চলমান সংবাদ

হত্যা মামলায় নিজের যাবজ্জীবনের সাজা অন্যকে খাটানো সেই কুলসুমা গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে একটি হত্যা মামলার আসামি সাজিয়ে নির্দোষ মিনুকে কারাগারে পাঠানো যাবজ্জীবন দন্ড পাওয়া মূল আসামি কুলসুমা আক্তার ওরফে কুলসুমীকে সহযোগিসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) ভোরে নগরের পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন বলেন, কোহিনুর আক্তার নামে এক গৃহকর্মী হত্যা মামলার আসামি কুলসুমী আক্তার কুলসুমা অবস্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় থাকত। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কুলসুমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত তিন বছর ধরে তার হয়ে জেল খেটেছিলেন মিনু আক্তার নামে আরেক নারী। একই অভিযানে কুলসুমীর সহযোগী মর্জিনা আক্তার নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, মোবাইল ফোন নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পোশাককর্মী কোহিনুর বেগমকে হত্যা করা হয়। প্রকৃত আসামি কুলসুমা আক্তার মামলার সাজা হওয়ার আগে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই বছরের ২৬ অক্টোবর কুলসুমা আক্তার ওরফে কুলসুমীকে গ্রেপ্তার করে। ৩১ অক্টোবর রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এক বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুলসুমা জামিনে বের হয়ে আসেন। তার জামিন পাওয়ার প্রায় আট বছর পর মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ওই হত্যা মামলায় আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ডাদেশ দেন। রায়ের দিন কুলসুম আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই সাজার পরোয়ানামূলে ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুমা আক্তারের বদলি হয়ে মিনু আক্তার কারাগারে যান। চলতি বছরের ২১ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পক্ষ থেকে আদালতে একটি আবেদন করা হয়। এই আবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে কারাগারে পাঠানো আসামির সঙ্গে প্রকৃত আসামির মিল নেই। এছাড়া কারা রেজিস্ট্রারে থাকা হাজতি আসামি কুলসুমা ও সাজাভোগকারী আসামির চেহারায় ও ছবির মিল নেই। এ আবেদনের শুনানি শেষে কারাগারে থাকা মিনুকে আদালতে হাজির করে তার জবানবন্দি নেওয়া হয়। তখন তিনি জানান, তার নাম মিনু, তিনি কুলসুমা নন। সন্তানদের ভরণ-পোষণের ‘মিথ্যা আশ্বাসে’ মিনু কুলসুমার হয়ে বদলি সাজা ভোগ করেন জানিয়ে মিনু বলেন, মর্জিনা নামের এক নারী তাকে চাল, ডাল দেবে এবং মিনুর সন্তানদের দেখভালের আশ্বাস দিয়ে মিনুকে জেলে ঢোকান। প্রকৃত আসামি কুলসুমা আক্তারকে তিনি চেনেন না। পরে হাইকোর্ট গত ৭ জুন নিরপরাধ মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে প্রকৃত আসামি কুলসুমাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই কুলসুমাকে গ্রেপ্তারে কাজ করছিল পুলিশ। আসামি না হয়েও তিন বছর সাজা খেটে গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পান নিরপরাধ মিনু। যাদের কারণে প্রায় ৩ বছর জেলে থাকতে হয়েছে, কারাগার থেকে বের হয়ে তাদের বিচারও দাবি করেছিলেন মিনু আক্তার। পরে ২৮ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মিনু। অবশেষে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দন্ড পাওয়া মূল আসামি কুলসুমা আক্তার ওরফে কুলসুমীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

# ২৯.০৭.২০২১ চট্টগ্রাম #