চলমান সংবাদ

খালে দেওয়া অস্থায়ী বাঁধের কারণে আসন্ন বর্ষায় নগরী ডুবে যাওয়ার আশংকা মেয়রের

 জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন খালে দেওয়া অস্থায়ী বাঁধের কারণে আসন্ন বর্ষায় চট্টগ্রাম নগরী গলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্পের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। মেগা প্রকল্পের কাজের কারণে সমস্ত বড় নালা,খালে বাঁধ রয়েছে। ফলে পানিবদ্ধ অবস্থায় আছে। খালে দেওয়া বাঁধের কারণে ময়লা-আবর্জনা জমে ব্যাপক জলাবদ্ধতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন খালে দেওয়া অস্থায়ী বাঁধ অপসারণ করতে হবে বলে জানান মেয়র। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দুপুরে নগরীর আন্দরকিল্লায় পুরোনো নগর ভবনের কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচির অগ্রগতি জানাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়। ঘোষিত ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামে মশা নিধনে ব্যর্থতার দায়ভার নগরবাসী ও সিডিএ’র ওপর চাপিয়ে মেয়র বলেন, নাগরিক অসচেতনতার কারণে যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা ও সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে খালের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দেওয়ায় জমাট পানি মশা প্রজননের উৎসক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। নালা-নর্দমা, খালের পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতায় মশার উৎপাত বেড়েছে। মশক নিধন অভিযানে প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ জন শ্রমিক ফগার স্প্রে ও ৫ জন শ্রমিক হ্যান্ড স্প্রে’র মাধ্যমে তরল ওষুধ ছিটানোর কাজে নিয়োজিত ছিল। নাগরিক অসচেতনতার কারণে এর অশানুরূপ ফলাফল আসেনি। তাই ওষুধ ছিটিয়েও কোনো কাজ হয়নি। মশা নিধনে তরল ওষুধের কার্যকারিতা নিরূপণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মেয়র বলেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি চসিকের ১ হাজার কোটি টাকার দেনা ও নানাবিধ সমস্যা নিয়ে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করি। এরপর ১০০ দিনের জনগুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম (ক্রাশ প্রোগ্রাম) পরিচালনা করি। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ৩ ফুটের বেশি প্রশস্ত নালা ও খাল পরিষ্কার এবং পানি প্রবাহ রক্ষার সামগ্রিক দায়িত্ব সিডিএ’র হলেও মশার প্রজনন বৃদ্ধি রোধ ও পানি প্রবাহের স্বার্থে অনেক বড় নালা ও খাল থেকে চসিক মাটি উত্তোলনসহ আবর্জনা পরিষ্কার করেছে। ২ হাজার ১২০ ট্রিপে ১০ হাজার ৬০০ টন আবর্জনা ডাম্পিং করা হয়েছে। নগর আলোকায়নে শতভাগ সফল জানিয়ে মেয়র বলেন, বিদ্যুৎ উপ-বিভাগের অধীনে নগরীতে আলোকায়নে ৩০টি রাস্তার ৭৬ কিলোমিটার অংশে পোল বসিয়ে এলইডি বাতি স্থাপন করা হয়েছে। এতে পোল সংখ্যা ২ হাজার ৯৬০টি এবং এলইডি বাতির সংখ্যা ৪ হাজার ১১টি। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চসিকের ৩৩ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে আনুতোষিকের ৬৭ লাখ ২৫ হাজার ১১০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ঠিকাদারদের পাওনা বকেয়া বিল থেকে ২২ কোটি ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬০ টাকা, সড়কবাতির ১ কোটি ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৬ টাকা ও বিভিন্ন স্থাপনার ২ কোটি ৩৮ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৪ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। চসিকের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে ৫টি আয়বর্ধক প্রকল্পের নকশা আহ্বান করা হয়েছে, আরও ৩৭টি প্রকল্পের বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ৯০ ভাগ সাফল্যের দাবিও করেছেন মেয়র। মেয়রের জন্য কোটি টাকা দামের নতুন গাড়ি কেনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, গাড়ি কিনতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু এই গাড়ি নিয়ে চারবার পথে আটকে গেছি। দরপত্র দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনো গাড়ি কেনার অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, রাজনীতি করে এই পদে এসেছি। প্রয়োজনে ট্যাক্সি নিয়েও আসতে পারব। সমস্যা নেই। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অনিয়ম প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র রেজাউল বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অতীতের অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কেউ কেউ তথ্য-উপাত্তবিহীন ও ভিত্তিহীন বিভিন্ন অপপ্রচার করছে। মেয়র বলেন, আমার ১০০ দিনের কার্যক্রমে কাউকে নগরীর কোন ফুটপাত বা জায়গা ইজারা দেইনি। কাউকে কোন বিলবোর্ডও লাগানোর অনুমতি দেয়া হয় নাই, যা দেয়া হয়েছে তা পূর্বে। আগামীতেও কোন অন্যায়কারী দখলবাজ আমার কাছে প্রশ্রয় পাবে না। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিক প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, আব্দুস সবুর লিটন, আফরোজা কালাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস প্রমুখ। # ০৩.০৬.২০২১ চট্টগ্রাম #