শিল্প সাহিত্য

লীলাবতীর কবিতা

পারিজাত  উপাখ্যান 

পারিজাত,
উপন্যাস অথবা প্রিয় বই,
শেষ না হতে দেয়ার অবাল্য স্বপ্ন,
আমাকে আহত করেছে আগুনিত বার।
অথচ আমার প্রথম প্রেমিক ছিলেন দুঃখবাদের কবি।
তিনিও দুঃস্বাহসী হয়ে বইটিকে আজীবন,
বাঁচিয়ে রাখতে পারেন নি,
ব্যর্থতা নিয়ে,
কেবলমাত্র  ছেষট্টি পৃষ্ঠা অব্দি তিনি ছিলেন।
কি ভীষণ  যন্ত্রনায়  গিয়েছিলো আমার সেসব দিন,
তা বলে বেড়াবার শব্দের যোগাড়,
আমি করতে পারিনি,
সুতরাং  তারা অকথিত, অপ্রকাশিত।
পৃথিবীর সমস্ত পাঁজড় ভাঙা ব্যথা নিয়ে,
আমি পান্না রঙ শাড়িতে আবৃত করেছিলাম,
ব্যাপিত বক্ষ।
তথাপি,
নিশ্চিত  যে ক্ষতি টি আমার হবার ছিলো,
এবার তার কথা হোক।
নির্ধারিত  কালো টিপের যেমন থাকে  নির্দিষ্ট স্থান, চিনহিত একটি কপালের ভূখণ্ড,
ক্ষতিটি তেমনি যৌবনেই এসেছিলো,
নির্দিষ্ট  সময় উল্লেখ করে।
আমি আজ অব্দি সে আলিঙ্গন  ভুলিনি,
তুন্দরের আগুনে ফুলে যাওয়া প্যান কেক ,
কারুর অদেখা নয়,
উত্তাপে,আহ্লাদে আমার ঠোঁট  ভারি হয়েছিলো  অনেকটা  তার ই মতোন।
সদ্য গজানো ঘাসে,ছানা হাঁসটির পুচ্ছে,
ডালিমের ফুলে লেগেছিলো রক্তিম আভা।
তবুও কারুনিক নিষাদ শুধায় আমাদের,
মসৃন করে দেয় নিঃস্বার্থভাবে  রাজপথ,
যে পথে একমাত্র  ডাকপিওন শুন্যতা,
নিদারুন করুনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া,
আসলে কাছে আসা করুনা মাত্র,
এবং খুব সান্নিধ্য দূরত্বের প্রবেশদ্বার।

পারিজাত,
এখন এই মধ্যবয়স্ক শুন্যতা,
পীড়া দেয় খুব,
হাঁটুতে,কনুই এ ব্যথার সাথে জুড়ে দেয় আর ও ব্যথা,
শোকের সাথে যোগ করে তীব্র  শোক।
এই যে বেদনার নামে স্বেছা নির্বাসন,
এর প্রতিটি  অন্ধকার আমার,
নিজস্ব   প্রতিটি বিন্দু, বুদবুদ,
ব্যথিত আকাশ,শুধুই আমার,
ভূবনব্যাপী শব্দহীনতা সেও আমার,
পঁচে যাওয়া টমেটোর ক্ষয়িষ্ণু  স্বাদ,
এমনকি নাসিকা জুড়ে নিঃস্বঙ্গতার  নাকফুল,
নক্ষত্রবিন্দুর মতোন চকচকে  রশ্মি,
ব্যক্তিগতভাবে আমার ই।।

২২আষাঢ় ১৪২৮

স্যালন অথবা বাংলায় সাজঘর…

কি নাওনি?
বলে,আমি নগর  কে শুধাই,
শুধাই এর দূষণ, বালি আর কংক্রিটের  কংকাল কে।
নিষিদ্ধ  হয়েছে যেখানে নরম খাদি শাড়ি,
অংগুরি আর নখে আলতা,
চিবুক জুড়ে অন্ধকার,
নোলকের সোনালী  বৃত্ত।
এদের আদিবাস নারীকেন্দ্রিক,
নাগরিক বাতাসে এরা নিক্ষিপ্ত,
আচ্ছাদনে এরা নির্বাক ভীষণ।
পিচঢালা  পথ পেরুলে,
কিছু চেনা গাছ,এই যেমন জারুল,
ডানে বায়ে ঠিক পুতুল বানানোর ঘর,
নারীকে এখানে বন্ধী করা হয়,
সাজানো হয় বানিজ্যিক চেয়ারে,
এখানে ব্লাশারে টানা হয় অস্তিবিহীন চিবুক,

দান করা হয় দৈত্যাকার চক্ষু,
যে চোখ হতাশ করে পুরো প্রকৃতিকে।
প্রেমিক এখানে  মায়া পেতে মরিয়া,
আর শিশুরা একরাশ স্নেহ,
প্রকৃতি  চায় দেবী,চায় অমিমাংসিত নারী,
কি নিসঠুর এই পুতুল ঘর!
কি অভিসপ্ত এ সাজঘর!
যে নারীর চিবুকের অন্ধকার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে,
চুরি করেছে সরলতা,
দিয়ে গেছে এক গাদা নাগরিক  কুটিলতা,
এখানে সাজঘর জুড়ে আলগা রঙ,
সুগন্ধি  পাওডার,প্রসাধনী,
এখানে কোনো প্রেমিকা নেই,
নেই কোনো মানবী,
এখানে সকলে নাগরিক  প্রতিযোগী..