিবাদী প্রাথমিক স্তরে,সমাজ প্রগতির পথে যাত্রা শুরু করেছে। ইতিহাসতো সব সময় তাত্ত্বিক গুরুদের চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী হুবহু চলেনা!  প্রাচীন গ্রীসের “নগর রাষ্ট্র”  যেখানে বিশ্বে সর্বপ্রথম নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে দেশের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হতো সেখানে “নাগরিক” বলতে কাদের বোঝানো হতো? সমাজের অর্ধেক নারীরা সেখানে অনুপস্থিত ছিল। শ্রমজীবী দাসরা কি তার সদস্য ছিল ? না শুধু দাস মালিক এবং যারা ভূমির মালিক, যারা দাসদের দিয়ে ভূমির কাজ করাত তারাই ছিল নাগরিক,তারাই ভোট দিয়ে সিনেটর বানাতো। সমাজের সামান্য কিছু অভিজাত পরিবার ও গোষ্ঠীছাড়া  কেউ সিনেটের ভেতরে ছিলনা। প্লেটোর বিখ্যাত বই “কমিউনিজম” এ কারা সমাজের নেতা হওয়ার জন্য প্লেটো নির্ধারণ করেছিলেন। দাসদের কোন অধিকার ছিল ? না। দাসদের দেখতে মানুষের মতো মনে হলেও তারা সমাজে কোন অধিকার ভোগ করতোনা। দাসরা সমাজের সদস্য বলে গন্য হতোনা।

