শিল্প সাহিত্য

লীলা বতী

-জীবনবোধ….চিরহরিৎ অরণ্যে

আমি ক্রমশই একটা ঘোরে ডুবে যাচ্ছি।প্রতিনিয়ত তলিয়ে যাচ্ছি অতলে।ঘর আমার সাথে কথা বলেনা,বালিশ তোষকের অভিমান।তখন ঘুম আমার থেকে ছুটি নেয়।যাওয়ার আগে কানে কানে বলে যায়। অরণ্যে যাও,এক্ষনি যাও… চিরহরিৎ অরণ্যে আমি এক ঝাঁক টিয়াদের সাথে।ওরা আমাকে নিয়ে কানাঘুসায় মেতেছে।দলপতি আমাকে বোঝাচ্ছে জীবনের মানে।একজন প্রবীণ টিয়া হেসে হেসে বলছে “মানুষ হয়ে জন্মালে কাঁদতে হয়” আমি ওতে কান দিলাম না।এই সহজ সত্য মেনে নিয়েই আমি জন্মেছি,বড় হয়েছি,বুড়ো হচ্ছি।এই নিয়ে মাতামাতির প্রয়োজনীয়তা নেই বলে আমি এগিয়ে চললাম। মেহগনির লম্বা লম্বাগাছের সারি আমাকে সঙ্গ দিচ্ছে। জানতে চাইছে আমার ব্যথা।আমি বললাম,পাখিদের ঠাই দিয়ো,ওদের পালকে পালকে মুক্তি। জোড়া ডানায় স্বাধীনতা। আমদের গল্প এগুলোনা,তবুও চুপচাপ, মুখ ভার করে হেঁটে যাচ্ছি।বালিকা কালের চাপা বিষাদ জেগে উঠেছে।আমি দেখতে পাচ্ছি বালিকা আমি কেশবিহীন মুন্ডু নিয়ে বালক বেশে পালাচ্ছি। চুলের অরণ্য হারানোর ব্যথা চিরহরিৎ অরণ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।পরীদের ডানা হারানোর ব্যথা নিশ্চয়ই এমন ই কঠিন?কেউ জানে কি?কে জানে? চলতে চলতে দেখা হলো এক মুমূর্ষু যুবকের সাথে, তিনি মারা যাচ্ছেন।আমি জানতে পারলাম তিনি প্রিয়তমার সাথে শেষ আলিঙ্গনে যেতে পারেন নি। শেষ তৃষ্ণা নিয়ে পৃথিবী ছাড়ছেন।আমি তাকে রক্ত গোলাপ দিয়ে বিদায় জানালাম।আমাদের কলুষিত পৃথিবীতে ভালোবাসা জিতে যাক।বার বার জিতে যাক। আমি এখন কোথায় আমি জানিনা।বিদ্যালয়ের কামপ্রহরী হাঁটু গেড়ে খেলতে বসেছে।বালকেরা হাসতে হাসতে তাকে দল থেকে বিতাড়িত করেছে।”মামা তুমি বড্ড লম্বা,ছোট্ট হইলে তোমারে আবার খেলায় নিমু””। ফজর আলী আমার কাছে তার শৈশব ফেরত চাইছে।সে খেলায় ফিরতে চাইছে।আমি শৈশব ফিরিয়ে দিতে পারলাম না ফজর।তুমি ঠিকঠাক ঘন্টা বাজিয়ো,বাচ্চাগুলোকে ছুটি দিয়ো।ওদের তুমি খেলতে দিয়ো। বহুদিন বাদে আজ খেলার শব্দে ঘুম ভেঙেছে। বহুকাল পর ছেলেদের হুল্লোড়ে….