চলমান সংবাদ

সাধারণ মানুষের বাজেট প্রতিক্রিয়া

বাজেটে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ার দিক নির্দেশনা নাই – অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক, বাকবিশিস

এবারের বাজেটে শিক্ষা ব্যয় আরও বাড়বে। কোভিড পরিস্তিতির কারণে বিপর্যস্ত শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে কিভাবে অগ্রসর করা হবে সেলক্ষে কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি। শিক্ষায় বরাদ্দ গতানুগতিকভাবে ১১-১২ % এর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। দক্ষ মানব সম্পদ গড়ার কোন সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা নাই । ব্যবসায়ীদের খুশী করাই বাজেটের মূল লক্ষ্য কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য সেভাবে কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কোভিডের কারণে দরিদ্র হওয়া জনগোষ্টীর জন্য কিছুই রাখা হয়নি।

বাজেট সাধারণ মানুষ এবং মধ্যবিত্তদের জন্য হতাশাজনক – অধ্যাপিকা লতিফা কবীর, নারী নেত্রী

বাজেটে নারী বান্ধব সুনির্দিষ্ট কোন কিছু পরিলক্ষিত হয়নি। শুধু মাত্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এস, এম, ই) খাতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিষেশ প্রণোদনার প্রস্তাব রাখা হয়েছে । বাজেটে মূল প্রস্তাবনায় ব্যবসায়ীদের খুশি করা হয়েছে । কোভিড পরিস্তিতি মোকাবিলার জন্য আলাদাভাবে সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা রাখা হয়নি। শিক্ষা খাতে বাজেট গতানুগতিক । সাধারণ ও মধ্যেবিত্ত মানুষের জন্য বাজেটে হতাশা ছাড়া কিছুই নাই।

প্রস্তাবিত বাজেট: যা বায়ান্ন, তা তেপন্নই” – হাসান ফেরদৌস, সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক

অর্থ বছরের জন্য ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বিশাল বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। বাজেটে কি কি পণ্যের দাম বাড়ছে, কি কি পণ্যের দাম কমছে, বাজেটে সরকারের নির্দেশনা কি থাকছে এসব নিয়ে এক সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহের কমতি ছিল না। এখন আর তেমনটি দেখা যায় না। বাজেট ঘোষণা সরকারের গতানুগতিক কার্যক্রম বলে মনে করেন তারা। কারণ বাজেট ঘোষণার আগেই বেড়ে যায় নিত্য পণ্যের দাম। আবার দেখা যায়, বাজেট ঘোষণার পরও সরকারি সার্র্কূলার জারী করে পণ্যের বাড়িয়ে দেয়া হয়। মাত্র ক’ দিন আগেই বাণিজ্যমন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে ভোজ্য তেলের দাম। লিটারে বেড়েছে প্রায় ১৩ টাকা। একই ভাবে বেড়েছে চাল,ডালসহ নিত্য পণ্যের দাম। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাজেট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। তারা মনে করেন ”যা বায়ান্ন, তা তেপন্নই”। আবার অনেকে মনে করেন বাজেট মানেই ধনীকে ধনী করা, গরীবকে আরো গরীব করার একটি কৌশল। বাজেটের নাম দিয়ে একদিকে যেমন নতুন কর আরোপ করা হয় , তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিশীলতার নামে ধনীদের ছাড় দেয়া, উন্নয়ন কর্মকান্ডের নামে কিছু লোককে রাতা রাতি বড় লোক হওয়ার আইনি বৈধতা দেয়া, দুর্বৃত্তদের লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া হয়।

চুরি, পুকুরচুরি কিংবা লুটের টাকাইতো কালো টাকা –  মোঃ মহিবুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

কালো বিড়াল কুচকুচে কালো ও ভয়ংকর-দর্শন হলেও আসলে কোন বিড়ালই অতটা ভয়ংকর নয় কিন্তু কালো টাকা কুচকুচে কালো কিংবা ভয়ংকর-দর্শন না হলেও সভ্যসমাজের জন্য ভীষণ ভয়ংকর! কয়লা ধূলে যেমন ময়লা যায় না এবং সাদাও হয় না, ঠিক তেমনি কালো টাকাও এক সাগর পানি দিয়ে ধৌত করলেও কখনোই সাদা হবার নয়। চুরি, পুকুরচুরি, ডাকাতি, লুটের টাকাইতো কালো টাকা। রাতের আঁধারে জনগণের টাকা ‘চুরি-ডাকাতি-লুট’ আর দিনের আলোয় সেই টাকায় জনসেবা! এমন দস্যু বনহুর বা রবিনহুডের সংস্কৃতি সভ্য সমাজের জন্যে নয়; বর্বর সমাজের, বুনো সমাজের। কালো টাকা উৎপাদনশীল খাত কিংবা অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহারের সুযোগ দানের মাধ্যমে জনসেবার কল্পনা একটি চরম ভুল বা কল্পনাবিলাস যা শতভাগ আত্মঘাতি। এমন প্রেসক্রিপশান যারা দেন তারাও আসলে ভেতরে ভেতরে পাকাচুর; চুরের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা। ‘চুরে চুরে মাসতুতু ভাই’ সেতো সবারই জানা। কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ পেলে প্রকারান্তরে সমাজে কালো টাকার মালিকদেরই দাপট তৈরী হয়, যা সুশাসন ও সভ্য সমাজ বিনির্মানের প্রকাশ্য অন্তরায়। তাই কালো টাকার মালিকদের চিহ্নিত করে চুর বা ডাকাত হিসাবে পাকড়াও করা হোক এবং জনসমক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নয় বরং কালোটাকার মালিকদের ঘষে ঘষে সাদা (শায়েস্তা) করা হোক। কেননা চুর-ডাকাতের লালন নয়; এদের দমন তথা ‘দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালন’ই সভ্য সমাজের কাজ।