দাস যুগ ও সামন্ত যুগে রাজা বাদশাহদের বিরুদ্ধে কোন ভিন্ন মত প্রকাশের সুযোগ ছিলনা বিশ্বের কোথাও।একমাত্র সামন্ত যুগ ভেংগে যখন বণিকদের বানিজ্যের সাথে প্রাথমিকভাবে কারিগর ও তাঁতীদের নিয়ে কারখানা গড়ে তোলার জন্য,সামন্তবাদের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন বণিকরা উদ্যোগ নিল, তাদের কাজের জন্য জনবল সংগ্রহে উদ্যোগি হলে সামন্ত প্রভূরা তাতে বাধা দান করে। সর্ব প্রথম শিল্প বিপ্লবের শুরুতে ইংল্যান্ডে এই বিরোধ শুরু হয়।বণিক ও উঠতি কারখানার উদ্যোক্তারা, ভূমি দাসদের কারখানার শ্রমিক হিসেবে সংগ্রহের জন্য উদ্যোগ নেয়।এই শ্রমিকরাই ছিল বিশ্বের প্রথম স্বাধীন পেশাজীবি। প্রথমদিকে তাদের বিশেষ কোন অধিকার ছিলনা। এরাই আন্দোলন সংগ্রাম করে কাজের ঘন্টা কমায়,নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার আদায় করে এভাবে সমাজে ধনিক বুর্জোয়ারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইর কাছে পরাজিত হয়ে অনেক দাবি মানতে বাধ্য হয়। এভাবেই সমাজ এগুতে থাকে। শ্রমিক শ্রেণির পাশে ক্রমে শিক্ষিত বিবেকবান মানুষরাও দাঁড়াতে শুরু করে। পূঁজিবাদ প্রতিষ্ঠার আগে বিশ্বের কোন দেশেই জনগনের ভোটাধিকার,রাজনৈতিক দল ইত্যাদি ছিলনা। শিল্প কারখানার মালিক ধনিক বুর্জোয়ারা নিজ নিজ দেশে বুর্জোয়া গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করে। মার্ক্স এঙ্গেলসের ‘কমিউনিষ্ট মেনিফেস্টো’তে এই পুঁজিবাদের উত্থান ও তার প্রগতিশীল ভূমিকার বিস্তারিত ব্যাখা আছে, যা আজো পাঠকদের বিস্মিত করে। এই গনতন্ত্রে ধনিক বনিক শিল্পপতিরাই এবং তাদের সমর্থনদানকারী হিসেবে কিছু বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবিরা দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে থাকে । এই বুর্জোয়া গনতন্ত্রই এখন বিশ্বের সবচেয়ে নন্দিত ও প্রশংসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এই বুর্জোয়া বা পুঁজিবাদী গণতন্ত্রে উন্নত দেশের ১% ভাগ ধনী পরিবারের ও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০-১৫% ধনিক শ্রেনির স্বার্থ রক্ষা করে সব আইন কানুন ,বিচার,জেল, ভোট, পার্লামেন্ট, প্রশাসন চালু থাকে। এই বুর্জোয়া গনতন্ত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতি নিম্নবিত্ত,মধ্যবিত্তদের শারিরিক-মানসিক শ্রম বিক্রি করা ছাড়া অস্তিত্ব রক্ষার কোন পথ নেই। মজুরি শ্রম বা শ্রম দাসত্বের উপরই এই সমাজ টিকে আছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানিসহ এমন কোন শিল্পোন্নত পুঁজিবাদী দেশ নেই, যেখানে পুঁজিবাদী সমাজ আছে কিন্তু শ্রমজীবীর উপর পুঁজির শাসন শোষন নির্যাতনের কোন চমৎকার সামাজিক ব্যবস্থা নেই। এই ব্যবস্থায় যারা লেখকের মতো মনে করেন এই সমাজ “ ভিন্নমত ও ভিন্নচিন্তাকে, বৈচিত্রতাকে ধারন করতে পারে” । আচ্ছা, সেই ভিন্নমত ও বৈচিত্র্য কি পুঁজির শোষন নির্যাতন থেকে  শ্রমজীবীদের মুক্ত করে ? না, কক্ষনোই না। সেই ভিন্নমত হলো একই  শোষন নির্যাতন অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা।যখনই সেই ভিন্নমতের শোষন উচ্ছেদ বা বিলুপ্ত করার চেষ্টা হবে সাথে সাথে এই ধনিকদের ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা ক্রোধে পরিণত করবে এবং শোষন ব্যবস্থা উচ্ছেদের যারা উদ্যোগি হয়েছে তাদের উপযুক্ত শাস্তির বা বিচার ছাড়াই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ব্যবস্থা করা হবে। শাসন শোষন চালানোতে আমেরিকার ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মত পার্থক্যে বা বিলেতের লেবার ও কনজারভেটিভদের মতো কেউ এভাবে, কেউ ভিন্নভাবে শোষন চালানোর মত পার্থক্যতে বিশ্বাসি। বুর্জোয়াদের  ভিন্ন দলের বা মতের ক্ষমতায় আসার কারণে, শোষক-শাসকদের মুনাফা একটুও কমবেনা। শ্রেণী হিসেবে একই শ্রেণী ভিন্নভাবে শোষন করবে। সাধারন শ্রমজীবী মানুষ যাদের শ্রমে-ঘামে দেশটা চলে সেই ৯৯% মানুষরা এই পুঁজিবাদী  ও বুর্জোয়াদের “গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায়”কোন অধিকারই পাবেনা। প্রতিটি অধিকার শ্রমজীবীদের লড়াই করে আন্দোলন সংগ্রাম করে বুর্জোয়াদের কাছ থেকে আদায় করে নিতে হবে।

