চলমান সংবাদ

বিশ্বে শীর্ষস্থান ধরে রাখল বাংলাদেশ

-মন্দাতেও ২০২৩ সালে দেশে জাহাজ ভাঙায় বড় প্রবৃদ্ধি

 ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকেই দেশের অর্থনীতিতে মন্দাভাব বিরাজ করছে। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কা সামলে গত বছর বিশ্ব অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। তাই দেশে মন্দা থাকলেও বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে জাহাজ ভাঙা শিল্পে। ফলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙায় বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময় বিশ্বের ৩৮ শতাংশ জাহাজই ভাঙা হয়েছে চট্টগ্রাামের শিপইয়ার্ডগুলোয়। এতে জাহাজ ভাঙায় বিশ্বের শীর্ষস্থান ধরে রাখল বাংলাদেশ।

জাহাজ ভাঙা ও এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করা বেলজিয়ামভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বিশ্বব্যাপী এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার সংখ্যা সামান্য বাড়লেও পরিমাণের দিক থেকে কমেছে। তবে বাংলাদেশে সংখ্যা ও পরিমাণ উভয় দিক থেকেই জাহাজ ভাঙা বেড়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা হয় ৪৪৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৪৪৬টি। অর্থাৎ গত বছর জাহাজ ভাঙা বেড়েছে মাত্র তিনটি। আর ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ৭৯ লাখ ৬২ হাজার ১৯২ মেট্রিক টন। গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৩২ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০২৩ সালে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ কমেছে দুই লাখ ৯১ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন বা তিন দশমিক ৬৬ শতাংশ।

যদিও বাংলাদেশ ও ভারতের ইয়ার্ডগুলোয় বিশ্বের বেশিরভাগ জাহাজ ভাঙা হয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশে ভাঙা হয়েছিল ১২২টি। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০টি। অর্থাৎ ২০২৩ সালে চট্টগ্রামের ইয়ার্ডগুলোয় জাহাজ ভাঙা বেড়েছে ৪৮টি বা ৩৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর গত বছর ভারতে ভাঙা হয়েছে ১৪০টি জাহাজ, যা ২০২২ সালে ছিল ১২৭টি। অর্থাৎ প্রতিবেশী দেশটিতে গত বছর জাহাজ ভাঙা বেড়েছে ১৩টি বা ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ।

এদিকে গত বছর পাকিস্তানে ১৫টি, তুরস্কে ৪৪টি, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ২৮টি ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ৪৯টি জাহাজ ভাঙা হয়েছে। এর আগের বছর পাকিস্তানে জাহাজ ভাঙা হয়েছিল ৪৩টি, তুরস্কে ৪৯টি, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৩৩টি ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ৬৯টি জাহাজ ভাঙা হয়েছে।

অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইয়ার্ডগুলোয় জাহাজ ভাঙা কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৬৫ শতাংশের বেশি) কমেছে পাকিস্তানে। এতে গত বছর জাহাজ ভাঙায় বিশ্বে চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে পাকিস্তান এবং তৃতীয় স্থানে উঠে আসে তুরস্ক।

এদিকে ২০২২ সালে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয় জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ২৯ লাখ ২৭ হাজার ছয় মেট্রিক টন। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৩ মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত বছর বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা পরিমাণের দিক থেকে বেড়েছে তিন লাখ পাঁচ হাজার ৫৮৭ মেট্রিক টন তথা ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে ২০২২ সালে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার ৮৪৯ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০২৩ সালে ভারতে জাহাজ ভাঙা বেড়েছে পরিমাণের দিক থেকে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে ২০২২ সালে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৯৬৫ মেট্রিক টন। গত বছর তা কমে দাঁড়ায় ছয় লাখ ৮০ হাজার ৮০২ মেট্রিক টনে। অর্থাৎ পাকিস্তানে ২০২৩ সালে দেশটিতে জাহাজ ভাঙা কমেছে ৪৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। চতুর্থ স্থানে থাকা তুরস্কে গত বছর ভাঙা হয়েছে চার লাখ ৭০ হাজার ৯৬৬ মেট্রিক টন। দেশটিতে ২০২২ সালে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল সাত লাখ ৬৭ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত বছর তুরস্কে জাহাজ ভাঙা কমেছে দুই লাখ ৯৬ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন বা ৩৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

এর বাইরে ২০২৩ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জাহাজ ভাঙা হয় এক লাখ ৬৮ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৯১৭ মেট্রিক টন। ২০২২ সালে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৭৩ হাজার ১৬৩ মেট্রিক টন ও পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জাহাজ ভাঙা বেড়েছে ৯৫ হাজার ১৪২ মেট্রিক টন বা ১৩০ শতাংশ। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে গত বছর জাহাজ ভাঙা কমেছে ৩১ হাজার ৫৫১ মেট্রিক টন বা পাঁচ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের তথ্যমতে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল এক কোটি ৬০ লাখ ১৪ হাজার ৪৬৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয় ভাঙার পরিমাণ ছিল ৮০ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন। এর আগে ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল প্রায় এক কোটি ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ৭০৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৪ মেট্রিক টন।

এদিকে ২০১৯ সালে বিশ্বে এক কোটি ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৮ মেট্রিক টন জাহাজ ভাঙা হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ৭৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ মেট্রিক টন। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ এক কোটি ৮৮ লাখ ৯১ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাংলাদেশেই ভাঙা হয় ৭৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন।

এর আগে ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ প্রায় দুই কোটি সাত লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৬৫ লাখ ৬৮ হাজার ২২৭ মেট্রিক টন। ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ দুই কোটি ৭৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৯৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ দুই কোটি চার লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৬৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০১৭ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ কমে এসেছে।