চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে তরুণ-যুবকরা সবচেয়ে বেশি করোনাক্রান্ত হলেও বয়স্করা মারা যাচ্ছেন বেশি

পরীক্ষার দিকে থেকে উপজেলায় শনাক্তের হার বেশি সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে করোনা। শনাক্তের দিক থেকে প্রতিদিনই রেকর্ড গড়ছে, প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বৃহস্পতিবারের (৮ জুলাই) প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭১৩ জনের শরীরে। শনাক্তের হার ৩৫ শতাংশ। এ নিয়ে সরকারি হিসেবে চট্টগ্রামে মোট ৬২ হাজার ৯১৩ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন মোট ৭৪৪ জন। শনাক্ত ও মৃত্যুর হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরাই বেশি করোনাক্রান্ত হচ্ছেন, তবে বয়স্ক ব্যক্তিরাই করোনায় মারা যাচ্ছেন বেশি। গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৫ মাসে সর্বোচ্চ ৪১৪ জন মারা গেছেন, যাদের বয়স ৬১ থেকে এর উর্ধ্বে। তবে ৩১-৪০ বছর বয়সী সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৬৯৬ জন সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এদিকে নগরের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ উপজেলায়ও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চেয়ে উত্তর চট্টগ্রামের উপজেলায় এ সংক্রমণের হার বেশি। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে জানা যায়, ১ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিনে উপজেলাগুলোতে মোট শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৪৪ জন। এর মধ্যে উত্তর চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ৯৭৭ জন। সংক্রমণের হার ৭৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ২৬৭ জন। সংক্রমণের হার ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার মধ্যে করোনাক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি লোক মারা গেছেন হাটহাজারীতে। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেসব এলাকার লোক বেশি মারা যাচ্ছে, তার মধ্যে হালিশহর রয়েছে সবচেয়ে এগিয়ে। তার ঠিক পরেই আছে কোতোয়ালী এলাকা। সরকারি মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় মারা যাওয়া ৭৪৪ জনের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের শিশু মারা গেছে ৪ জন, ১১-২০ বছর বয়সী মানুষ মারা গেছেন ৬ জন, ২১-৩০ বছর বয়সী ১১ জন, ৩১-৪০ বছর বয়সী ৩৩ জন, ৪১-৫০ বছর বয়সী মানুষ মারা গেছেন ৯৯ জন। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষ মারা গেছেন ১৭৭ জন এবং ৬১ থেকে এর উর্ধ্বে মানুষ মারা গেছেন ৪১৪ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত এক নারীকে ভর্তির পর উধাও হয়ে গেছেন তার স্বামী ও স্বজন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’দিন পর বুধবার (৭ জুলাই) গভীর রাত ১টার দিকে ওই নারী মারা গেছেন। শেষপর্যন্ত তার মরদেহ দাফন করা হয় বেওয়ারিশ হিসেবে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’দিন আগে স্বামী পরিচয়ে একজন আসমা আক্তার (৩৮) নামে ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর থেকে ওই ব্যক্তি অথবা নারীর অন্য কোনো অভিভাবকের হদিস পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে ভর্তির সময় রেকর্ডে স্বামীর নাম মোজাম্মেল হোসেন ও নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ মৌলভীপাড়ায় ঠিকানা লেখা আছে। বুধবার রাতে অবস্থার অবনতি হলে মোজাম্মেলের দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। একপর্যায়ে রোগীর মৃত্যু হয়, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মৃতের স্বামী-স্বজনকে না পাওয়ায় আসমার মরদেহ পুলিশ বেওয়ারিশ হিসেবে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের কাছে হস্তান্তর করে। জনস্বাস্থ্য রক্ষা কমিটি, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়–য়া বলেন, চট্টগ্রামের উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বাড়ছে। এর মধ্যে উত্তর চট্টগ্রামে সংক্রমণ বেশি। এর বেশ কিছু কারণের মধ্যে একটি কারণ হতে পারে, উত্তর চট্টগ্রামের সঙ্গে মহানগরের যাতায়াত অত্যন্ত সহজ। আরেকটি কারণ হতে পারে উত্তর চট্টগ্রামে প্রবাসিদের সংখ্যা দক্ষিণ চট্টগ্রামের চেয়ে বেশি। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানতেও সাধারণ মানুষের মধ্যে অনিহা আরও একটি বড় কারণ হতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সিভাসু ল্যাব কাছে হওয়ায় এসব এলাকার নমুনা পরীক্ষাগুলো খুব সহজে হয়ে থাকে। ফলে সংক্রমণের হারও দৃশ্যমান। অন্যদিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষা ততটা সহজলভ্য নয়। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট আবদুর রব বলেন, হাসপাতালে যেসব রোগী আসছে এরমধ্যে নগরের পাশাপাশি উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ উপজেলা এলাকার রোগী রয়েছে। বেশি সংকটাপন্ন রোগীরাই ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। করোনা সংক্রমণ যে উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার) ২ হাজার ১০৯ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৭১৩ জন করোনায় শনাক্তদের মধ্যে নগরীর ৪৭৭ জন, বিভিন্ন উপজেলার ২৩৬ জন। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী সংক্রমণের হার ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। চট্টগ্রামে মোট শনাক্ত ৬২ হাজার ৯১৩ জনের মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৪৮ হাজার ৭৭২ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা ১৪ হাজার ৪৪১ জন। চট্টগ্রামে করোনায় মারা যাওয়া মোট ৭৪৪ জনের মধ্যে নগরীর ৪৮৬ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার ২৫৮ জন আছেন। প্রসঙ্গত চট্টগ্রামে গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৯ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো ব্যক্তি মারা যান।

# ০৮.০৭.২০২১ চট্টগ্রাম #