কিন্তু কিউবাসহ গণচীন ও ভিয়েতনামে অর্থাৎ সমাজতন্ত্র অভিমুখি দেশগুলিতে তাদের শোষনহীন ব্যবস্থায় পার্টি নেতৃত্বের দেশ চালনায় ভুল ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু তারা শ্রেণীগতভাবে শ্রমজীবী শ্রেণিরই অংশ, পূঁজিবাদি শোষক শ্রেণির অংশ নয়। তাই সব সময় শোষন বিরোধী সমাজতন্ত্র অভিমুখি আন্দোলনকে ও সেই সব দেশের  গণমানুষকে কোনভাবে উস্কানি দিয়ে বিক্ষোভ করার মাধ্যমে অনেক সময় বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির যোগসাজস থাকে সে দেশের শোষনহীন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধবংস করাই থাকে চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিশ্বের প্রথম শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লব প্যারি কমিউন প্রতিষ্ঠার পর ১৮৭১এ শুধু ফ্রান্সের নয় আশেপাশের সব দেশের রাজা, জমিদাররা সম্মিলিতভাবে কমিউনার্ডদের আক্রমন করে ধবংস করে । কারো মতে ৭ হাজার কারো মতে ২০ হাজারের বেশি কমিউনার্ডকে হত্যা করে। অথচ এই কমিউনার্ডরা মাত্র ৭১ দিনের প্রজাতন্ত্রে   ধর্মীয় কতৃত্ববাদী শাসনের বদলে সামাজিক গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়, যাতে চার্চকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করা যায়। নারীমুক্তি,সমাজ থেকে শিশুশ্রম মুক্ত করা সহ শ্রমজীবিদের স্বার্থে বহু উদ্যোগ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল,যা এইসব শোষক নির্যাতকদের পছন্দ হয়নি। এভাবেই বিশ্বের প্রথম মার্ক্স-এঙ্গেলসের অনুসারিদের শোষনহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ধবংস হয়।

তারপর বিপ্লব ঘটে ১৯১৭ সালে রাশিয়ায়।  লেনিনের নেতৃত্বে রুশ বিপ্লবের পর আমেরিকা,ইংল্যান্ড,ফ্রান্স, জার্মানি,জাপান, ইত্যাদি ১৪টি সাম্রাজ্যবাদি-পুঁজিবাদী দেশ শিশু সোভিয়েতকে আক্রমন করে সোভিয়েত দেশের অধিকাংশ এলাকাই প্রায় দখল করে ফেলেছিল। লেনিন, শ্রমিক কৃষকের লালফৌজ পাঠিয়ে এসব বিদেশি হানাদারদের তাড়িয়েছিলেন। এসবই কি ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতার প্রমান? মাত্র কয়েক দশক আগেও এশিয়া আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার কোন নির্বাচিত সরকারকে পছন্দ না হলেই সাম্রাজ্যবাদি পুঁজিবাদী দেশগুলি সামরিক ক্যু বা অভ্যুত্থান করে সেই দেশের নির্বাচিত সরকারগুলিকে উৎখাত করতো। সেটা সম্ভব না হলে তারা এসব নির্বাচিত নেতাদের হত্যার ব্যবস্থা করতো। এভাবেই চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দেকে,আফ্রিকার  নেতা লুমুম্বাকে, ইন্দিরা গান্ধি,ইরানের প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেক, ইরাকের

