চলমান সংবাদ

দরিদ্র মানুষ ও দুস্থ নারীদের চাল-গমের সহায়তা কমেছে

বাজারে চাল ও গমের দাম চড়া, এবং সরকারের খাদ্য সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে দরিদ্র জনগণ, বিশেষত নারী-পুরুষ, গভীর সংকটে পড়েছে। খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির (ওএমএস) দোকানে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে, যেখানে নারী ও পুরুষেরা ভোর থেকে দাঁড়িয়ে আছেন চাল ও আটা কিনতে। তবে এই সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে অনেকেই চাল পাচ্ছেন না, যা তাদের জীবিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গত বছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি খাদ্যশস্য বিতরণে প্রায় ১৭ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন চাল ও গম সরবরাহ করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ২০ শতাংশ কম। বিশেষ করে গম ও চালের বিতরণে প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার টন কমেছে। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ে চালের বিতরণ কমেছে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টন, আর গমের বিতরণ কমেছে ৩৮ হাজার টন।

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কঠিন হওয়ায়, দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগণের জন্য সরকারি খাদ্য সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও বাড়ছে। খাদ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা খাদ্য বিতরণ কার্যক্রমে সক্রিয় নয়। তবে, তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১ লাখ ৫০ হাজার টন চাল বিতরণ শুরু হবে, যা সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি করবে।

ওএমএসের দোকানগুলোতে গম ও চাল বিতরণ কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু বাজারের পরিস্থিতি ভালো নয়। একদিকে যেখানে চালের দাম বেড়ে গিয়েছে, অন্যদিকে খাদ্য মজুত কমে যাওয়ার কারণে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা খুবই সীমিত হয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালে বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহের পরিমাণ কম হওয়ায় গুদামে চালের মজুতও গত বছরের তুলনায় প্রায় ৯৪ হাজার টন কমেছে।

এই পরিস্থিতিতে, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, দরিদ্র ও নাজুক অবস্থায় থাকা জনগণের জন্য খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান মন্তব্য করেছেন, “যত বেশি বাড়বে খাদ্য সহায়তা, ততই সাধারণ মানুষের মাঝে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং বাজারে খাদ্যসামগ্রীর দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।”

প্রতিদিনকার জীবনে খাদ্য কিনতে গিয়ে মানুষের দৈনন্দিন সংগ্রাম এখন আরও বাড়ছে। ওএমএসের দোকানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা জনগণের মধ্যে অস্থিরতা এবং হতাশা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। খাদ্যশস্যের সাশ্রয়ী দাম নিশ্চিত করা সরকারের জন্য এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

# ঢাকা, ৬ মার্চ ২০২৫