চলমান সংবাদ

আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের ভাবনাঃ ধনী-গরীব সকল শিশুদের বাসযোগ্য একটি মানবিক পৃথিবী চাই

– ফজলুল কবির মিন্টু

ফজলুল কবির মিন্টু
সংগঠক, টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি

আন্তর্জাতিক শিশু দিবস বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ে একটি অনুস্বাক্ষর হিসাবে কাজ করে । বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশু শ্রম একটি অন্যতম সমস্যা হলেও এটি সমগ্র বিশ্বমানবতারই সমস্যা। ফলে শিশু শ্রম রোধে তৃতীয় বিশ্ব এবং উন্নত বিশ্বকে এক যোগেই কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক শিশু দিবস সেটি স্মরণ করে দেওয়ার একটি উপলক্ষ্য  হিসাবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।

শিশুশ্রম রোধে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে বেশ কিছু উল্লখযোগ্য উদ্যোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যৌথভাবে শিশু শ্রম নির্মূলে কাজ করছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ শিশু শ্রম বিষয়ে আইএলও কনভেনশন সমূহ অনুস্বাক্ষর করেছে এবং শিশু শ্রম রোধে  শ্রম আইন ও বিধিমালায় বেশ কিছু ধারা ও বিধি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে শিশু শ্রম রোধে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটে বলে প্রতীয়মান হয়। উপরন্তু শিশুশ্রমের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবহিত করে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার মূল ধারায় যুক্ত করার ব্যাপারেও বিভিন্ন কর্মসূচী রয়েছে। এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শিশুশ্রমে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

বাংলাদেশের ‘খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২’ এর প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের হার ৫.৬ শতাংশ। এই সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠী তীব্র অর্থনৈতিক কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করে। ফলে তারা তাদের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য একান্ত বাধ্য হয়ে পরিবারের শিশু সদস্যদেরকেও কাজে যুক্ত করে দেয়।  তাই এ কথা আজ নিশ্চিত ভাবে বলা যায় দারিদ্র্যের হার যতদিন শূন্যের কৌঠায় নামবে না ততদিন দেশে শিশুশ্রমও বন্ধ হবে না। অর্থাৎ দারিদ্রতাই দেশের শ্রম খাতে  শিশু শ্রমিক যুক্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন।

যাইহোক, বিগত কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশে শিশুশ্রমের ব্যাপারে কিছু অগ্রগতিও পরিলক্ষিত হচ্ছে।  গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের অংশ হওয়ায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারদের অব্যাহত চাপে বাংলাদেশের পোশাক খাতে শ্রম মানের কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় এদেশের পোশাক খাতে ব্যাপক হারে শিশু শ্রম হ্রাস পেয়েছে এমনকি বর্তমানে পোশাকখাতে শিশু শ্রমিক নাই বললেও চলে কিন্তু পাশাপাশি এলুমিনিয়াম সেক্টর, পরিবহণ সেক্টর তথা তিন চাক্কার টেম্পু এবং বিভিন্ন শহর এলাকার বাসগুলোতে হেল্পার হিসাবে শিশু শ্রমিকের উপস্থিতি দেখা যায়।

শিশুশ্রম হ্রাসে শিক্ষাকে অন্যতম শক্তিশালী উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনামূল্যে শিক্ষা, শিক্ষার বদলে খাদ্য ইত্যাদি নানামূখি কর্দমসূচী দরিদ্র শিশুদের শ্রমের পরিবর্তে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করতে ভূমিকা রাখতে পারে। এভাবে শিক্ষায় বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে পারে এবং শিশুশ্রমের প্রকোপ থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন এনজিও উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং রাষ্ট্রীয় নানামুখী তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও শিশুশ্রম হ্রাসের চ্যালেঞ্জসমূহ এখনও প্রবলভাবে বিদ্যমান। আজকের আন্তর্জাতিক শিশু দিবসে বাংলাদেশের মত দেশ সমূহে শিশু শ্রম হ্রাস কতটুকু হচ্ছে, আদৌ হচ্ছে কিনা কিংবা শিশুশ্রম হ্রাসের জাতীয় উদ্যোগগুলোর কার্যকরভাবে কাজ করছে কিনা তা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ খুবই জরুরী। শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আইন প্রণয়ন, অর্থনৈতিক সংস্কার, শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি নানামুখী উদ্যোগ অপরিহার্য্য। আজকের শিশু আগামী দিনের নেতা। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের বিশ্বকে পরিচালিত করবে। তাই আসুন বিশ্বকে শিশুশ্রম মুক্ত করে ধনী-গরীব সকল শিশুদের বাসযোগ্য একটি মানবিক পৃথিবী গড়ে তুলি।

লেখকঃ কো-অর্ডিনেটর, ওশ সেন্টার, বিলস-ডিটিডিএ প্রকল্প এবং সংগঠক, কেন্দ্রীয় কমিটি, টিইউসি