চলমান সংবাদ

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা বাতিল করেনি আদালত

 

মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পান ।
মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পান ।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা বাতিলের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত।

এর ফলে তার বিরুদ্ধে শ্রম আইনে মামলা চলবে বলে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট থেকে যে রায় দেয়া হয়েছিল তার মর্মার্থ হচ্ছে, যে এই পর্যায়ে এসে এই মামলা বাতিল করা যাবে না।

মামলা বর্তমানে অভিযোগ গঠন পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আগামী জুন মাসের ৫-৬ তারিখ এই মামলার পরবর্তি শুনানি রয়েছে। এদিন মামলার অভিযোগ গঠন করার কথা রয়েছে।

২০২১ সালের ০৯ই সেপ্টেম্বরে শ্রম আইন লংঘনের অভিযোগ তুলে ঢাকার শ্রম আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের একজন শ্রম পরিদর্শক বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।

এই মামলার অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ না দেয়া, বেশ কয়েক জন শ্রমিকের চাকুরী স্থায়ী না করা এবং গণছুটি না দেয়া। তবে কতজন শ্রমিক এর সাথে জড়িত তা সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।

মি. ইউনূসের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বিবিসিকে বলেন, মামলা বাতিল চেয়ে করা ‘লিভ টু আপীল’ আবেদনটি হাইকোর্টের মতো আপিল বিভাগেও বাতিল করা হয়েছে।

মি. ইউনূসের সাথে আরো যে কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা বাতিলের আবেদনও খারিজ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা চালু করেন মুহাম্মদ ইউনূস
বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা চালু করেন মুহাম্মদ ইউনূস

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়েরের পর গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের চার জন সদস্যের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর একটি অভিযোগ দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশনে।

এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করতে তিন সদস্যের একটি টিমও গঠন করেছিল দুদক।

সেসময় দুদক জানিয়েছিল যে, গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তা হলো, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ লোপাট করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের সময় অবৈধভাবে আইনজীবীর ফিসহ অন্যান্য ফিয়ের নামে ছয় শতাংশ অর্থ কেটে নেয়া, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি থেকে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর এবং শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ করা।

এর আগে ২০১৭ সালে গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ জন কর্মচারী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ১১০টি মামলা দায়ের করেছিল। এরমধ্যে শ্রম আদালতে ১০৪টি এবং হাইকোর্টে ০৬টি।

সব মিলিয়ে মোট ৪৩৭ কোটি টাকা দাবি করে মামলা করেছিলেন ওই শ্রমিকরা। প্রায় পাঁচ বছর ধরে মামলা চলার পর ২০২২ সালের মে মাসে আদালতের বাইরে সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে ১১০টি মামলার সবকটি প্রত্যাহার করা হয়।

এর আগে ২০১১ সালে অবসর গ্রহণের সময়সীমা নিয়ে এক বিতর্কের পর গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. মুহম্মদ ইউনূসকে অপসারণ করা হয়।

২০০৬ সালে নোবেল পুরষ্কার পান মি. ইউনূস
২০০৬ সালে নোবেল পুরষ্কার পান মি. ইউনূস

যা বলছে বাদীপক্ষ

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, বিবাদী পক্ষ থেকে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছিলে যে, শ্রম আদালতে যে মামলা হয়েছে সেটির ভিত্তি নেই।

আদালত বলেছে যে, মামলাটি বিশেষ আইনে করা হয়েছে বলে এটি চলতে পারে।

এ বিষয়ে বিবাদী পক্ষের কোন যুক্তি থাকলে সেটি বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় তুলে ধরতে বলা হয়েছে।

শ্রম আইন অনুযায়ী, মামলাটি অপরাধ সংগঠনের ছয় মাসের মধ্যেই করা হয়েছে উল্লেখ করেন মি. খান।

মি. ইউনূসের আইনজীবী যা বলছেন

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করে বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এবং তার সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেটি সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে সেটিকে দাবিয়ে রাখার জন্য, বিভ্রান্ত করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে।

“এই মামলা করা হয়েছে উনাকে হ্যারাসমেন্ট করার জন্য।”

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের অগাস্টে হাইকোর্ট এটা প্রত্যাখ্যান করার পর সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। এই আপিলের রায়ে আজ হাইকোর্টের রায়ই বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।

“এখন আমাদের দুইটা পথ, হয় আমরা রিভিউতে যাওয়া, অথবা নিম্ন আদালতে আপিল ফেইস করা,” বলেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে রিভিউতে না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানিয়েছেন মি. মামুন।

# সূত্রঃ বিবিসি বাংলা