চলমান সংবাদ

সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, ময়লা অপসারণ না হওয়া, খালে বাঁধ দেয়ায় চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে বৃষ্টিতে

চট্টগ্রামে মৌসুমের টানা ভারি বর্ষণে ডুবে গেছে নগরীর অধিকাংশ এলাকা। হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে ডুবেছে নগরের অলিগলিসহ মূল সড়ক। নগরীর নিচু এলাকায় বুক অবধি পানি দেখা গেছে। সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ ও শ্রমজীবীরা। জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে নগরবাসী দুষছে সেবা সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিদের। তারা বলছেন, সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ও খাল-ড্রেনের ময়লা জমে থাকায় প্রতিবারই বৃষ্টির সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। চসিক বলছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের কাজের জন্য খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি উঠছে। খাল-নালায় আবর্জনাসহ নানা প্রতিবন্ধকতাও জলজটের কারণ। কিন্তু অন্যরা বলছেন, চসিক নগরীর নালা-নর্দমা থেকে সময়মতো ময়লা-আবজর্না অপসারণ না করণে পানি চলাচলে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে সকাল থেকেই টানা ভারী বর্ষণে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল থাকলেও বন্ধ রয়েছে ভেতরে ও বহিঃনোঙ্গরে থাকা পণ্যবাহী পণ্যের খালাস ও ডেলিভারি কার্যক্রম। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। তবে বৃষ্টিতে ভিজে খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় বন্ধ রাখা হয়েছে পণ্যের ডেলিভারি কার্যক্রম। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘ভারী বর্ষণে বন্দরের কাজে কোনো ভাটা পড়েনি। অন্যান্য পণ্যের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। তবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় বন্দরের ভেতরে ও বহিঃনোঙ্গরে থাকা খাদ্যপণ্যভর্তি কন্টেইনারগুলোর খালাস ও ডেলিভারি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টি কমলেই তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’ নগরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রোববার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৯৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এই বৃষ্টিতে নগরীর দুই তৃতীয়াংশ এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানি, এমনকি গলা পানিতেও ডুবে গেছে। প্লাবিত হয় নগরীর অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, সাগরিকা, শুলকবহর, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বহদ্দারহাট, নয়াবাজার, জিইসি, মোগলটুলি, বেপারী পাড়া, সরাইপাড়া, হালিশহর, ঈদগাহ ডিটি রোড, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ ও হালিশহরসহ অনেক জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর কোথাও হাঁটু পরিমাণ আবার কোথাও কোমর পরিমাণ পানিতে সড়ক ডুবে গেছে। এছাড়া নগরীর ফ্লাইওভারগুলোতে পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। পানি উপচে ফ্লাইওভার বেয়ে নীচে পড়ছে। ফ্লাইওভার দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোতে পানি ঢুকে রাস্তার মাঝে বিকল হয়ে আছে অনেক যানবাহন। অপরদিকে, চট্টগ্রামের বৃহৎ পাইকারী ব্যবসাকেন্দ্র চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়েছে। এতে ব্যহত হয় তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম।

মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবারই বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকে। প্রতিবারই আশ্বাস দেয়া হয় কিন্তু কোনো কাজ হয় না। এক সংস্থা আরেক সংস্থাকে দোষারোপ করে। কিন্তু এ নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো সংস্থা কার্যকর উদ্যোগ নেয় না। ফলে প্রতিবছর জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরের দীর্ঘদিনের সমস্যা জলাবদ্ধতা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ, চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশন-চসিক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্প নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি সিডিএর। জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়নে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এখনেও এর কাজ শেষ হয়নি। চসিক বলছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের কাজের জন্য খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি উঠছে। খাল-নালায় আবর্জনাসহ নানা প্রতিবন্ধকতাও জলজটের কারণ। কিন্তু অন্যরা বলছেন, চসিক নগরীর নালা-নর্দমা থেকে সময়মতো ময়লা-আবজর্না অপসারণ না করণে পানি চলাচলে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বহদ্দারহাট মোড়ের স্বজন সুপার মার্কেটের নিচ তলার প্রায় একশ দোকানের সবগুলোতে পানি ঢুকে যায় বলে জানায় মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন লিটন। তিনি বলেন, আমাদের পাশেই সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন একটা মার্কেট আছে নালার ওপর। ওই নালা পরিষ্কার করার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে ময়লা আবর্জনা সরানো যায় না। তাই পানি ওঠে, আমরা খুব কষ্টে আছি। নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় নালা-নর্দমা ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিয়মিত পরিস্কার করে না। কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের অভিযোগ করলেও অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। আসকারদিঘীর পাড় এলাকা কিছুটা উঁচু হওয়ায় সচরাচর এখানে পানি ওঠে না। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় সিডিএ নগরীর বিভিন্ন খালে ও বড় নালায় বাঁধ দেওয়ায় এসব স্থানগুলোও প্লাবিত হয়েছে। চসিক’র প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ টানা বৃষ্টি, জোয়ার এবং বিভিন্ন খালে বাঁঁ দেওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা হয়েছে। বৃষ্টি শুরুর ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই জলাবদ্ধতা হয়েছে। সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের পরিচালক আহমদ মাঈনুদ্দিন বলেন, প্রকল্পের কাজ ৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এই বছর সুফল না মিললে ২০২২ সালে সুফল মিলবে। কাজের জন্য খালে বাঁধ দেয়াতে নগরের কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এদিকে কর্ণফুলী নদীর তীর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার সড়ক ও স্লুইস গেট নির্মাণের আরেকটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৮ শতাংশ। প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ৮টি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে। সব গেটের কাজ শুরু হয়েছে। তিনটি গেট নির্মাণ কাজ শেষ। চাক্তাই খালের মুখের গেটের কাজ শেষ হওয়াতে এবার খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা হচ্ছে না। বাকিগুলোর কাজ শেষ হলে সুফল মিলবে।’ চট্টগ্রামের আবহাওয়া কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, জেলার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়াবিদ ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। চট্টগ্রামে আরো দুইদিন মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। # ০৬.০৬.২০২১ চট্টগ্রাম #