মরার জাত নাই, তবে শত্রু আছে: এক নির্মম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি -ফজলুল কবির মিন্টু

“মরার কোন জাত নাই” — বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই কথাটি বলেছিলেন গভীর মানবতাবাদী বোধ থেকে। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের জীবদ্দশায় জাত-ধর্ম-বর্ণ নিয়ে যতই বিভাজন থাকুক না কেন, মৃত্যু সব বিভেদ ঘুচিয়ে দেয়। মৃত্যুর পর মানুষ শুধুই মানুষ — সেখানে তার পরিচয় শুধুই এক মানবদেহ, যাকে সম্মান দেখানো উচিত। কিন্তু আজকের সমাজে, এই উচ্চ আদর্শ বাস্তবে কতটা মানা হয়?
সম্প্রতি “নুরাল পাগলা” নামক এক ব্যক্তির কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে — এমন একটি ঘটনা আমাদের সেই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। ঘটনাটি অত্যন্ত নির্মম ও অবমাননাকর এবং এটা শরৎচন্দ্রের মানবতাবাদী দর্শনের প্রতি একটি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। প্রমাণ করে দিয়েছে, মরার জাত না থাকলেও, মরার শত্রু থাকতেই পারে।
মরার জাত নেই: আদর্শের উচ্চতা
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য মূলত এক মানবিক আকুতি। মৃত্যু সব মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয় — ধনী-গরিব, হিন্দু-মুসলিম, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ — সবাইকে। এটাই সভ্য সমাজের মৌলিক দর্শন হওয়া উচিত ছিল। মৃতদেহের প্রতি সম্মান দেখানো কেবল ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, মানবিক দিক থেকেও আবশ্যক। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন -মরারও শত্রু থাকে
শত্রুতা কতটা গভীরে?
মৃতের প্রতি অসম্মান কেবল ব্যক্তিগত শত্রুতা নয়, বরং সমাজের গভীরে গেঁথে থাকা হিংসা, অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ। যখন একটি সমাজ এতটা অমানবিক হয়ে ওঠে যে, মৃতের শান্তিও ভঙ্গ করা হয় — তখন বুঝতে হবে, সেই সমাজ তার মূল্যবোধ হারিয়েছে।
উপসংহার
শরৎচন্দ্র বলেছিলেন, “মরার জাত নাই।” কিন্তু আজকের বাস্তবতা যেন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে — মরার জাত না থাকলেও, শত্রু থাকে, বিদ্বেষ থাকে, অপমান থাকে। এই ঘটনা আমাদের কেবল এক ব্যাক্তিগত কাহিনি নয়, বরং সমগ্র সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের দর্পণ।
আমরা যদি সত্যিই মানবিক হতে চাই, তাহলে এইসব ঘটনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মৃতের প্রতি সম্মান দেখানো আমাদের সভ্যতা ও মানবতার মৌলিক পরীক্ষা — এবং সেই পরীক্ষায় যেন আমরা বারবার ব্যর্থ হচ্ছি।
(লেখকঃ সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি)
(লেখকঃ সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি)