বাজেটে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাত উপেক্ষিত হয়েছে – ডাঃ এ, কে, এম, আরিফ উদ্দিন আহমেদ ফোকাল পার্সন অফ কোভিড ইউনিট ও একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর, ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড, চট্টগ্রাম।

প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে করোনা অতিমারী কালীন শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সংস্কার, আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়নি। যারা করোনা অতিমারীর কারনে চাকরি হারিয়েছেন বা নিঃস্ব হয়েছেন, তাদের জন্য এই বাজেটে কোন পরিকল্পনা নেই। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিৎ ছিল। উপজেলায় ও জেলায় টারসিয়ারি কেয়ার হাসপাতাল বাড়ানোর জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা উচিৎ ছিল। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য এবং দেশে বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করার জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা উচিৎ ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ থেকে করোনার খাত বাদ দিলে, স্বাস্থ্য খাতে তেমন কোন পরিবর্তন নেই। করোনা অতিমারী পরিস্থিতিতে ২০২১/২২ অর্থ বছরের বাজেট সহ আরও একটি বিশেষ বাজেট এর ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল। যাতে বিনা মূল্যে সবার জন্য কোভিড টিকার ব্যবস্থা করা বা যেকোন সময় অতিমারী মারাত্মক আকার ধারণ করলে তা মোকাবেলা করা সহজ হয়। বাজেটে প্রতি মাসে ২৫ লাখ করে কোভিড টিকা দেয়ার পরিকল্পনা আছে কিন্তু মাসে এই হারে টিকা দিলে, ১০ কোটি মানুষকে টিকা দিয়ে শেষ করতে প্রায় সারে তিন বছর সময় লাগবে, কিন্তু চাইলে আরো দ্রুত  এবং বেশী সংখ্যক টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা যেত। অনুজীব বিজ্ঞান, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষা খাতে গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো উচিত ছিল। তাই বলা যায় জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাত উপেক্ষিত হয়েছে।

বাজেটে শ্রমিকদের জন্য কোন বরাদ্দ নেই -মোঃ আশরাফুজ্জামান, গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা

অতিমারী করোনাকালীন সময়ে নাদুস নুদুস মানুষ যখন ছিল ঘরে, তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কারখানায় কাজ করে জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন যে শ্রমিকরা, তাদের সামাজিক সুরক্ষা নেই সুচিকিৎসা নেই। চাকুরীর নিশ্চয়তা নেই। তারপরও প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কারখানা সচল রাখেন ও জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখেন। সেই শ্রমিকদের জন্য বাজেটে কোন বরাদ্দ নেই। এতে শ্রমজীবীরা হতাশ। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে করোনা ঝুঁকি ভাতা প্রদান ও রেশনিং পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত বাজেট শিক্ষাকে মেরুদণ্ডহীন করবে – এনি সেন, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম জেলা

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় প্রকৃতপক্ষে শিক্ষাকে পণ্যায়ণ করার প্রস্তাবই করা হয়েছে। করোনার কারনে গত প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ৷ এই দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত শিক্ষক-কর্মচারীরা বেশ কষ্টে দিনযাপন করছেন। এছাড়াও শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়েছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাব্যবস্থার জন্য নেই কোন আলাদা বরাদ্দ। শিক্ষাখাতে বরাদ্দের প্রস্তাব হয়েছে মোট বাজেটের ১১.৯১% যা মোট জিডিপির ২.০৮%। অথচ আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ২৫% বা মোট জিডিপির ৮% বরাদ্দ দিতে হবে। আমরা আরো লক্ষ্য করেছি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর ১৫% ট্যাক্স প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই অলাভজনক কথাটা কেবল কাগজ কলমে। মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছে একেকটা বড় বড় সুপার মার্কেটে৷ সুনির্দিষ্ট টিউশন ফি নির্ধারণে কোন নীতিমালা না থাকায় এই প্রস্তাবিত ট্যাক্সের চাপ গিয়ে পড়বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর। সর্বোপরি এই বাজেট প্রস্তাব কোনভাবেই শিক্ষাবান্ধব বাজেট বলা যায়না। বরং এই বাজেট শিক্ষাকে মেরুদণ্ডহীন করে দেয়ারই প্রস্তাব৷