চলমান সংবাদ

জাহাজভাঙা শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার দাবিতে শ্রম উপদেষ্টা বরাবর চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি পেশ

-“জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবসের স্বতন্ত্রতা রক্ষা করা আবশ্যক”—চট্টগ্রামে জাহাজভাঙা শ্রমিকদের সমাবেশ ও মানববন্ধনে বক্তাদের অভিমত

আজ সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মার্কেট চত্বরে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে এক সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করে জাহাজভাঙা শ্রমিক সেফটি কমিটি। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০১৬ সাল থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়ে আসা এই দিবসটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং শ্রমজীবী মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রতীক। কিন্তু চলতি বছর সরকার ব্যয় সংকোচনের অজুহাতে এ দিবসটি ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সঙ্গে একত্রে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দিবসটির গুরুত্ব ও স্বাতন্ত্র্যতা ক্ষুণ্ন করেছে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সদস্য সচিব এবং বাংলাদেশ মেটাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আলী এবং সঞ্চালনা করেন বিলস-ডিটিডিএ প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক ও জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের সদস্য সচিব ফজলুল কবির মিন্টু।

এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন দত্ত এবং অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ ম জামাল উদ্দিন, সেফটি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুল আলম, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সাধারন সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী, সেফটি কমিটির সদস্য মাহাবুবুল আলম চৌধুরী, সেফটি কমিটির সদস্য মোঃ ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ইদ্রিছ, জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আহ্বায়ক মোঃ মানিক মন্ডল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ

প্রধান অ্তিথি তপন দত্ত বক্তারা বলেন, দেশের অন্যতম বিপজ্জনক শিল্প খাত—জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিকদের জীবন প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে। গত এক দশকে এ খাতে ১৩০ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ রজত শংকর রায় বিশ্বাস ২৫ জন জাহাজভাঙা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছেন,  শ্রমিকদের মধ্যে কফজনিত রোগ, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, ও অস্বাভাবিক ফোলাভাবসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর এস এন কর্পোরেশনের দুর্ঘটনায় আহত ছয় শ্রমিকের রক্তে ১৪টি ভারী ধাতু পাওয়া গেছে—যা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির ভয়াবহতা স্পষ্ট করে।

অন্যান্য বক্তারা আরও বলেন, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবসকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে পালন করা এখন সময়ের দাবি। শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, মালিকপক্ষকে সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বাধ্য করা, স্বাস্থ্যবীমা ও চিকিৎসা সুবিধা চালু করা এবং দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

তারা শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি বাস্তবায়ন, বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে তা পুনর্নির্ধারণ, রেশনিং ব্যবস্থা চালু এবং বিএসবিএ হাসপাতালকে আধুনিক করে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রূপান্তরের দাবি জানান।

সমাবেশে বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে রাতের আঁধারে জাহাজ কাটা বন্ধ করতে হবে এবং “জীবন রক্ষা করো—নিরাপত্তা নিশ্চিত করো” এই নীতিকে সামনে রেখে জাহাজভাঙা শিল্পে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

তারা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-র কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী সকল শ্রমিককে “Employment Injury Scheme”-এর আওতায় আনার দাবি জানান, যাতে কর্মস্থলের দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা রাষ্ট্রীয় সহায়তা পেতে পারেন।

বক্তারা বলেন, “উন্নয়ন মানবিক না হলে তা টেকসই হতে পারে না। শ্রমিকদের জীবন সুরক্ষা ছাড়া কোনো প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।” জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবসকে পুনরায় স্বতন্ত্রভাবে ও মর্যাদার সঙ্গে পালন করার আহ্বান জানানো হয়।

সমাবেশ ও মানববন্ধন শেষে এক বর্ণাঢ্য র‍্যালি সহকারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারক লিপি গ্রহণ করেন,এডিসি শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি জনাব মোঃ শরিফ উদ্দিন।