চলমান সংবাদ

পেনিনসুলায় তিনদিনের পর্যটন মেলা শুরু

দেশের উন্নয়নে পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, ২০২১ সালে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো মাতিয়ে রেখেছিলেন দেশি পর্যটকেরা। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে পেনিনসুলা হোটেলের জিনিয়া হলে ১২তম চিটাগাং ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পর্যটন খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতু, মেরিন ড্রাইভ, ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন এগুলো পর্যটক আকর্ষণ করবে। অতিথি পাখিরা আমাদের দেশের প্রকৃতির টানে আসে। পর্যটকও আসবেন। সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। সবাই মিলে কাজ করতে হবে। দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরতে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে সারা বিশ্বে পর্যটক কমেছে। আমাদেরও কমেছে। দুই বছর কোভিডের মধ্যেও বিমান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমরা চেষ্টা করেছি। থার্ড টার্মিনালের কাজ একদিনের জন্যও বন্ধ ছিল না। থাইল্যান্ডের দেখাদেখি মালদ্বীপ ট্যুরিজম ডেভেলপ করেছে। আরব দেশগুলো ট্যুরিজমকে এগিয়ে নিতে কাজ করেছে। ভারতও এগিয়েছে। আমরাও দ্রুততম সময়ে অনেক কাভার করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা অপার। পর্যটনের উপাদান সাগর, নদী, পাহাড়, বন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আমাদের রয়েছে৷ কক্সবাজার, সুন্দরবন আছে আমাদের। এক হাজার ৭০০ পর্যটন স্পট রয়েছে আমাদের। প্রয়োজন পরিকল্পিতভাবে এসব পর্যটন স্পটকে বিশ্বে জনপ্রিয় করে তোলা। জাতির পিতা এ খাতের বিকাশে পর্যটন করপোরেশন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এ খাতের বিকাশে অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন, মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চেম্বার সভাপতির উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সব ধরনের বড় বিমান নামতে পারবে, সে লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। এ বিমানবন্দরে বড় টার্মিনাল হবে। প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন- মেট্রোরেল হবে চট্টগ্রামে। বঙ্গবন্ধু টানেল তো হয়ে যাচ্ছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ছোট বিচ্ছিন্ন ঘটনা ফলাও করে প্রচার করলে পর্যটন খাতের ক্ষতি হতে পারে। বিদেশিদের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের সিইও জাবেদ আহমেদ ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। জাবেদ আহমেদ বলেন, টুরিজম ডেভেলপমেন্টে কানেকটিভিটির বিকল্প নেই। সরকার দৃশ্যমান অনেক কাজ করেছে এ খাতে। ২০১৯ সালে সাড়ে ৩ লাখ বিদেশি ট্যুরিস্ট এসেছিল দেশে। এরপর করোনা শুরু হলো। সম্প্রতি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশি পর্যটক ৪ কোটিতে উন্নীত হলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে। আমাদের দেশি-বিদেশি প্রচুর বিনিয়োগ দরকার পর্যটন হাবে। তাহলে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ বাড়বে। সাজেকের বিকল্প হিসেবে খাগড়াছড়ি ও সেন্টমার্টিনের বিকল্প হিসেবে সোনাদিয়াকে গড়ে তুলতে হবে। সাবরাংয়ে বিদেশি পর্যটকদের জন্য আলাদা জোন হচ্ছে। আমাদের ফ্লাইট ও হোটেল রুমের ভাড়া কমাতে হবে। এ সেক্টরে এখন ৩৫ লাখ মানুষ কাজ করে, প্রায় দেড় কোটি মানুষ এ সেক্টরের ওপর জড়িত। মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম সব ধর্মের তীর্থস্থান। বার আউলিয়া, চন্দ্রনাথ ধাম, কক্সবাজারের বৌদ্ধমন্দির রয়েছে। ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে প্রচুর পর্যটক আসবে। বিমান প্রতিমন্ত্রী মাটি ও মানুষের নেতা। ট্যুরিজমের বেশি আকর্ষণীয় জায়গা শ্রীমঙ্গল, কুয়াকাটা, রাঙামাটির সাজেক, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, সীতাকুণ্ড। সিলেট-চট্টগ্রামের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক আছে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এমিরেটসের বড় ফ্লাইট নামার রানওয়ে নেই। কানেক্টিভিটি ছাড়া ট্যুরিজম সেক্টর ডেভলপ করবে না। সিকিউরিটি দিতে পারলে পর্যটন বাড়বে পার্বত্য জেলায়। এ বিষয়ে সিরিয়াসলি কাজ করতে হবে। বান্দরবানে আকাশের মেঘ হাতে ছোঁয়া যায়। দুইটা সড়ক থাকা উচিত। বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রবাসীর জন্য শাহ আমানত বিমানবন্দরে পিসিআর মেশিন বসানোয় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান চেম্বার সভাপতি। মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রামে এ মেলা করছি। করোনার জন্য দুইবছর করতে পারিনি। চট্টগ্রামের বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক ডেসটিনেশন এখনও পুরোপুরি করতে পারিনি। পর্যটনকে বিকশিত দেখতে চাই। দুর্যোগ সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে দেয়। হতাশ হলে চলবে না। আশা সঞ্চার করতে হবে। হার মেনে বসে থাকলে বেশি দূর এগোতে পারব না। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত৷ তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দেশে ট্রাভেলের ৪০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন বলেন, অভ্যন্তরীণ পর্যটক বাড়ছে কক্সবাজারে। সেখানে দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর হচ্ছে, ফ্লাইট বাড়ছে, ট্রেন যোগাযোগ চালু হচ্ছে। নভেম্বরে ফ্লাই ডাইনিং চালু হয়েছে। চট্টগ্রামও পিছিয়ে নেই। তিনদিনের মেলায় এয়ারলাইন্স, ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল-মোটেল, বিদেশে চিকিৎসাসেবার ২৬টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
# ০৬.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #