চলমান সংবাদ

হালদায় আবারও ডিম ছাড়ছে মা-মাছ, আশায় বুক বেঁধেছেন ডিম আহরণকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদার পাড় আবারও উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে পূর্ণ ডিম ছেড়েছে মা মাছ। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে ডিম ছাড়া শুরু হয়। এর আগে দুপুর থেকে আবারও নৌকা নিয়ে নদীতে নামেন ডিম আহরণকারীরা। কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, নদীর পানিতে লবনাক্ততা কমায় ও মেঘলা আকাশের কারণে হালদায় মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। এতে আশায় বুক বেঁধেছেন ডিম আহরণকারীরা। এর আগে গত ২৭ মে মধ্যরাতে হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়ে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্নিমার প্রভাবে হালদায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করায় মা-মাছ পর্যাপ্ত ডিম ছাড়েনি। যে পরিমান ডিম ছেড়েছে তার বেশিরভাগ ডিম লবনাক্ততার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় ৩০০ নৌকা ও ১ হাজারের বেশি ডিম আহরণকারী মিলে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার কেজির মত ডিম সংগ্রহ করেন। যা বিগত কয়েকবছরের মধ্যে সবচে কম। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন ডিম সংগ্রহকারীরা। এছাড়া নদীর পানিতে লবনাক্ততা ও হ্যাচারি অব্যবস্থাপনার কারণে সংগ্রহ করা অধিকাংশ ডিম নষ্ট হয়ে যায়। গত দুদিন ধরে বৃষ্টি ও হালদায় পাহাড়ি ঢল নামায় হালদার বিভিন্নস্থানে বেড়েছে মা মাছের আনাগোনা। মঙ্গলবার (১ জুন) চট্টগ্রামে ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে, সাথে ছিল বজ্রপাতও। আর সাথে পাহাড়ি ঢল আশা জাগিয়েছে, গত পূর্ণিমা তিথির ডিম শূন্যতা কাটতে যাচ্ছে এবার। এই আশায় আবারও নদীতে নৌকা ভাসান ডিম আহরণকারীরা। বুধবার সকাল থেকে হালদা নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশের আজিমের ঘাট, অংকুরি ঘোনা, কাগতিয়ার মুখ, গড়দুয়ারা নয়াহাট, রাম দাশ মুন্সির ঘাট, নাপিতের ঘোনা, মাছুয়া ঘোনা, নয়াহাট, কাগতিয়া, উত্তর মাদার্শা’সহ বিভিন্নস্থানে মাছের আনাগোনা বাড়ায় শতাধিক ডিম আহরণকারী নৌকা নিয়ে ডিমের অপেক্ষা করতে থাকেন। অনেকে নমুনা ডিমও সংগ্রহ করেন। মা মাছের নমুনা ডিম ছাড়ার পর বিকেলে জোয়ারের সময় পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়ার আশায় নৌকা ও ডিম আহরণ সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন ডিম সংগ্রহকারীরা। হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, নদীর পানির লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় প্রথম ধাপে মা মাছ আশানুরূপ ডিম ছাড়েনি। স্বাভাবিকের চেয়ে ৭২ শতাংশ লবণাক্ত পানি থাকায় ডিম সংগ্রহ কম হয়েছে। এক সপ্তাহ পর ঝুম বৃষ্টিতে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে মা মাছ পূর্ণ ডিম ছেড়েছে। নদীতে লবণাক্ততা কমেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হালদায় লবণাক্ততা কমে স্বাভাবিক হয়েছে। বর্তমানে লবণাক্ততার পরিমাণ ০.০৬ পিপিটি। যা একেবারেই স্বাভাবিক।’ হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘গত দুইদিনের বৃষ্টিতে হালদায় পাহাড়ি ঢল নেমেছে। পানিও ঘোলাটে। বিভিন্নস্থানে মা মাছের আনাগোনাও বেড়েছে। দুপুর থেকে আমরা হালদায় আছি। ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছে। অনেকে নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছেন। তারা পর্যপ্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। নদী গবেষক অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘মা মাছের ডিম ছাড়ার জন্য অতি অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন হয়। হালদার পানি প্রতিবেশের ভৌত-রাসায়নিক বিভিন্ন মানদন্ড প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মাছের ডিম ছাড়া, ডিম প্রাপ্তি নির্ভর করে। এবার কাঙ্খিত মাত্রায় বৃষ্টি হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘উজানে বৃষ্টির স্বাদু পানির প্রবাহের ¯্রােত, মেঘের কাঙ্খিত গর্জন, বাতাসের ঝাপটা প্রবাহ, পানির স্রোত এবং ঘূর্ণি, কার্প মাছের ডিম ছাড়তে প্রভাবিত করে। # ০২.০৬.২০২১ চট্টগ্রাম #