সাদ্দাম হোসেন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ বহু দেশের নেতাদের হত্যা বা ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।ভিন্নমত ও পথের অনুসারিদের প্রতি পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদি ও বুর্জোয়া গনতন্ত্রের অনুসারিদের এসব আচরণের ইতিহাস কোন গোপন কাহিনী নয়।বিশ্বব্যাপি সি আই এ’র কাজ নিয়ে গোয়ন্দা কাহিনির চেয়েও থ্রিলার বহু বই আছে,যার সবই সত্য ঘটনার উপর লেখা। ৫০ বছর পর ডি ক্লাসিফাই করা মার্কিন দলিলেই এসব তারা স্বিকার করেছে। বিশ্বে চীন-রাশিয়ার পর সবচাইতে বেশি কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য ছিল মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায়।৫ লক্ষের বেশি কমিউনিষ্টকে সুহার্তোর সামরিক বাহিনি হত্যাকরেছিল,বিনা দোষে।সাম্রাজ্যবাদিরা সুহার্তোকে মদদ দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার জাতির পিতা সুকর্ণকে ক্ষমতাচ্যুত করে সুহার্তোকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল, এই স্বৈরাচারি ৩০ বছর ক্ষমতায় ছি্ল।পারেনি। আজো বিশ্বের চেতনার জগৎ দখল করে আছে সাম্রাজ্যবাদিদের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া।তারাই বিশ্ব মানবতার মানসলোক নির্ধারন করে।প্রাকৃতিক সূর্য ভোরের আলো আনে চারপাশে যতটুকু দেখা যায় শুধু সেইটুকুতে। কিন্তু সারা বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে তা পত্র,পত্রিকা,রেডিও টেলিভিশনে যেসব নিউজ দেখায় এবং তার ভিত্তিতে যেসব ভিউস বা মতামত দেয় তাই সবাইকে প্রভাবিত করে।ডেইলি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে অনেকেই উপাধি দিয়েছেন বিশ্বের সত্যনিষ্ঠ,নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যম হিসেবে।সেই পত্রিকায় “ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের কাছে “গণবিধবংসি মারনাস্ত্র আছে” বলে দিনের পর দিন সম্পাদকীয় পাতায় প্রবন্ধ লিখেছেন,জুডিথ মিলার নামে এক মহিলা সাংবাদিক।এসব নিয়ে কংগ্রেসম্যান, সিনেটররা অনেক কথা বলেছেন।নিউ ইয়র্ক টাইমস এর মতো সত্যবাদি পত্রিকা কি মিথ্যা লিখতে পারে। জাতিসংঘে মার্কিন সেক্রেটারি এক শিশি সেই মারনাস্ত্রের নমুনাও দেখালেন।তারপরও জাতিসংঘের অনুমতি ছাড়াই আমেরিকা একাই ইরাকে বোমা হামলা শুরু করলো। সাদ্দামকে ফাঁসি দিল। লক্ষ লক্ষ সাধারন মানুষ নারী শিশুকে হত্যা করলো, পুরো দেশটা ধবংস করলো। সবশেষে স্বীকার করলো ইরাকে কোন গণ বিধ্বংসী মারনাস্ত্র পাওয়া যায়নি। মার্কিন মন্ত্রীর দেখানো শিশি ছিল ভূয়া। আর নারী সাংবাদিক এতদিন যেসব যুক্তি দেখিয়েছিলো তা সবই ছিল অস্ত্র বিক্রি করার জন্য যুদ্ধ লাগানোর প্রয়োজনীয় কাজ।নারী সাংবাদিক জুডিথ মিলারের কোন শাস্তি হয়েছে?না। শুধু নিউ ইয়র্ক টাইমস তার লেখা এখন আর ছাপেনা। কারণ ছাপানোর যে লক্ষ,বিদেশে যুদ্ধ লাগিয়ে অস্ত্র বিক্রি করা,সেই লক্ষ পূর্ণ হয়েছে। এখনো কি মনে হয় নিউ ইয়র্ক টাইম পত্রিকা চিরসত্যবাদি,বস্তুনিষঠ শ্রেণি নিরপেক্ষ পত্রিকা।এই হল বুর্জুয়া শোষকদের মিডিয়ার রূপ।  এসব সাম্রাজ্যবাদি দেশগুলো, বিশ্বের কোন মুসলিম দেশ যাতে সমাজতন্ত্র ও সাম্যের পথে যেতে না পারে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির রাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসকদের মাধ্যমে সচেষ্ট থাকে। তারাই ইসলামের নামে উগ্র ওয়াহাবি মতবাদ ৪০/৪২ টি মুসলিম দেশে মসজিদ মাদ্রাসা বানিয়ে উগ্রবাদি, জেহাদি ইসলামের প্রচার চালানোর ব্যবস্থা করেছে। এখন বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে মাদ্রাসা আছে।ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা বা উগ্র জাতীয়তাবাদি চেতনা ছড়িয়ে দিয়ে তারা ভিন্ন মত ও বহু  মত-পথের চর্চার পথ প্রায় রুদ্ধ করে দিয়েছে। আর কিছু লেখক ও বুদ্ধিজীবিরা কি সত্যিই এখনো মনে করেন সাম্রাজ্যবাদি-পূঁজিবাদিরা বহু-মত পথে বিশ্বাস করে ?

এই লেখার আরো উদাহরণ নিয়ে আলোচনা বাহুল্য বিধায় এখানেই সমাপ্তি টানছি।

“কিউবার কমিউনিস্ট শাসন কি অবসানের পথে ?”  পড়তে নীচের লিংকে ক্লিক করুন

কিউবার কমিউনিস্ট শাসন কি অবসানের পথে?

খোরশেদুল ইসলাম,একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা।