চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে শহর-গ্রাম সর্বত্রই করোনা শনাক্ত-মৃত্যুর হার বাড়ছে

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের হার ও মৃত্যুর হার উর্ধমুখি। আগে গ্রামের তুলনায় শহরে সংক্রমণের হার কম থাকলেও এখন গ্রাম-শহর দুটোতেই সংক্রমণের হার ক্রমাগত বাড়ছে। ঈদে শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে উপজেলায় সারাদেশের মানুষের অবাধ যাতায়াতের কারণেই গ্রামে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামের উত্তর জেলা করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষে আছে। জেলার ১৪ উপজেলার মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ করোনা সংক্রমণ হয়েছে উত্তর জেলার ৪ উপজেলাতেই। গত এক সপ্তাহে ধরে উদ্বেগজনক হারে উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণ বাড়ছে- এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড ও মিরসরাই উপজেলায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বেশি। সর্বশেষ গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামের ১১ উপজেলায় ৬২ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ৫০ জনই উত্তর চট্টগ্রামের ৪ উপজেলার। এর আগের দিন উপজেলা পর্যায়ে ৬৯ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। এরমধ্যে ৫৭ জনই উত্তর চট্টগ্রামের ৪ উপজেলার। এই দিন করোনা শনাক্তের হিসেবে প্রথমবারের মতো উপজেলা পর্যায়ে করোনা পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা চট্টগ্রাম মহানগরকে ছাড়িয়ে যায়। সোমবার (২১ জুন) সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৯৯২টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১৯০ জন। এসময়ের মধ্যে করোনায় মারা গেছেন আরও ৪ জন। এই নিয়ে চট্টগ্রামে শনাক্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ৫৬ হাজার ১৭১ জনে। এদের মধ্যে নগরের ৪৪ হাজার ২২৮ জন এবং ১১ হাজার ৯৪৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে করোনায় মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬১ জনে। এদের মধ্যে ৪৬২ জন নগরের এবং ১৯৯ জন উপজেলার বাসিন্দা। এদিকে গত রবিবারের (২০ জুন) প্রতিবেদনে জানা যায়, এদিন উপজেলা পর্যায়ে মোট ৬৯ জন করোনা পজিটিভের মধ্যে ফটিকছড়ির ৩০ জন, হাটহাজারীর ৪ জন, সীতাকুন্ডের ১৩ জন ও মিরসরাইয়ের ১০ জন। এর আগের দুই দিনে ফটিকছড়িতে পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ৩১ জন, হাটহাজারীতে ৩০ জন, সীতাকুন্ডে ২৪ জন ও মিরসরাইয়ে ১৪ জন। গতকাল সোমবার ফটিকছড়ির ২১ জন, হাটহাজারীর ১৫ জন এবং সীতাকুন্ডের ৯ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জেলার ১৪ উপজেলার মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ করোনা সংক্রমণ হয়েছে উত্তর জেলার ৫ উপজেলাতেই। নগর ছাড়া জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৮৮১ জন। কিন্তু সীতাকুন্ড, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া এ ৫ উপজেলায় ৭ হাজার ১৪২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া জেলার মোট মৃত্যুর সংখ্যার প্রায় ৫৫ ভাগ মৃত্যু এ ৫ উপজেলাতে। জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৭ জন, এর মধ্যে এই ৫ উপজেলাতেই মৃত্যুবরণ করেছে ১০৫ জন। হাটহাজারীতে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ২ হাজার ৭০১ জন, মারা গেছেন ৪২ জন। সীতাকুন্ড উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৯ জন, মারা গেছেন ২০ জন। ফটিকছড়ি উপজেলায় শনাক্ত ১২৪২, মারা গেছেন ১৩ জন। মিরসরাইয়ে আক্রান্ত ৫৫২, মারা গেছেন ৬ জন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে পটিয়া উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১৯ জন ও আক্রান্ত হয়েছে ৯৮৬ জন এবং বোয়ালখালী উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১৮ জন ও আক্রান্ত হয়েছেন ৬৯৬ জন। হঠাৎ করে চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি এই চার উপজেলায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘উপজেলাগুলোর মধ্যে ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড ও মিরসরাইয়ে বেশি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে গত কিছুদিন ধরে। ক্ষেত্রবিশেষে শনাক্তের সংখ্যা ওঠানামা করলেও এসব উপজেলায় সংক্রমণ বেশিই হচ্ছে।’ জেলা সিভিল সার্জন বলেন, এই উপজেলাগুলো শহরের সাথে লাগোয়া হওয়ার ফলে শহরে নিয়মিত যাতায়াত আছে এসব এলাকার মানুষের। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার মানুষের আসা-যাওয়া বেশি এই চার উপজেলায়। উত্তর বঙ্গ থেকেও এসব এলাকায় প্রচুর লোকজন কাজ করতে আসে। গ্রামে সংক্রমণ বাড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে- ঈদের সময় শহর থেকে গ্রামের বাড়ি ফেরা।’ তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা রয়েছে। সংক্রমণ রোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং এটা স্থানীয় পর্যায় থেকেই নিশ্চিত করতে হবে।’ # ২১.০৬.২০২১ চট্টগ্রাম #