বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোজার এক সপ্তাহ আগেও গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৭০ থেকে ৮০০ টাকায়। রোজার বাজারে ক্রেতাদের স্বস্তি নেই মুরগির মাংস ও মাছের দামেও।\

এদিকে দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া থাকলেও নিরুপায় বলছেন ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে মাছ-মাংসের এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৭০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। তবে মালিবাগ, শাহজাহানপুরসহ কিছু এলাকায় গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এছাড়া সরকারিভাবে রাজধানীর ৩০টি স্থানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে।

জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে হঠাৎ করে ঢাকার বাজারে ব্যবসায়ী ও খামারিরা দামে ছাড় দিয়ে মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। তখন গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা। তবে সে দামে কিছুদিন বিক্রি হলেও এরপর বাজারে গরুর মাংসের দাম আবার বাড়তে থাকে। পবিত্র শবে বরাতের সময় গরুর মাংসের দাম উঠে প্রতি কেজি ৮০০ টাকায়।

গরিব-মধ্যবিত্তের মুরগিও এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে

গরুর মাংসের আকাশছোঁয়া দামে গরিব-মধ্যবিত্তদের একমাত্র অবলম্বন মুরগির মাংস। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। কয়েকদিন আগেও ২০০ টাকায় বিক্রি হওয়ার মুরগি খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়।

বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, সোনালী মুরগি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও দেশি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়।

২০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই

বাজারে কম দামি মাছের তালিকায় আছে পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া, যেগুলো সাধারণত ২০০ টাকার নিচেই পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমান বাজারে পাঙ্গাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা তিন দিন আগেও ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা দরে, যা দুই দিন আগে ২০০-২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।

আকারভেদে রুই, কাতল কেজিতে ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মৃগেল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, শোল ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, চাষের কই ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, শিং মাছ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে দাম বাড়ার তালিকায় আছে ইলিশও। আকারভেদে জাতীয় মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি দরে। ক্রেতারা বলছেন, দুই দিন আগেও যে মাছ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনেছেন আজ তা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই, অভিযোগ ক্রেতাদের

ক্রেতারা বলছেন, রোজা ঘিরে কয়েকদিন আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখন সেটা অসহনীয় পর্যায়ে আছে। বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। যে যার খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে যাই ধরি, সেটারই দাম বেশি। সবকিছুর দাম বেশি। চার-পাঁচদিন আগেও মুরগির মাংস ছিল ২০০ টাকা, কিন্তু রোজার কারণে দাম বেড়ে এখন ২৩০-২৪০ টাকা।

বাজার করতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দিনদিন মাছ-মাংসের দাম বেড়েই চলেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় আজকে দেখছি মাছের বাজার চড়া। যে কারণে কিনতে গেলেও বারবার হিসেব করতে হয়। এখন আর আগের মতো প্রতি সপ্তাহেই গরুর মাংস কেনা যায় না।

তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই রোজা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে বিশার মূল্য ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশই বোধহয় একমাত্র দেশ, যেখানে ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতা করে দাম বাড়ায়। এটা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্য।

মাছ কিনতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বলেন, ছোটখাটো ব্যবসা করি, বাজারে আসলে নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয়। যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কোথায় গিয়ে ঠেকে বলা মুশকিল। কিন্তু সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাদের আয়-রোজগার তো ঠিকই আগের মতোই আছে।

নিরুপায় বলছেন ব্যবসায়ীরা

ডিআইটি প্রজেক্ট বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা নাঈম হাসান জানান, তিনি গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৮০০ টাকা কেজি। নাঈমের ভাষ্যমতে, এরপরও তিনি লাভের মুখ দেখতে পারছেন না।

তিনি বলেন, আগে প্রতি সপ্তাহে দুইটা গরু জবাই করতাম, এখন একটি করছি। গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বাধ্য হয়েই মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে। বাজারে গরুর খাবারের দাম বেশি। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবহন খরচ, এটাও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি।