চলমান সংবাদ

কোভিড: করোনা ভাইরাস অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে মৃদু হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা

একজন স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ আক্রান্ত একটি শিশুকে সেবা করছেন।
ডব্লিউএইচও বলছে, অমিক্রন বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে

করোনাভাইরাসের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে মৃদু হিসাবে বিবেচনা করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও বলছে যে এই ধরণে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে আগের কোভিড ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় অমিক্রনে মানুষের গুরুতরভাবে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কম।

তবে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ সম্প্রতি শনাক্ত এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বড় ধরণের চাপের মুখে ফেলেছে বলে জানাচ্ছেন ডব্লিউএইচও-এর প্রধান ড. টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস।

সোমবারের প্রকাশ করা তথ্যে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।

জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএইচও জানিয়েছে যে গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, আর কেবল আমেরিকাতেই বৃদ্ধি পেয়েছে ১০০ শতাংশ। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বব্যাপী যারা করোনাভাইরাসে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৯০ শতাংশ কোন টিকা নেননি।

“যদিও অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি ডেল্টার তুলনায় কম গুরুতর বলে মনে করা হচ্ছে, বিশেষ করে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের জন্য, কিন্তু এর মানে এই নয় যে এই ভ্যারিয়েন্টটিকে মৃদু হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হবে,” বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ড. গেব্রেইসাস এমন কথা বলেন।

“আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর মতোই, অমিক্রনে আক্রান্ত মানুষদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে এবং এর প্রভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে।”

ডব্লিউএইচও প্রধানআরও বলেন, “মূলত আক্রান্তের এই ঢেউ এতোই বিশাল এবং এতোটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যে এটি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে প্রবল চাপের মুখে ফেলেছে।”

ফ্রান্সে কোভিড পরীক্ষার জন্য মানুষের লাইন।
সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সে কোভিডে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেয়েছে

অমিক্রন অত্যন্ত সংক্রামক এবং দুই ডোজ টিকা দেওয়া হলেও মানুষ এতে সংক্রমিত হতে পারে। এরপরও ভ্যাকসিন দেয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে আপনার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে, ফলে আপনার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আশঙ্কা কমবে, বলছেন ড. গেব্রেইসাস।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে ১৭৯,৭৫৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে রিপোর্ট করা হয়েছে এবং ওই দিন ২৩১ জন কোভিডের নানা জটিলতায় মারা গিয়েছেন। কোভিডের কারণে কর্মীদের অনুপস্থিতি এবং ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে “গুরুতর পরিস্থিতি” ঘোষণা করা হয়েছে।

অন্যত্র, হাসপাতালের সংখ্যাও বাড়ছে। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভিয়ার ভেরান এই সপ্তাহে সতর্ক করেছেন যে জানুয়ারি মাসে হাসপাতালগুলোকে বেশ কঠিন সময় পার করতে হবে।

তিনি আরও বলেছেন যে অমিক্রনে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা নিলেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সময় আইসিইউ-তে রোগীর চাপ অনেক বেশি ছিল। ফ্রান্স বৃহস্পতিবার ২৬১,০০০ জনের আক্রান্তের খবর রিপোর্ট করেছে।

সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচ বলেছেন, দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত চাপের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দেশটিতে নয় হাজারের বেশি আক্রান্তের তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে।

দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোকে সহায়তা করতে সেখানকার মানুষদের মধ্যে বড় আকারে টিকা বিতরণের আহ্বান জানিয়েছেন ড. গেব্রেইসাস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে বিশ্বের ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণরূপে টিকার আওতায় আনা। তবে ভ্যাকসিন বিতরণের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচও প্রধান ধারনা করছেন যে ১০৯টি দেশ এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না।

গত বছর ড. গেব্রেইসাস বলেছিলেন যে ২০২২ সালে পুরো বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য কোভিড ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত ডোজ থাকবে – যদি পশ্চিমা দেশগুলো বুস্টার ডোজ কর্মসূচির জন্য তাদের কাছে ভ্যাকসিন মজুদ করে না রাখে।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা