চলমান সংবাদ

খাড়াভাবে পাহাড় কেটে নির্মাণ করা সড়কটি এখন মরণফাঁদ !

খাড়াভাবে পাহড় কেটে নির্মিত বায়েজিদ লিঙ্ক রোড

পাহাড় কেটে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র বানানো ফৌজদারহাট-বায়েজিদ সংযোগ সড়কটি এখন ওই সড়কে চলাচলকারীদের জন্য মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়মনীতির তোয়ক্কা না করে, কোন অনুমোদন না নিয়ে খাড়াভাবে পাহাড় কেটে বানানো রাস্তাটি পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশংকায় তিনমাসের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে সিডিএ। ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮টি পাহাড় কেটে ৩২২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণ করে সিডিএ। এর জন্য তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিমানা গুনেছে ১০ কোটি টাকা। আবারও পাহাড় কাটতে চায় সিডিএ। অথচ বৃষ্টি হলেই ঝুঁকি এড়াতে বন্ধ রাখা হচ্ছে এ সড়ক। সিডিএ’র এমন কান্ডে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সিডিএ সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট টোল রোডের মুখ থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে সিডিএ। এই সংযোগ সড়ক নির্মাণে দুই পাশের পাহাড় ৯০ ডিগ্রি খাড়া করে কাটায় যে কোনো সময় ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে একটি রেলওয়ে ওভারব্রিজ, ছয়টি ব্রিজ ও ১২টি কালভার্ট। প্রকল্পের ৬ কিলোমিটার ৪ লেনের রাস্তা নির্মাণে কাটা হয় ১৮টি পাহাড়। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার অনুমোদন নেওয়া হলেও ১০ লাখ ৩০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটে সিডিএ। এজন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ১০ কোটি টাকা জরিমানাও করে সিডিএ’কে। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ খাড়া পাহাড়গুলো নতুন করে কাটার জন্য গত বছরের ২৩ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরে ৩ লাখ ৩২ হাজার ঘনমিটার পাহাড় কাটার অনুমতি চেয়ে নতুন করে আবেদন করে সিডিএ। এ চিঠি পাওয়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো কাটা ও সংরক্ষণ কিভাবে করা হবে, সে বিষয়ে সিডিএর কাছে বিশেষজ্ঞ মতামতসহ প্রতিবেদন চায় পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে প্রকল্পটির পরিচালক ও চুয়েটের দুই শিক্ষকের সমন্বয়ে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তা পাহাড় ধসের ঝুঁকি এড়াতে বন্ধ করে দেওয়াকে প্রকৌশলগত ত্রুটি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, নগরে উন্নয়ন তো হবেই। কিন্তু উন্নয়ন হতে হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট। নগরবাসীর পারস্পরিক সংঘর্ষ হলে হবে না। এই সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিকল্পনার ঘাটতি চোখে পড়ার মতো। সিডিএ এই রাস্তাটি করতে বেশ কয়েকটি পাহাড় কেটেছে। পাহাড় ধসের শংকায় তা আবার বন্ধ করে দিয়েছে। প্রকল্পের শুরু থেকে যদি পরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা হতো তাহলে এখন এসে নতুন করে রাস্তায় চলাচল বন্ধ করতে হতো না। সিডিএ’র প্রকৌশলগত ত্রুটির কারণে এক কাজ দ্বিতীয়বার করতে হচ্ছে। এতে সাধারণ জনগণের অর্থের অপচয় হচ্ছে। সিডিএ’র প্রধান প্রকৗশলী হাসান বিন শামস বলেন, প্রকল্পটির কাজ এখনো চলমান। আগামি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। নগরের যানজট এড়াতে সড়কটি আনঅফিসিয়ালি খুলে দেওয়া হয়েছিল। সড়কটিতে এখনো একটি ওভারব্রিজের নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া ভারী বর্ষণের কারণে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটি এলাকার তিনটি পাহাড় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব পাহাড়ের বেশিরভাগই বালি। কিছু অংশে পাহাড়ও ধসে পড়েছে। এসব পাহাড় ধস ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসাবে পুরো বর্ষা মৌসুমে বায়েজিদ লিংক রোডে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্ষা শেষে আবার যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’ পাহাড় কাটা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে কিভাবে সড়কটি চালু করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়কটির নির্মাণকাজ এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ হয়নি। ঝুঁকিমুক্ত করতে পাহাড়ের কিছু অংশ কাটতে হবে। কী পরিমাণ পাহাড় কাটতে হবে, তা আমাদের প্রতিবেদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন সাপেক্ষে জানা যাবে। বায়েজিদ বাইপাস সড়কের প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ বলেন, বায়েজিদ বোস্তামী থেকে শুরু করে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সার্ভে শুরু করেছি। প্রকল্পটিতে ৬ কিলোমিটারের সড়কে ছোট-বড় মিলে মোট ১৮টি পাহাড় রয়েছে। এরমধ্যে ৪-৫টি পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল বন্ধ করার জন্য সিএমপি ট্রাফিক বিভাগকে আমরা চিঠি দিয়েছি। এই পাহাড়গুলোকে ঢালু করার মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত করে শীঘ্রই সড়কটি স্থায়ীভাবে চালু করা হবে।’ পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. নূরুল্লাহ নূরী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে সিডিএ যৌথ সার্ভে করেছে। এরপর সিডিএ ঝুঁকিপূর্ণ চারটি পাহাড় থেকে দুই লাখ ঘনমিটার পাহাড় (মাটি) কাটতে হবে বলে আমাদের একটি চিঠি দিয়েছে। আমাদের হিসেবে দুই লাখ ঘনমিটার মাটি কাটা মানে অনেক বেশি। এছাড়া আমাদের ডিপার্টমেন্টে কোনো ইঞ্জিনিয়ার বা বিশেষজ্ঞ নেই। তাই আমরা সিডিএকে বলেছি, চুয়েট বা বুয়েট থেকে কোনো বিশেষজ্ঞ টিম এনে তাদের মতামত নিতে। ওই টিমই সিদ্ধান্ত দেবে পরবর্তীতে সিডিএ কি পরিমাণ বা কিভাবে পাহাড় কাটবে ও সংরক্ষণ করবে। তিনি আরো বলেন, যেহেতু এটি একটি সরকারি প্রজেক্ট, তাই দীর্ঘদিন ফেলেও রাখা যাবে না। আবার বিশেষজ্ঞের মতামত ছাড়া পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কাজও করতে দেয়া যাবে না। # ০৯.০৬.২০২১ চট্টগ্রাম #