চলমান সংবাদ

বন্দর ভবন গেইটে সমাবেশে স্কপ নেতৃবৃন্দ

-এনসিটি ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে ১৭ জুন সংবাদ সম্মেলন করে বন্দর অচল করার মত কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো

দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র এবং জাতীয় অগ্রগতির লাইফ লাইন চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে গতকাল সকাল ১০টায় বন্দর ভবন গেইটে এক বিশাল শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন দত্ত। সঞ্চালনা করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন। এছাড়া অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এস কে খোদা তোতন, স্কপের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাহেদ উদ্দিন শাহিন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের নেতা মহিন উদ্দিন,  বিএফটিইউসির সাধারণ সম্পাদক  কে এম শহিদুল্লাহ,  বিএলএফ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ মিয়া, বন্দর শ্রমিক দলের অন্যতম সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির, ইব্রাহিম খোকন এবং ডক শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক তসলিম হোসেন সেলিম প্রমুখ।

সভাপতির ভাসনে তপন দত্ত বলেন, ‘এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে আধুনিক টার্মিনাল। এই টার্মিনাল কোন দেশী বা বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া যাবে না। সরকারকে আমরা ১৬ জুন পর্যন্ত সময় দিতে চাই। আমরা আশা করবো এই সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এনসিটি ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হবে। আর যদি প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে ১৭ জুন সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে”। তিনি আরো বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন শুরু করেছি। গত ২৭ মে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। স্মারকলিপিতে কেন আমরা এনসিটি ইজারা দেওয়ার বিপক্ষে তার ব্যখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পত্র-পত্রিকায় আমাদের বক্তব্য এসেছে। সুতরাং এরপরেও যদি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় না হয় তাহলে কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো। তিনি হুসিয়ারি উচ্চারন করে বলেন, “ বন্দর কেবল শ্রমিকদের ইস্যু নয়। এটা একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তাই এই আন্দোলনকে ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে”। তিনি উপস্থিত শ্রমিক কর্মচারীদের বন্দর ইস্যুতে আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে যুক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বাণ জানান।

শ্রমিকনেতা এ এম নাজিম উদ্দিন বলেন, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের বিদেশিদের ইজারা দেয়ার পর কোন সুফল এখনো পাওয়া যায়নি। বরং দেশীয় ব্যবস্থাপনায় এনসিটি তাদের সক্ষমতার ২৮% বেশী সফলতা দেখিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে সরকার যদি এনসিটি কোন বিদেশী মালিকানায় ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করে তা মেনে নেয়া হবে না” তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেন, সরকার যদি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে তাহলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসুচি দেয়া হলে এবং এরজন্য পরিস্থিতির অবনতি হলে তার দায় দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন: “এখনো ডিপি ওয়ার্ল্ডকে এনসিটি ইজারা দেয়া না হলেও তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বন্দরে ঘুরাফিরা করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি বন্দর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, ভবিষ্যতে ডিপি ওয়ার্ল্ড এর কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন বন্দরে  আর দেখা না যায়”। তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর নিয়ে কোন ধরণের ষড়যন্ত্র করা হলে দাঁত ভাঙা জবাব দেয়া হবে”।

সমাবেশে নিম্নোক্ত দাবি সমূহ উত্থাপন করা হয়:

১. ডিপি ওয়ার্ল্ডকে এনসিটি ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. সাইফ পাওয়ারটেকের ইজারার মেয়াদ শেষে তা নবায়ন বন্ধ করতে হবে।
৩. এনসিটিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
৪. পিসিটি পরিচালনায় ব্যর্থতার দায়ে রেড সী গেটওয়ের কার্যক্রম পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
৫. জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক ও জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, আজকের সমাবেশ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান  হয়েছে যে, চট্টগ্রামের দেশপ্রেমিক শ্রমিক সমাজ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে দেশের বন্দর, ভূখন্ড এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা কোনো আপস করবে না।