চলমান সংবাদ

প্রহসনের নির্বাচনে সিপিবি যাবে না

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গণদাবি ও জনমত উপেক্ষা করে সরকার আবারো একতরফা নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। একতরফা তকমা ঘোচাতে বিভিন্ন দল ও ব্যক্তিকে নির্বাচনে অংশ নিতে নানা অপকৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এসব কাজকর্ম যে এক কেন্দ্র থেকে পরিচালিত হচ্ছে- তা গোপন থাকছে না। এ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচন দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট দূর করবে না। বরং দেশ ও দেশের মানুষ নতুন সংকটে পড়বে। সরকারের স্বৈরাচারী, কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা বাড়বে। অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হবে। এই সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের ওপর আরো হস্তক্ষেপ বাড়াবে। অন্ধকারের অপশক্তি অগণতান্ত্রিক অবস্থা তৈরীর প্রচেষ্টা নেবে -যা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে কাম্য নয়।
আজ ২৪ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার বিকেল ৪টায় পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের সামনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। বক্তব্য রাখেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাকা উত্তরের সভাপতি ডা. সাজেদুল হক রুবেল, ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফিজুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। সমাবেশে সিপিবি প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান ও পরেশ কর সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পার্টি কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
সভাপতির বক্তব্যে শাহ আলম বলেন, রাষ্ট্র এবং সরকার একাকার হয়ে গেছে। আমাদের দেশের নব্বই ভাগ মানুষ দলীয় সরকারের অধীনে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে বলে মনে করে না। সরকার দেশকে আজ পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। ভোটে জিতবে না জেনে সরকার নানা বাহানা তৈরী করছে। মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। অবিলম্বে প্রহসনের নির্বাচনী তফসিল বাতিল করে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নতুন তফসিল ঘোষণার দাবী জানান। তিনি বলেন, লুটেরা রাজনীতিবিদ, লুটেরা আমলা, লুটেরা ব্যবসায়ী এদের স্বার্থ আর জনগণের স্বার্থ সাংঘর্ষিক। তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানান।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, টাকার খেলা-পেশী শক্তি, প্রশাসনিক কারসাজি ও সাম্প্রদায়িকতার প্রভাবমুক্ত ছাড়া নির্বাচনে সমসুযোগ থাকে না। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি, ‘না’ ভোট, প্রতিনিধি প্রত্যাহার সহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার একতরফা নির্বাচনের পথ থেকে সরে না আসলে দেশবাসীকে এই নির্বাচন বর্জন করতে হবে ও রুখে দাঁড়াতে হবে। বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের অবসানে দৃঢ়তার সাথে আন্দোলন অগ্রসর করতে হবে।
রুহিন হোসেন প্রিন্স চলমান সংঘাত-সংঘর্ষ, জ্বালাও-পোড়াও, দমন-নিপীড়ন বন্ধের দাবী জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- আন্দোলন, সভা-সমাবেশ-হরতাল-অবরোধ করা দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে, তবে জ্বালাও-পোড়াও এর অধিকার কারোর নেই। আবার আমরা সভা-সমাবেশ আন্দোলন করলে, পুলিশ দিয়ে-লাঠিয়াল বাহিনী নামিয়ে ঐ আন্দোলন দমনের অধিকারও কারোর নেই। গণতান্ত্রিক জোটের কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বামপন্থীরা নীতিনিষ্ঠ অবস্থানে থেকে সংগ্রাম করছে। এই সংগ্রামে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে শরিক হয়ে জনগণের বিশেষ করে মেহনতী মানুষের রাজনৈতিক শক্তিকে বিকল্প হিসেবে সামনে আনতে হবে। নীতিহীন গণবিরোধী রাজনীতিকে পরাজিত করতে হবে।
অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ‘এক শতাংশ ভোট পড়লে নির্বাচন বৈধ’- একথা বলে আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেওয়ার কথা আগে-ভাগে বলেছে। বিভিন্ন স্থানে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন, হামলা-মামলা, বিরোধী দলের সদস্য-কর্মীকে না পেলে পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার-হুমকির খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, অতীতে স্বৈরাচারী শাসকরা এ পথে হেটে ক্ষমতায় থাকতে পারে নি। এ সরকারও পারবে না। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণহীন, মানুষের আয় কমে গেছে। কাজ নেই, লুটপাট-দুর্নীতিও নিয়ন্ত্রণহীন। বামপন্থীরা ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সাথে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি-লুটপাটসহ প্রচলিত ব্যবস্থা পরিবর্তনের সংগ্রাম করছে। একতরফা নির্বাচনে কেনা-বেচার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর বিপরীতে সিপিবি নীতিনিষ্ঠ অবস্থান বজায় রেখে দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করবে।