চলমান সংবাদ

গণপরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ চট্টগ্রাম বন্দরে স্থবিরতা, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সারাদেশের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামেও বাসসহ বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ আছে। পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে স্থবিরতা বিরাজ করছে। কনটেইনার খালাস ও ডিপোতে আসা-যাওয়া স্বাভাবিক থাকলেও খোলা পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় শহর ছেড়ে যেতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের। ট্রেনে রুটে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। অঘোষিত ‘ধর্মঘটে’র কারণে শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন নিমতলাসহ আশপাশের এলাকায় ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানগুলো অলস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সকাল থেকেই আমদানি করা পণ্য ডেলিভারি নিতে কোনো ট্রাক-কার্ভাড ভ্যান ও লরি বন্দরে ঢুকতে পারেনি। তেমনি বন্দরে ঢোকা গাড়িগুলোও সকালে বন্দর থেকে বের হতে পারেনি। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্দরের জেটিতে জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস অব্যাহত আছে। রফতানি কনটেইনারও জাহাজে তোলা হচ্ছে। তবে ইয়ার্ডে কনটেইনার ও খোলা পণ্যবোঝাই জাহাজ থেকে পণ্য নেওয়ার জন্য সকাল থেকে কোনো পরিবহন প্রবেশ না করায় কার্যত বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা তৈরি হয়। এ অবস্থায় বন্দরে কনটেইনার জট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি ছাড়াও বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলো থেকে রফতানি কনটেইনারও যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি ও রফতানি কনটেইনার প্রবেশ বন্ধ থাকলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। রফতানি পণ্য ছাড়াই জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগে বাধ্য হলে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে। শিল্প-কারখানায় কাঁচামালের সংকট তৈরি হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরের কার্যক্রমে কোনো সমস্যা নেই। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় অ্যাসাইনমেন্টও কম থাকে। যেটুকু থাকে, সেগুলোও যাচ্ছে না। তবে জাহাজে কনটেইনার ওঠানামা ও ডিপোতে নিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক আছে। খোলা কার্গো না যাওয়ায় সংকট হচ্ছে। বন্দরের কনটেইনারের ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার। দুই-তিন দিন ডেলিভারি বন্ধ থাকলে ইয়ার্ডে বড়ো ধরনের জট তৈরি হবে।’ এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া বেশিরভাগই গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুযোগ নিচ্ছে প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশাগুলো। পরিবহন সংকট ও বাড়তি ভাড়ার খপ্পরে পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে শুক্রবার (৫ অক্টোবর) ছুটির দিন হওয়ায় যাত্রী সংখ্যা অন্যদিনের তুলনায় কম ছিল। শুক্রবার সরেজমিনে নগরের দেওয়ানহাট, ঈদগাঁ, অলংকার মোড়, এ কে খান মোড় ঘুরে দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সীমিত আকারে বাস-ট্রাক চললেও সংখ্যায় তা খুবই নগণ্য। নগরের বিভিন্ন রুটে কিছু টেম্পু চললেও তারা আদায় করছে বাড়তি ভাড়া। সে সঙ্গে পরিবহন সংকটে বিপাকে পড়েছে শত শত মানুষ। নিরুপায় হয়ে কেউ পিকআপ, কেউ বাইকে আবার কেউ বা প্রাইভেটকারে গন্তব্যে ছুটে যেতে দেখা যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মোহাম্মদ মুসা বরেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী ৬৮ রুটের বাসও বন্ধ আছে। এছাড়া উপজেলা ও আঞ্চলিক রুটের বাসও চলছে না। এটি কোনো ঘোষিত ধর্মঘট নয়। শ্রমিকরাও বাস বন্ধ করেনি। এটি মালিকপক্ষের সিদ্ধান্ত। মালিকরা বলছেন, হঠাৎ করে যেভাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, তাতে খরচ এত বেড়েছে যে বিদ্যমান ভাড়ায় তারা আর গাড়ি চালাতে পারবেন না। তাদের লস হবে। তারা ডিজেলও কিনতে পারছেন না। এজন্য মালিকপক্ষ বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে আন্তঃজেলার ৫০টি রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল আমরা বন্ধ রেখেছি। প্রতি কিলোমিটারে ২৫ পয়সা করে জ্বালানি খরচ বেড়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাওয়া-আসায় একটি বাসের ১০০ লিটার তেল লাগে। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর ফুয়েলে খরচ বেড়েছে অন্তঃত দেড় হাজার টাকা। এই বাড়তি খরচের একটা সমাধান তো আসতে হবে। সরকার বলছে, বাস ভাড়া বাড়াবে। কিন্তু সেটি না হওয়া পর্যন্ত আমরা তো লস দিয়ে চালাতে পারি না।’ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে ১৫টি রুটে বাস, ১৭টি রুটে হিউম্যান হলার এবং ২১টি রুটে অটোটেম্পু বন্ধ আছে। কিছু অটোটেম্পু কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকার দিকে চলাচল করছে। এর বাইরে সব পরিবহন বন্ধ আছে।
# ০৫.১১.২০২১ চট্টগ্রাম #